কালিমাটি অনলাইন / ৫৬
সম্প্রতি পুনের এক পারিবারিক আদালতের রায় প্রকাশিত হয়েছে,
কর্মরত মা-বাবার নিজেদের সন্তানের যাবতীয় দায় এবং দায়িত্ব তাদের দাদু-দিদা বা
দাদু-ঠাম্মার হাতে তুলে দেওয়া কখনই কাম্য নয়। এবং সেজন্য তাঁদের দোষারোপ করাও
একান্ত অনুচিত। আদালতের এই রায় প্রকাশিত হয়েছে, ২০১২ সালে চল্লিশ বছরের এক
বিবাহিতা মহিলার এই সংক্রান্ত আবেদনের দরুন। বিশদ ভাবে জানা না গেলেও এটুকু জানা গেল যে, কুড়ি
বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের দুই সন্তান, দশ বছরের ছেলে এবং সাত বছরের মেয়ে। মহিলা
এ দেশেই কর্মরতা হলেও, তাঁর স্বামী বিদেশে কর্মরত। মহিলা সারাদিন কর্মসূত্রে ঘরের
বাইরে থাকেন। আর তাই তাঁদের দুই সন্তান থাকে দাদু-ঠাম্মার কাছে। কিন্তু মহিলার
আদালতে অভিযোগ, তাঁরা নাকি নাতি-নাতনিকে ঠিকমতো দেখাশোনা করছেন না। তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব
নাকি পালন করছেন না। একথা ঠিক যে, স্বদেশ হোক বা বিদেশ, কাজের জন্য সবাইকেই সাধারণত সকাল থেকে সন্ধ্যে, কোনো কোনো
ক্ষেত্রে কিছুটা রাত পর্যন্ত ঘরের বাইরেই থাকতে হয়। নিতান্ত ছুটির দিন ছাড়া
সপ্তাহের বাকি দিনগুলো ঘরে থেকে সন্তানের কোনো দায়িত্বই পালন করা যায় না। আর
সেক্ষেত্রে, যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা সন্তানের দাদু-দিদা বা দাদু-ঠাম্মাকে নিজেদের
কাছে নিয়ে এসে সন্তানের সারা দিনের দায়িত্ব তাঁদের হাতেই তুলে দেয়। না, এতে কারো কোনো আপত্তি থাকার প্রশ্নই নেই, বরং তাঁরা
অতি আগ্রহে যত্নে স্নেহে ভালোবাসায় সেই দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু বিপত্তিটা
হচ্ছে অন্যত্র, যখন সেই দম্পতি কোনো কারণবশত, সন্তানের দায়িত্ব ও যত্ন যথাযথ পালন
করা হচ্ছে না বলে তাদেরই মা-বাবা বা শ্বশুর-শাশুড়িকে দোষারোপ করে, এমন কি
ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তখন সত্যি সত্যিই ভাবনা হয়, নিজেদের পারিবারিক
বন্ধন সম্পর্কে। আশ্চর্য লাগে, আমরা কীভাবে নিজেদের দায় এড়িয়ে অন্যের ঘাড়ে সেই
দায়ভার চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকি এবং তাতে কোনো ত্রুটি নজরে পড়লে আত্মসমালোচনা না করে
অন্যের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠি! আদালত এই সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে, তা সবারই
অনুধাবনযোগ্য। বস্তুত পক্ষে, যে কোনো সন্তানের দাদু-দিদা বা দাদু-ঠাম্মা সাধারণত প্রবীণ
এবং বৃদ্ধই হয়ে থাকেন। বয়সের ভারে প্রাকৃতিক নিয়মেই হ্রাস পায় কর্মক্ষমতা, শিথিল
হয় দ্রুততা ও তৎপরতা। আর তাই কোনো দায় পালনের ক্ষেত্রে ঘটতেই পারে সামান্য কিছু
ভুলত্রুটি বা অক্ষমতা। কিন্তু এজন্য তাঁদের কখনই কোনো দোষারোপ করা যায় না। তাঁদের
তিরস্কার করা যায় না। আর আদালতে নালিশ দায়ের করা তো অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে।
দাদু-দিদা এবং দাদু-ঠাম্মা তাঁদের একান্ত আদরের নাতি-নাতনিকে নিঃস্বার্থভাবে স্নেহ
করেন, ভালোবাসেন, মঙ্গল কামনা করেন, আশীর্বাদ করেন। এবং সেইসঙ্গে সাধ্যমতো কিছু
দায় দায়িত্বও বহন করেন। কিন্ত কোনো অক্ষমতার দরুন যদি কিছু ত্রুটি ঘটেও থাকে,
সেজন্য তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ী করা নিতান্ত অন্যায়। বিশেষত এর ফলে বর্তমান ও ভবিষ্যত
প্রজন্মের ওপর যে জটিলতার বীজ অঙ্কুরিত হয়, তাতে আমাদের সমাজব্যবস্থা ও সমাজবন্ধন
ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারে। আর তাই আমাদের এই ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী।
সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
08789040217 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati
Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002,
Jharkhand, India
সম্পূর্ণ একমত।
উত্তরমুছুন