সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮

স্বর্ভানু সান্যাল




মৃত্যুনদী

ছাইশরীরে মৃত্যুনদীর ছলাৎ ছলাৎ
শুনবো বলে আজকের এই পূর্ণিমারাত
জাগছি আমি
আঁকছি আমি মৃত্যু কাজলচোখের পরে
                      শৃগাল ওড়ে
আকাশ জুড়ে মেঘসমীপে শৃগাল ওড়ে
পূর্ণিমাচাঁদ একটু খাওয়া
শেয়াল কুকুর ছিঁড়বে ভেবে
                     লুকিয়ে পড়ে
চুপ-চুপে নেয় মেঘের আড়াল
শ্মশানভূমে চারটে চাঁড়াল
বাংলা খেয়ে নৃত্য করে
                   চোখ উঠেছে
চোখ উঠেছে ওদের সবার
                    চিতায় ওঠার
আগেই ওদের চোখ পুড়েছে
জয়বাংলা বাংলার জয়
কোথায়? তেমন লাগছে না ভয়
                     গোপনঅসুখ
আজকে তো কই পোড়ায় না বুক...

মৃত্যু বুঝি সুন্দরী হয়
                চক্ষে ভ্রমর
                মুঠোয় কোমর
বুকের পরে দারচিনিঘ্রাণ
                আজ অঘ্রাণ
মৃত্যু এসো আজ বিছানায়
গল্প করি এই জোছনায়
চুমু? না না চরিত্রহীন
                  বলবে লোকে
                 ছিঁড়বে লোকে
মর্গে আমার মনের শরীর
তোমার আমার প্রেমপিরিতির
খবর রাখে শ্মশানভূমি
খবর ভাসে হাওয়ায় হাওয়ায়
                         মৃত্যু তুমি
আজকে আমার চক্ষে এসো
                      বক্ষে এসো
তোমার এমন গভীর আঁখি
পরানপাখির চোখ কেড়েছে
                বিহ্বলতা বিহ্বলতা
           আজ কবিতা কল্পলতা
গল্প বলুক মৃত্যু তোমার
আজ কে না হয় হোক বিছানার
          কলঙ্কস্নান তোমার সাথে
                        কালকে প্রাতে
সূর্য যখন উঠবে পুবে
মৃত্যু তুমি কোন পাথরে মুখ লুকোবে...

রুধির বয়ে ফিরছে দেখ
                     বৈতরণী
              ওই শোনোনি?
ছলাৎ ছলাৎ যায় ভেসে যায় মৃত্যুডিঙে
                              আজ ফড়িঙেও
           রক্ত চোষে। কুম্ভীপাকে
পুড়ছে কতক মানবশরীর
         নরকনদীর জীর্ণঘাটে
জুড়োচ্ছে প্রাণ প্রেতশরীরে
                     মন মাঝিরে
বৈঠা ধরো বৈঠা ধরো। বৈঠা ধরো
মৃত্যুর ঘ্রাণ জুড়োচ্ছে নাক
                  আজ মৈনাক
পাহাড় দিয়ে হোক মন্থন
                      সমুদ্রধন
দেবতাগণ লোভীর মতন
অমৃতের ঐ ভান্ড নিয়ে
                চাখতে থাকুক
মরতে থাকুক মরণভয়ে
আমি শুধু হলাহলেই
                 লোভ করেছি
                  মরবো বলেই
বিষ নিয়েছি কণ্ঠজুড়ে
               যাক না উড়ে
                       জীবনপাখি
     আঙুল পরে আঙুল রাখি
                 হতচ্ছাড়ির
তমিস্রাময় কোমলশরীর
ছড়িয়ে পড়ুক শিরায় শিরায়
যাই না ভিড়াই নৌকো আমার
বৈতরণীর কোন্একঘাটে
               আজকে রাতে...

আজকের রাত
           বেবুশ্যেরাত
                  ঘুমশরীরে নগ্ন হবে -
বেশ্যাসমাজ মৃত্যু ছাড়া
                      কি-ই বা দেবে?
                          কি-ই বা দেবে?
চুলেতে পাক, চামড়া ঝোলা
বন্ধ কবেই হয়েছে ওর ঋতুস্রাবও
                            আজকে খাব
                       জ্যান্তচাঁদের মাংস খাব   
                            আজকে আমি নাইতে যাব
                                    মৃত্যুনদে
রক্তহ্রদে স্নান করে আজ ফিরব বাড়ি
                    আমার বয়ে গেছেই ভারী
                           তোমার সাথে দোস্তি করার
                                          জীবন তোমার
নেই প্রয়োজন। স্বর্গে তোমার জায়গা থাকুক
                      আমার প্রাণে ডমরু বাজুক
                                            মহেশ্বরের
অন্ধঘরের দরজা তোমার বন্ধ থাকুক 
আমার তো আজ মৃত্যুডানা গজিয়ে গেছে
আমার তো এই প্রত্নশরীর
                      গভীর খাদে ঝাঁপ দিয়েছে...

                  তোমায় থোড়ি কেয়ার করি
জীবন আমি তোমায় থোড়ি কেয়ার করি!  
সমাজ আমি তোমায় থোড়ি কেয়ার করি!



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন