মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দেবলীনা চক্রবর্তী




দৃশ্যকল্প 

এমনই এক ধাতব সন্ধ্যায় ভিজে বালিতে পায়ের ছাপ রেখে এগিয়েছিলাম অনেকদূর । 
 তখনও পিতল রঙারোদ গড়িয়ে পড়ছে নীল উচ্ছ্বল জলের গা বেয়ে, 
 সাগরের এত কাছে এসে ওর বিরাট সৌন্দর্য দেখে আমি কিছুটা দিশাহারা, কিছুটা আত্মমগ্ন। 

যদিও এভাবে দেখা তো প্রথম নয়!
তবুও বড় চেনা লেগেছিল এ অস্থিরতা - 
সম্যক সাদৃশ্য দুচোখের ওর সু-নীল রঙ!

কিছু এলোমেলো ঢেউ ঠিক তোমার দুর্বোধ্য স্বভাবের মতো, ঠাওর করার আগেই ভেঙে খানখান মাঝ সমুদ্রে! 
প্রায়ই চঞ্চলমতি কিছু ঢেউ ঝাপটা দিয়ে যায় কিনার ঘেঁষে, 
আবার কিছু উদার জলচ্ছ্বাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায় পায়ের পাতা - সে যেন তোমারই মতো সবিনয়ে আত্মনিবেদন নাকি উন্মুখ লালসা। 

 আর কিছু চোরা স্রোত - যা গভীর কিন্তু আপাততঃ শান্ত 

 এভাবেই চলছিল সেদিনের নির্জন সন্ধ্যা যাপন;
 ঘোর কাটায় লাইটহাউসের ইঙ্গিতবাহী আলো।

তারপর একে অপরকে বিদায়ী অভিবাদন জানিয়ে ফিরলাম তথাকথিত চেনা পরিসরে 
এক অলিখিত গল্পের উপসংহারে!


একরকম প্রলাপ 
 
স্বপ্নে দেখা গল্পগুলো যখন তোমার কোলের কাছে এসে হামাগুড়ি দেবে, অনেক কষ্টে দেওয়াল ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, নিষ্পাপ স্বচ্ছ চোখগুলো তোমার সক্রিয় আস্কারা খুঁজবে, ঠিক সেই সময়ই টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবেতুমি ওমনি ছুটে গিয়ে দুহাতের আদরে জড়িয়ে তাকে কোলে তুলে নেবে আর সে তোমার দিকে তাকিয়ে ফোকলা মুখে বিশ্বজয়ের খিলখিল হাসি হাসবে 
এমন সব ঘটনাগুলোকে তুমি কী বলবে? 
তোমার মনের বিকার না কি জ্বর বিভ্রম!

আবার তুমি যদি নিঃসঙ্গতার সাথে একটা গোপন আঁতাত গড়তে পারো তাহলে দেখবে সে ধীরে ধীরে তোমার আপন হয়ে উঠছে 
তাকে নিজের কাছে এনে বসাবে, মনের প্রাণের গল্প করবে, গান শোনাবে, নিজের সাথে একই থালায় ভাত মেখে দলা পাকিয়ে মুখে তুলে দেবে, সেই ছোটবেলায় বড়মা যেভাবে আমাদের খাওয়াতো ঠিক সেইভাবে
আবার তাকে অপরিষ্কার দেখালে স্কচ বাইটে একটু ঘষে ভালো করে জলে ধুয়ে  নেবে - দেখবে কেমন নতুনের মত ঝকঝক করছে 
ঠিক এইভাবে তাকে যত্ন করলে দেখবে  মাসের শেষে সেও তোমায় ভরিয়ে দেবে সুখ দিয়ে, ভালোবেসে, লং ড্রাইভে নিয়ে যাবে
একটা গমরঙা সূর্যোদয় দেখাবে বলে!

কি পারবে তো এমন সব গল্পের মত স্বপ্নে বিভোর হতে --


মন ও মতি 

ইদানিং বেশ বুঝতে পারি যে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি!
আমার ভিতরে জন্মেছে একটা বিষাদ-বৈরাগ্য 
ছিঁটেফোঁটা বাদামী আলো নিঙড়ে নিয়ে জমিয়েছিলাম সবার অলক্ষ্যে,
হয়ত বা তার জন্য!

চারিদিকে কত কথা ছড়িয়ে
বড়রা শিখিয়েছে - সব কথা ধরো না, 
গায়ে মেখো না 
তাই সব ধূলো ঝেড়ে ফেলি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দৌলতে 
তবু সপ্তাহান্তে দেখি -
কাবার্ডের পিছনে, ফল্স সিলিঙের আনাচে কানাচে কিছু না কিছু জমেই থাকে
দামি এই কার্পেটের সংসারে!
  
আসলে ভুলে যাই,
ডিজিটাল হয়েছি তো শুধু যুগে 
মনে মনে আজও সেই পুরনো সাবেক


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন