ধারাবাহিক উপন্যাস
প্রিয়দর্শিনী
(তৃতীয় অধ্যায়)
(৭)
ধরে নাও আন্দাজ ১০৫৩ খৃষ্টাব্দ
বা তার আশেপাশে। আমার মতে রাজা ইছাই ঘোষই ছিলেন রাঢ়বঙ্গের প্রথম বাঙালী। দেবী চন্ডীর
উপাসক ছিলেন। দশ হাজার সৈন্যসামন্ত এবং হাজারখানেক গাভীর মালিক। দুর্ভেদ্য জঙ্গলের
মধ্যেই গড়ের ভেতরে দেবী শ্যামা রূপার পূজার প্রচলন করেছিলেন। কপটতা জানতেন না।
তোমার গল্প খুবই চিত্তাকর্ষক
প্রসাদ একথা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না।
না না! গল্প হবে কেন? এসব তো
সত্যি! ইছাই ঘোষের সঙ্গে কর্ণভূমের রাজা লাউসেনের যুদ্ধ হয়েছিল। প্রথমবারে ইছাই
জয়ী হলেন। পর বৎসর কর্ণের পুত্র লাউসেন রাজা হন। তখন তিনি ইছাই-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ইছাই ছিলেন চন্ডীর উপাসক আর লাউসেন ধর্মের পূজক। এ যুদ্ধে ধর্ম উপাসকের সঙ্গে
চন্ডী উপাসকের শক্তি পরীক্ষা হল।
ঐ সময়ের লিখিত বাংলা কোনগুলো? ডোম্বীপাদ, ভুসুকুপাদ ইত্যাদি কবিরা কিছু কিছু
লিখেছেন তখন। কিন্তু সেটা তো লেখার সময় ছিল না। অনেকে হয়ত লিখতেই জানতেন না।
কিন্তু সুন্দর সুন্দর শব্দ ব্যবহার করে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারতেন। চোখ দিয়ে
দেখতে পেতেন তৎকালীন মানুষের দৈনন্দিন সুখদুঃখ। সেসব নিয়ে সুর দিয়ে গান বাঁধতে পারতেন। এবং সেই সুরের ওপারে
মানুষের মনের অন্তর্নিহিত ভাবরাজ্য। কাজেই তখনকার বাংলাভাষা মিশে গেছে আকাশে
বাতাসে। গঙ্গা যমুনার মাঝে নৌকা বয় রে - এ কথাটি যদি তখন আমাকে বলতে হত, তাহলে বলতাম - গঙ্গা জউনা মাঝেঁরে বহঈ নাঈ। আমি বলছি - সোনায় ভরা আমার করুণা
নৌকো। ঐ কবি বলছেন - সোণে ভরিলি করূণা নাবী। আমি
বলছি - অন্ধকার রাত। ইঁদুর ঘুরে
বেড়াচ্ছে। চর্যাপদের কবি বলছেন -
নিসি অন্ধারী মুসার চারা। কবি কুক্কুরী পা তো স্পষ্টই বলছেন তাঁর কথা, ‘কোড়ি
মাঝে একু হিঅহিঁ সনাইউ’ অর্থাৎ কোটিকের মাঝে গোটিকের মর্মে পশে তাঁর বক্তব্য। কবি ঢেণ্ডণ পা বলছেন তাঁর
গানও খুব কম লোকেই বোঝে – ‘ঢেণ্ঢণ
পাএর গীত বিরলে বুঝই’।
আমিও কিছু কিছু জানি হে প্রসাদ!
শুনবে?
নগর বাহিরিরে
ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ।
ছই ছই যাই সো
বাহ্ম নাড়িআ।। ধ্রু।।
আলো ডোম্বি তোএ
সম করিবে ম সাঙ্গ।
নিঘিণ
কাহ্ণকপালি জোই লাঙ্গ।।ধ্রু।।
(চতুর্থ অধ্যায়)
বালিঘড়ি
বিবাকের জীবন একটা মিথ্যে দিয়ে
শুরু হয়েছে। এ কথা বুঝতে কেটে গেছে আঠেরোটা
বছর। তার আগে ব্যাপারটাকে সে অত খেয়ালই করেনি। বুঝল দামুন্যা ছেড়ে গৌড়ে আসবার সময়।
আর জিনিষটা বোঝবার পর থেকেই মাথার মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করে চলেছে।
বিবাকের কেমন যেন ঘোরালো লাগে।
দুবার চোখ কুঁচকে দেখে বোঝার চেষ্টা করে বাইরে তখন ঝকঝকে রোদ। তার মানে সে বেঁচে
আছে। কিছুই তবে স্বপ্ন নয়। তারপর আবার চোখ খুলে দেখে রত্না নদীর ধারে সূর্যোদয়
হচ্ছে। দামুন্যা গ্রামের প্রাচীন শিবমন্দির, মন্দিরের চূড়োর ঠিক ওপরে সূর্যের
সাতটা রঙ। আটদিন বয়সী বকনা বাছুরটা তাদের বাঙ্গলা বাটির আঙ্গিনায় লাফাচ্ছে। বিবাকের বাবা বাছুরটার সাথে লাফাতে
লাফাতে খেলছে। এমন সময় বাছুরটার ধাক্কাতে পড়ে
যেতে তার নাকটা লাগে বাছুর বাঁধার খোঁটাতে। সঙ্গে সঙ্গে দু’ফোঁটা রক্ত বেরিয়ে মাটির সাথে মাখামাখি হয়ে নাকের ওপরে জমাট বেঁধে যায়। ঠাকুমা এঁটো
বাসন নিয়ে পুকুরঘাটে যাচ্ছিল। পুকুরের মধ্যে দু’হাতে কানে আঙ্গুল চেপে গুণরাজ দাদু স্নান করছেন। কোথ্থাও আর কোনও শব্দ নেই।
সব শান্ত, এমন কী পুকুর পাড়ের বাঁশ বাগানটাও।
বিবাক তোমার শরীর খারাপ? অমন
চুপ মেরে আছ কেন? - নীচ থেকে হানিফ চেঁচাল।
শুনে বিবাক বুঝল জীবন কত
অনিশ্চিত আর অসতর্ক। মুহূর্তের মধ্যে অনুভূতি তার পায়ের নীচে কিছু নেই। চবুতরার শানের মেঝের ওপর দাঁড়িয়ে সে নীচে পড়ে
যাওয়ার অপেক্ষায়। চারিদিকে ফাল্গুন মাসের ঝকঝকে রোদ। অভ্যাসবশত হাতটা কোমরে চলে
গেল। হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান
সম্পদের মত আঙ্গুলে ঠেকল কাপড়ের ভাঁজে লুকোনো খঞ্জর। নিশ্চিন্ত হল মনে মনে। হৃৎপিন্ডও শান্ত হল। তাকিয়ে দেখল বাদামী দাড়ি ও চুল সমেত হানিফ
উবু হয়ে বসে পর্ব্বত প্রমাণ পাথরের চাঁই থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট টুকরোগুলো পৃথক করছে।
জনা দশেক খাটনেবালী মজুর হানিফের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে বটে, কিন্তু বিশেষ করে কোন কোন রঙীন পাথরের টুকরোগুলি সৌধ নির্ম্মানের কাজে
লাগবে সে ব্যাপারে হানিফ কাউকেই তেমন ভরসা করে না। তাতার গুর্জর ইরানী তুর্কী
উজবেগ ইত্যাদি সব ধরনের মজুরেরা দলে রয়েছে। চারিদিকে শুকনো বাতাস। পশ্চিম দিকের
মেঘটা অবশ্য সামান্য ঘোলা মতো, তবে ঝড় বৃষ্টির কোনও পূর্ব্বাভাস বোধ হয় না।
বিবাক দেখতে পায় দূরে মাঠের
পাশেই ওদিকের বড় গাছটার মাথায় হলুদ রঙের একটা পাখি বসে। বিবাকের হাতে ঠিক এই মুহূর্তে একটা লাল রঙের জেড পাথর। অথচ নর্তকীর মুখের এই
অবয়বটুকু ফুটিয়ে তোলার জন্য হলদে পাথরই দরকার। একদম গাছের মগডালে বসা হলদে পাখিটার
মত। বিবাকের মনে হল ওটা ঠিক সেই বাবার দেখানো ছোট্ট পাখিটা। একদিন দোতলার জানালা দিয়ে বাবা বিবাককে দেখিয়ে ছিল,
বলেছিল, ঐ পাখিটার রঙ আসলে হলুদ হয় না বুঝলি বিবাক? গুণরাজ দাদার মত ছবি আঁকব বলে
ঠিক করেছিলাম। শিব মন্দিরের গায়ে চাতালে গুণদাদা
যেমন মাটির প্রলেপ দিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকে দিয়েছেন, অমনি ছবি। তা ছবি আঁকছিলাম। তবে মন্দিরে নয়।
কাপড়ের ওপর। হঠাৎ কাছে একটা পাখি এসে বসল। আর হলদে রঙটা করে যেন উলটে পড়ে গেল
ছোট্ট পাখিটার গায়ে। সেই থেকে ওটার রঙ হলুদ হয়ে গেছে।’
কথা বলার সময় বাবার নাকটা এখনও
একটু বেঁকে যায়। সেই ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে পড়ে যাবার পর থেকে।
বিবাক মগডালে বসা পাখিটাকে মন
দিয়ে লক্ষ্য করে। কী আশ্চর্য পাখিটা কতক্ষণ ঐ এক
জায়গায় চুপ করে বসে। সন্দেহ যায় না ওটা বাবার দেখানো সেই পাখিটাই। কতকাল আগের কথা
সেসব। নিবিড় গাছপালার ছায়াভরা মাঠঘাট, গুলঞ্চলতার সবুজ লতা, খেজুর ডালের ঝোপ,
অসংখ্য পাখি কিচকিচ করছে সেখানে। রত্না নদীর চকচকে সোনালি জল। তাজা মাটির গন্ধে
ছেলেমানুষ বিবাকের জগৎ আনন্দে ভরপুর। কী করে কাকে বিবাক বোঝাবে কেন এত আনন্দ? কত পদ্মফুলে ভরা বিল, কত নতুন অচেনা গাঁ পার হয়ে, কত নির্জন মাঠের পথ পার হয়ে দামুন্যা গ্রাম। তার
মা সকাল সন্ধ্যা ঐ নদী থেকে জল তুলে আনে। ঝকঝকে কাঁসার ঘড়া ভর্ত্তি সেই জল পান করে
কী অদ্ভুত
তৃপ্তি পান বাবা।
বিবাক শেখ মখদুম মোল্লার স্মৃতি
সৌধে লাল জেড পাথরের টুকরোটা বসাতে বসাতে হানিফকে চিৎকার বলল, পানি দিয়ে যা তো ওপরে!
হানিফ তুরন্ত জবাব দিল, তিন
ওয়াক্তের ওপর হয়ে গেছে ওপরে আছ। একবার নীচে নেমে এসো। পানি নাস্তা সব করে যাও।
সে পরে হবে! একবার নীচে নামলে
কে আবার এই গরমে ওপরে উঠবে? পাথরের কাজটা একেবারে খতম্ করে নীচে নাববো। তুই পানি
দিয়ে যা!
নকাব পরতে একটুও ভাল লাগে না
বিবাকের। আজ পরে এসেছে। দেখল গ্রানাইটের এই চবুতরার কাজ আজ সন্ধ্যের মধ্যে খতম
করতে পারলে মসজিদটা অপূর্ব্ব দেখাবে। বেঁচে থাকতে শেখ মখদুম মোল্লাকে চাক্ষুষ করেনি বিবাক। কুতুব মিনারের এই
তল্লাটে সে আজ প্রায় চার মাস বসবাস করছে। মোল্লা সাহেবের এন্তেকাল হয়েছে তার অনেক
আগে। লোকমুখে শুনেছে বিবাক, তিনি নাকি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। গরীব গুর্বোদের জন্য
তাঁর দয়া মায়া না কি সব সময় উথলে পড়ত।
ওস্তাদ কেমন দিলখুশ্ পানি আনলাম
খেয়ে দেখো! - হানিফ দাঁড়িয়ে সামনে।
হাঁফাচ্ছে ছেলেটা। দুই হাতেই উটের চামড়ার থলি থেকে টপ্ টপ্ করে জল জড়ে পড়ছে।
দ্বিরুক্তি না করে এক চুমুকে
একটা থলের জল এক নিমেষে শেষ করে ফেলল বিবাক। ঠান্ডা জল অতি দ্রুত মিশে যাচ্ছে তার
শরীরের কোষে কোষে। এই মুহূর্তে তার কাছে এই পানীয়টুকু ভীষণ
দামী। বাকি সব বকওয়াস! ফালতু। জল খাওয়া শেষ করে মুখ মুছতে গিয়ে খেয়াল করল তার দু’ চোখেও জল। এটা কেমন করে হল? আমি কি কাঁদছিলাম? কেন কাঁদছিলাম? পুরনো স্মৃতির মন ভার তলে তলে কখন গোপনে অশ্রু ভান্ডারকে
ঠেলে উসকে দিয়েছে। ফোঁস্ শব্দ করে বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল বিবাক। মন ভার থাকলেও আজ
সন্ধ্যের মধ্যেই গ্রানাইট বসানোর কাজটা শেষ করতে হবে।
পানি আর নেবে ওস্তাদ? নয়ত...
হুক্কা! তুমি মাইরী জান বাজী রেখে খাটতে পারো।
হানিফের কথায় একটু হাসল বিবাক।
বলল, তুইই বা কিসে কম যাস? চাদ্দিকের এই পাগলা করা রোদ্দুরে তুইও তো ঘেমে নেয়ে
একসা হয়ে গেছিস!
হিঃ হিঃ! ... রাত্রে আজ বাখরখানি রোটি আর গরমাগরম শালগম গোস্ত!... তারপর চলো না
ওস্তাদ কোনও বাঈজানের নাচ দেখে আসি! উঃ কত্তদিন শরাব ধরা হয়নি!
নাহ্! নাচ দেখতে হলে তুই একলাই
যা! আমি যাব না।
কেন? কেন যাবে না?... জান্- এ-মেহফিল!
হানিফের কথার কোনও উত্তর দিল না
বিবাক। নকাবের প্রান্ত দিয়ে ভাল করে চোখ মুখ মুছে নিল। নিয়ে ফের মগ্ন হয়ে গেল
নিজের কাজে। হুমায়ুন বাদশার আদেশে পাথরের টুকরো পরপর সাজিয়ে অতি যত্নে সে মোল্লা
মখদুমের স্মৃতি সৌধটি ধীরে ধীরে গড়ে তুলছে। ভালবেসেই করছে কাজটা। যদিও এই কাজের
জন্য পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার আশরফি ও আরও কিছু মূল্যবান উপহার
সামগ্রী। স্বয়ং বাদশাই স্বহস্তে সেগুলি দান করবেন বলেছেন। বাদশা বলে দিয়েছেন, সৌধের ‘ছাজ্জা’টি যেন অষ্টভূজাকৃতি হয় এবং বেলেপাথর ও রক্তবর্ণের গ্রানাইট দিয়ে যেন
‘মিরহাব’কে সজ্জিত করা হয়। কুতুবের একদম পাশটিতে এই সৌধ। হিন্দুস্থানের তখত্
পুনর্দখল করবার পর থেকেই পুরো দিল্লী নগরকে বাদশা ধীরে ধীরে নিজের মনের মতন করে সাজিয়ে
গুছিয়ে তুলছেন। ইতিপূর্বে কুতুব মিনারের গাত্রেও অনেকনেক
জাফরী ও প্রস্তরময় কারুকার্য নতুন করে দেওয়া হয়েছে। স্মৃতি সৌধের চার কোণে গড়ে তোলা
হয়েছে গজদন্ত নির্মিত চার চারটি মিনার। ওপর মহল থেকে যেমন যেমন ফরমায়েশ এসেছে,
সেগুলো সমস্ত কিছু বিবাকই তৈরী করেছে। তার সেই কাজে লাল গ্রানাইট হলদে বেলেপাথর
কালো সবুজ নীল জেড ইত্যাদির ফাঁক ফোকরে কেমন অদ্ভুত ভাবে মিলে মিশে যাচ্ছে বিবাকের অতীত ইতিহাস মিশ্রিত বর্ত্তমান নিঃশ্বাস
প্রশ্বাস।
মা বলেছিল, সব সময় ভগবানকে
স্মরণ করবে। কোন ভগবান তাকে কেমন দেখতে বলে
দেয়নি। ভগবান নিয়ে মাথা ঘামানোর চল ছিল না। ঈশ্বর বা খুদাহ্ এ ধরনের শব্দ কেউ তখন
সচরাচর উচ্চারণ করত বলে আজ আর ভাল মনে পড়ে না। যা মনে পড়ে তা হল বিবাক খুব হেসে খেলে আনন্দে
নিশ্চিন্তে জীবন কাটাত। দুঃখ টুঃখ কিছু কিছু ছিল। তবে তাদের বাড়িতে সেই অনুভুতিগুলো
তেমন ভাবে কাউকেই ছুঁয়ে থাকত না। জেড পাথরটা হাতে নিয়ে তার মার কথা মনে পড়ল। রান্নাশালে
ইয়া বড় বড় উনুন জ্বলত... কী
শান্ত আর সুন্দর দেখতে ছিল মা! মাথায় একঢাল কালো চুল। চিনি ক্ষীর মশলা
কর্পূর সুগন্ধী ঘি... রান্নাশালে মায়ের সংসার আর মায়ের গায়ের গন্ধ সব কেমন একাকার!
দামুন্যা গ্রাম পাড়া গাঁ ছিল বটে কিন্তু কী সেখানে ছিল না? নাটমন্দির পুজোর দালান দোলমঞ্চ রাসমঞ্চ – প্রাচীন
ধনীবংশের চূড়ান্ত মর্যদাবোধ মানসন্মান..., নদীর ধার বরাবর নারিকেল সুপারী বাঁশ বেত... কত জ্যোৎস্না রাত্রে একাকী গান গাইতে গাইতে বিবাক তাদের বাড়ির মাটির দাওয়াতেই ঘুমিয়ে পড়েছে! তাদের বাড়িটা
নদীর ঘাট থেকে অল্পই দূরে। বাংলার জল হাওয়ায় তার জন্ম বেড়ে ওঠা মায়ের আদরে
স্নেহে... তারা ক’ঘর তাঁতী। বিবাকের বাবা তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী। অমন সুন্দর সূক্ষ্ম
কাপড় তার বাবা ছাড়া আর কেউ বুনতেই পারত না। বাবা প্রায়ই তাকে নিজের ছেলেবেলার গল্প শোনাত। বহু বছর পূর্বের ঘটনা। গ্রামস্থ জনৈক
তাঁতীর ছেলে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। বাড়িতে হুলুস্থুলু, কান্নাকাটি। দিন কয়েক পর ছেলেটিকে পাওয়া গেল
গ্রাম থেকে ক্রোশ খানেক দূরে। ছেলেটি তখন প্রায় অর্ধমৃত, অনাহারে ক্লিষ্ট, উলটো পালটা
প্রলাপ বকছে। ক্রমে জানা গেল, তাকে নাকি পরীতে ভুলিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। প্রমাণস্বরূপ
সে আঁচলের খুঁট খুলে কাঁচা লবঙ্গ এলাচ ও জায়ফল বের করে দ্যাখায়। এ অঞ্চলে
ত্রিসীমানায় ও গাছ নেই, পরী নাকি কোথ্থেকে এনে উপহার দিয়েছে।
মা তাকে পরে বলেছিল, খবোদ্দার!
বাড়ির চৌহদ্দি ছেড়ে কোথ্থাও যাসনি বিবাক!
(ক্রমশ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন