ভবিষ্যৎ
টুটুল স্কুল থেকে বাড়ি ফেরা মাত্র কমলিকা ছেলেকে দেখে আঁতকে উঠলেন - “টুটুল! তুমি হাঁপাচ্ছ কেন?
একি… পিঠে ওই ভারী ব্যাগ!
বাবা, আপনি ব্যাগটা একটু নিয়ে নিতে পারেন নি! আপনাকে তো বলে দিয়েছি কতবার… স্কুল বাস থেকে নামিয়ে এইটুকু তো রাস্তা! ব্রতীন,
প্লিজ, এদিকে একটু আসবে?”
কমলিকার বিপত্নীক শ্বশুরমশাই এবং টুটুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ষাটোর্ধ রথীনবাবু কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললেন,
“না, মানে বৌমা, আমি তো নিতেই চাই, কিন্তু…!” “আহ,
মামমাম, তুমি দাদুকে বলছ কেন? আমিই তো ব্যাগটা ধরতে দিই নি, দাদু কি করবে?” ছেলে ব্রতীন ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছে, “ওহ মাই গুডনেস, এই ভারী ব্যাগ তুমি নিজে
ক্যারি করছ, এবার তো তোমার লাম্বার স্পন্ডালাইটিস হয়ে যাবে!” “না না বাপি, আই
অ্যাম অলরাইট। আমি এখন নিজের ব্যাগ নিজে নি, স্কুলে
আমাদের আন্টি বলেছেন নিজেদের কাজ নিজেরা করবে, তাই আমি লাস্ট ট্যু উইকস আমার সব
কাজ নিজে নিজে করছি। গুড না?” “টুটুল,
যাস্ট শাট ইওর মাউথ! ওফফ... আমরা কেউ বাড়ি থাকি না, আর এদিকে কিনা এইসব চলছে!
ভাগ্যিস আজ ছুটি নিয়েছিলাম!” কমলিকা ঝাঁজিয়ে উঠলেন। এরপরের ক’দিন রথীনবাবুর সাথে ছেলে, বউ,
কেউই ভালো করে কথা বলল না...
রথীনবাবুর ভাবনা হচ্ছিল। সত্যিই তো, ছেলে তো তাকে যথেষ্ট আরামে রেখেছে। শুধু এই নাতিটিকে দেখে শুনে রাখা,
ওর জিনিসপত্রগুলো একটু এগিয়ে গুছিয়ে দেওয়া ছাড়া সংসারে আর কোন কাজ নেই ওনার। এখন সেটুকু উপকারে যদি তিনি না লাগেন,
নাতিটি নিজেই যদি নিজের সব কাজ করতে শিখে যায়! নিজের ছেলে ছেলের বউটিকে তো বিলক্ষণ চেনেন, দরকারে না লাগলে এরা শখ করে কাউকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে না! রথীনবাবু নিজেকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়লেন...
এর দিন চারেক পর টুটুল বাস থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আটেন্ডেন্টের হাত ধরে নামল। “এ কী... কী হয়েছে?” “চিন্তা করবেন না, স্কুলে পড়ে
গিয়েছিল, আমরা ফার্স্ট-এইড দিয়ে দিয়েছি, আপনারা একটু ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন।” “কী সর্বনাশ... আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে... এস দাদুভাই, আমার হাতটা ধর... দাও, তোমার ব্যাগটা আগে আমাকে দাও... সাবধানে, উফফফ...
দেখি তোমার বাবাকে ফোন করি... কী ঝামেলা...”
বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলে
এসে নাতিকে নিয়ে এক্স-রে করিয়ে আনল। হেয়ার লাইন
ফ্র্যাকচার। পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে বেডরেস্ট...
স্কুল-টুল আপাতত বন্ধ। “যাক বাবা, এক দিক দিয়ে ভালো হয়েছে! নাতিবাবুটির নিজের
কাজ নিজে করার বাতিকটা এ’কদিনে খানিক অন্তত ঘুচবে!” মনে মনে অনেকখানি স্বস্তি
নিয়ে রথীনবাবু ওইদিন সন্ধ্যেবেলায় খাওয়া দাওয়াটা একটু তাড়াতাড়ি সারলেন। আর
বলতে নেই, অন্যান্য দিনের তুলনায় রত্তিরের ঘুমটাও সেদিন ওনার বেশ ভালোই হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন