আঠারোয় আছি
জানুয়ারি শেষ হতে চলল তবু শীত এখনো
যায়নি। শতরঞ্চিটা তাই মহুলের ছায়াটা ছেড়ে হালকা রোদ্দুরে বেছানো – চার খেলোয়াড় বসে
গিয়েছে। রোজ দুপুরবেলার মত পটাপট তাস পড়ছে, টোয়েণ্টিনাইন। আট
তাসের খেলা, প্রথম চারটে তাস দেখে বলতে হয়, সে কত পয়েণ্ট করতে পারবে। পরের চারটে
তাস কেমন আসবে, তা জানা থাকে না।
পশ্চিম-মুখো লোকটির নাম ব্রিজকিশোর,
যদিও তার বয়স একাত্তর। বাকিরাও আগুপিছু একই বয়সী। তাস চারটে দেখে ব্রিজকিশোরের
হাসি পেয়ে গেল। চার রঙের সাতি আর আটি। সব থেকে
কমদামী তাস, পরের চারটেও যদি এরকম যাচ্ছেতাই হয়!
আর কতই বা খারাপ হবে? গিন্নির
শরীরটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আজকাল রান্নাঘরে
ছেলে-বৌএর সঙ্গে ঝগড়াটাও শোনা যাচ্ছে না। একগাদা টেস্ট দিয়েছে ডাক্তার। অনেক টাকার ব্যাপার – সে না হয় দেখা যাবে, কিন্তু
সেরে উঠবে তো! সামনের মাসে বড়ছেলের
কারখানায় অনেক ছাঁটাই হবে, সরু সূতোয় ঝুলছে চাকরিটা। বড়-নাতনি দিনরাত মোবাইল কানে ঘুরে বেড়ায়, পরীক্ষায়
ফেল করেছে। বছরটা ভাল শুরু হয়নি, পরে কী
লেখা আছে কে জানে!
ব্রিজকিশোরের মনটা খেলা থেকে একটু
সরে গিয়েছে, পাশের লোকটা এই নিয়ে দু’বার ডাকল – আঠারো...
কী বলবে ব্রিজকিশোর? হাতে যা তাস
তাতে তো কিছুই হবে না। পার্কের চারিদিকটা
কিন্তু বেশ লাগছে আজ। শীত রয়ে যাওয়াতে পিকনিক থামেনি – ওদিকটায় কিছু ছেলে-ছোকরা
‘ওয়েলকাম ২০১৮’ লেখা শালু টাঙ্গিয়ে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া করছে। হোস্-পাইপ থেকে
চোঁয়ানো জল চাটছে কুকুর একটা। ঘাসের ওপর ক’টা শালিক খুনসুটি করছে। দুজন কামিন
নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে ঝুরোপাতা ঝাড়ু দিচ্ছিল, হাওয়া দিতে কিছু উড়ে গেল।
২০১৮ লেখাটাও দুলে উঠল। মানে দিন যেমন চলে তেমনি চলছে। কী হবে কী হবে না তা কে আর
কবে জানতে পেরেছে!
ব্রিজকিশোরের মত আরো তিন জনও তো বাকি চারটে তাসের অপেক্ষায়।
রোজকারের
এই দৃশ্যটুকুর মধ্যে এত যে ভিটামিন মেশানো ছিল, কে জানত? শ্বাসের সঙ্গে ব্রিজকিশোরের শরীরে-মনে তা যেন
ঢুকে গেল। দমদার ভিটামিন। হাজার চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলে ব্রিজকিশোরকে বলতে শোনা গেল
– আছি, আছি, আঠারোয় আছি। খেলা ছাড়ব না...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন