সেঁজুতি
সমুদ্রে
কেন ঘাস হয় না? কেন মানুষের রঙ সবুজ না? এত
বড় বড় মাছ পানিতে কী করে? দল বেঁধে পাখিরা উড়ে যায় কোথায়?
মানুষ ঘুমিয়ে কোথায় চলে যায়? সেঁজুতির প্রশ্নগুলোতে বিব্রত হয়ে
যায় সন্ধ্যা। ও
আঙুলে জড়িয়ে নেয় প্রশ্নগুলো, তারপর দ্বিধান্বিত চোখ সরিয়ে নেয় জানালা থেকে।
রাহাত
দেড় ঘন্টা ধরে বসে আছে মতিঝিল জ্যামে, বাসায় ফেরা দরকার
দ্রুত। সেঁজুতির প্রেগনেন্সি সাত মাস চলছে। নড়বড়ে একটা চাকরি নিয়ে বেগুনবাড়ির
ভাড়া বাসায় ছোট্ট সংসার ওদের।
আজ দুপুর থেকেই সেঁজুতি ফোন করে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার জন্য।
চারতলায়
দেড় রুমের বাসা। বাড়ির
মালিক একটা ফ্ল্যাটকে ভেঙে তিনটে করছে বেশি ভাড়া পাওয়ার আশায়। কোনো বারান্দা নেই। সেঁজুতি ধীর পায়ে রান্নাঘরের জানালায় এসে দাঁড়ায়। এদিক থেকে নীচটা ভালোমতো দেখা যায়। রাহাত আজ এত দেরি করছে কেন! পেটের
নীচের অংশে দুপুর থেকেই ব্যথা। রাহাতকে
বলেনি। প্রাইভেট কোম্পানীর নতুন
চাকরি,
রাহাত হুট করে চলে এলে চাকরিটা যদি চলে যায়! ওদের কোনো ডিপোজিট
কিংবা অবস্থাসম্পন্ন আত্মীয়স্বজনও নেই যে কোনো একটা ব্যবস্থা কিংবা লোন করবে। ঘনায়মান অন্ধকারে সেঁজুতির বড় একা লাগছে। সেঁজুতি রাহাতকে ফোন করল। ইউ হ্যাভ নট সাফিশিয়েন্ট ব্যালান্স, উত্তর এলো হাওয়ায়। প্রচন্ড
ব্যথায় সেঁজুতি জ্ঞান হারালো।
রাত
সাড়ে নটায় রাহাত বাসায় ফিরলো। ডোরবেল
বেজেই চলছে, কেউ দরজা খোলে না।
পরদিন
ভোরে ঢাকা মেডিকেল গেটে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করলো রাহাত। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায় নিয়ে যাবে
সেঁজুতিকে। শুভ্র
সেঁজুতি সাদা কাপড় জড়িয়ে এমনভাবে
ট্রলিতে করে এ্যাম্বুল্যান্সে উঠলো যেন এসব ব্যাপার তার জীবনে বহুবার ঘটেছে, বহুবার সে সমুদ্রে গেছে, গাঢ় ঘুমে বহুবার সে পৃথিবী
ছেড়ে চলে গেছে! শুধু আঙুলে জড়ানো প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে
যেতে পারেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন