ফুটপাতের দেয়াল
মেকআপ করে বসে আছে ন্যাড়া। কিছুতেই ড্রেস পরানো যাচ্ছে না।
আদর,
ধমক একরত্তি ছেলের কাছে ফেল।
‘লিটিল এঞ্জেল’ বস্তির বাচ্চাদের জন্য কাজ করে। আর ‘কাছের মানুষ’ ফুটপাতের
বাচ্চাদের সঙ্গে। দুটো এনজিও এবছরই প্রথম একসঙ্গে বাৎসরিক অনুষ্ঠান করছে উত্তম
মঞ্চে।
উদ্ভোধনী সঙ্গীতের সময় হয়েছে। মেয়েদের ড্রেসিংরুমে রূপা
রেডি হয়েছে কিন্তু কী এক অজ্ঞাত কারনণ টিফিন খাচ্ছে না। দুজন ছুটল লীনাম্যামকে
খুঁজতে। তিনি না এলে এ সমস্যা মিটবে না।
লীনা দুটো এনজিওতেই কালচারাল দিকটা দেখে। ওর সঙ্গে বাচ্চাদের খুব ভালো র্যাপো।
কাজটা হৃদয় দিয়ে করে।
সব ফেলে ছুটে এলো সে। ন্যাড়াকে জড়িয়ে ধরে বলল
- আরে! তুই এখনো
জামা পড়িস নি! সবাই স্টেজে চলে যাবে তুই যেতে পারবি না তো!
- ও জামা আমি
মোটে পরব না।
- কেন রে?
- গাদুকে কত
সুন্নর জামা দেছে, আমাট্টা দেখ।
এরম জামা তো সবসময় পরি। নাটকেও পড়ব?
- ও! তাই বল!
জামা পছন্দ হয় নি! কিন্তু ন্যাড়া! নাটকে তুই দুয়োরানির ছেলে। ঠিকমতো খেতে পড়তে পাস
না। তাই অমন জামা পড়তে হবে।
- সে তো এমন্নিও
পাই না। আমায় অমন পাট দিলে কেন গো? গাদু আমি দুজনাই ফুটপাতে থাকি, একাট্টা খেলি। ও অত সুন্দর জামা পড়েছে আর আমার জন্ন এই পচা জামা! আমায় দুয়ো
দেবে যে!
- তাই নাকি? নাটকের শেষে তো গাদুকে সবাই মিলে তাড়িয়ে দেবে! আর তুই
রাজকুমার হয়ে যাবি, তার বেলা?
- ও! তখন বুঝি
আমায় ভালো জামা পড়তে দেবে?
- না রে বাবু!
শোন! একটা বুদ্ধি এসেছে। তোকে গাদু কিছু বললে
তুইও বলবি, তুই বাজে রাজকুমার, সবাই তোকে তাড়িয়ে দিয়েছে, আমি তো ভালো, তাহলেই দেখবি ও চুপ করে যাবে।
- হি হি! ভুলেই
মেরে দিইছি গো। আমি তো ওকে তাইড়ে দেব!
- তবে! এখন চটপট
জামাটা পড়ে নে তো বাবু! বাবা মা তোকে দেখবে বলে বসে আছে যে!
- একুনি পড়ছি।
ন্যাড়ার মুখজোড়া হাসি। লীনা ছুটল মেয়েদের কাছে।
রূপা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। তার পাশে গিয়ে বসল।
- খাচ্ছিস না
কেন রে?
স্টেজে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে সবাই হাসবে। ভালো লাগবে?
অভিমানে মুখ ঘোড়ালো
সে।
- আমাকেও বলবি
না কী হয়েছে?
- দেক দিদি! ওই
তোমাদের পুঁটি ফুটপাতে থাকে। সারাদিন ছেঁড়া জামা পরে শিকনি মাখা মুখে খেলে বেড়ায়।
আধপচা মাছ খায়। ময়লার গাড়ি ঘাঁটে। ম্যাগগো! ঘেন্নাপিত্তি নেই! বস্তির কারো সঙ্গে
ওদের ওঠবস নেই। দেকোনি কেউ আসতে চাচ্ছিল না। তুমি অত করে বল্লে তাই। একন সেই পুঁটি
চকচকে শাড়ি পরে, মাথায় মুকুট চইড়ে হার
দুলিয়ে দুলিয়ে আমার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি এই ছেঁড়া শাড়ি পরে আছি। আমার কি কোনো
মানইজ্জত নেই গো!
কেঁদে ফেলল রূপা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন