নীল ফড়িং
(১)
সাগরনীল
এক ফড়িং, ডানায় বসন্তের বিশ্বাসী আগুন ঝরে পড়ে, আমি দেখেছি ওকে। ওই উঁচু যে
জলপর্বত তার থেকেও দূরে কোনো ময়ূরী মেঘ থেকে উড়ে উড়ে শিশু বনের মধুকূপি ঘাসে এসে
বসে। যখন থেকে দেখেছি ধরার চেষ্টায় ছুটে চলছি আজও। প্রথমবার ধরতে গিয়ে বুঝেছিলাম,
ওড়ার ইচ্ছে মানুষের মধ্যেও বিদ্যমান।
কিন্তু উড়তে পারে এমন প্রাণীর ভেসে থাকাটা জীবন ধারণের বাধ্যতা, আর মানুষের কাছে
তা শৌখিনতা কিংবা শক্তির বহিঃপ্রকাশ...
(২)
শহুরে
রাস্তা এখনো চিনে উঠতে না পারা আমার ব্যর্থতা, গোলকধাঁধার মতো গিলে নেওয়া অজগর যেন।
তবুও পথ থেমে থাকে না, চলতে চলতে মনে পড়ে ভাগ্যের পরিহাস। বৈধ আকাশে সেইদিন চাঁদটাও ফাঁকি দিয়েছে রাতকে। যে সকল
যাত্রী ধ্রুবকে চিহ্নিত করে ফিরতে চেয়েছিল গন্তব্যে, তারা সকলেই যে যার ফিরে
পেয়েছে তরী। আমিও চলেছিলাম আত্মবিশ্বাসে, ওদের অনুসরণ করে, কিন্তু কিছুটা চলার পর
ধ্রুব বলেছিল, 'আমি এখন
শুকতারা, পথ ভুল করেছ পথিক!' সেই থেকে এক ধোঁয়াটে
কাচের বাইরে দেখি উজ্জ্বল পৃথিবী, ভিতরে আমি এঁকে চলছি গৃহকোণের মানচিত্র! আর দূরে আরো দূরে চলে যাচ্ছে
নীল ফড়িং...
(৩)
এখন
ওকে বার বার দেখি রাত জাগা স্বপ্নে, বেলার হলুদ আলোয় নীল পালকের মতো ফুরফুরে চলা ফেরা।
ঝুল পড়া রং ছবিতেও ওর অগাধ আসা
যাওয়া। কিন্তু উৎসাহ এখন বাধ্যতার কাছে বশ মেনেছে। মাথার কাছে এসে ভন ভন করলে
বিরক্তিকর মাছির মতো মনে হয়। মনকে মুখবন্ধ বয়মে রেখে দিয়ে, আর্তনাদকে শ্রুতির থেকে
দূরে রাখি। কিন্তু স্মৃতিতে জমাট বরফের ছুরি হয়ে থেকে যায়; যে আঘাতের চিহ্ন রাখে
না, খুঁড়িয়ে রক্তাক্ত করে মাত্র!
নীল
ফড়িং আজও উড়ে চলছে সমস্ত আলোর পশরা নিয়ে, আর আমরা সামান্যরা অসাধারণ কিছুর আশায়
নীল ফড়িং বুনছি ভাবনার আকাশে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন