ঢোঁড়া সাপ
(ক)
ঢোলের শব্দ হচ্ছে দ্রিমিকি দ্রিমিকি। লোকটা রেডি হচ্ছে। তার কাজই হচ্ছে বিরতিতে মঞ্চে নাচন কুদন।
কত রকম ক্যারিকেচার সে জানে! সঙ সেজে মানুষকে হাসানোই তার
কাজ। অধিকারী জানিয়ে দিয়েছে আজই তার শেষ
রজনী। যাত্রা দলে নতুন ভাঁড় নেয়া হয়েছে। সে বয়সের ঈগলে নত। হাঁপানিটাও যখন তখন
ছোবল মারছে।
গ্রিনরুমে সে বিচিত্র রকম সাজে মেকআপ নিতে থাকে। মেয়েরা এই
সঙের সামনেই পোশাক পাল্টায়। তাকে কেউ
গুরুত্ব দেয় না।
দলে নতুন আসা এক নর্তকী কাপড় পাল্টাতে গিয়ে থমকে যায়
লোকটাকে দেখে। লজ্জায়
পাশের নর্তকীকে বলে -
:
এই মরদ মেয়েদের এখানে কেন?
অন্য নর্তকী হেসে কুটি কুটি।
:
মরদ কই লো? উনি তো ঢোঁড়া।
(খ)
দুই বিয়ে করবার পরেও অধিকারীর সন্তানাদি হচ্ছে না। লকলকে
দৃষ্টি ছোবল হানে লতিয়ে ওঠে বাড়ির কাজের মেয়ের অষ্টাদশী গতরে। গরীব ঘরে মেয়েটার
জন্ম। তাই এই বাড়িতে বান্দিগিরি করে। আকারে ইংগিতে ভাবে আভাসে বোঝায় যে অধিকারীর
তাকে দরকার। দিনরাত ফাঁক ফোঁকরে সুযোগে বলে, দুই বিঘা জমি আর গয়নাগাটি দেবে। মেয়েটা দেবে সন্তান
বিনিময়ে।
খিলখিল হাসে মেয়ে। হাসির দমকে বিষম খায়। খাপ খোলা তলোয়ার
যেন এক! কিছুতেই বাগে আনা যায় না ফোঁস করে ওঠে লুঙ্গির ভেতর। যত হাসে তত কাম
বাড়ে।
খপ করে হাতটা ধরে ফেলে বুকে পিষে ফেলতে চায়। জবরদস্তি করে
মেয়ে। এতে পারদ আরো ওপরে। ঠোঁট নামিয়ে আনলে ব্লাউজে সাঁটা দুটো কইতর লাফ দিয়ে
ওঠে।
ঠাস করে গালে চড়। আর লুঙ্গি খুলে গড়াগড়ি মাটিতে।
আগুনে পানি ঢালবার মতো মিইয়ে যায়।
: মুরোদ নাই বিয়ে করবার শখ! দুই বউয়ের সাধ মিটাইতে পারোস
না আবার ফাল? সন্তান আইবো আসমানেত্তে? তুই তো একটা ঢোঁড়া।
খিলখিল হাসির মেয়েটি আলুথালু। এক দলা থুথু ছিটিয়ে যখন চলে
যাচ্ছে, পেছন থেকে ঠিক
ফণা তোলা নাগিনী যেন!
(গ)
একই যাত্রা মঞ্চে যেন দুটি সাপ। ঢোঁড়া সাপ। রাতের বৈভবে
শরীর বেঁকে।
এঁকেবেঁকে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন