ভালোবাসার
অচিন পাখি
সময়ের
অভাব অনুভব করছি। আজকাল সকাল থেকে রাত ব্যস্ততার জালে আবদ্ধ ছটফট পাখি। মোবাইলে
পুরো চার্জ হয়ে গেছে, বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করছি এখন। হৃদয় ভালোবাসা ইমোশন ঘুরে ফিরে
আসে মনে। মনের বিশ্বভ্রমণে দিনের বেশির ভাগ সময়ই, বর্তমান সময়ে অ্যাবসেন্ট হয়ে
যাচ্ছি আমি। ঘন্টা বেজে যাচ্ছে ঢং-ঢং-ঢং ... আমি তো ক্রমাগত কন্ট্রোল হারিয়ে
ফেলছি। গুমোট বাতাস অশ্রুসজল দু’চোখ। ফেসবুকে অবগাহন করে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি সেই
কালো হরিণ চোখ। মায়াবী হরিণী, সে তো
অনন্যা। সেদিন অমল বলল যে আমি যেন শুধু অনন্যার প্রতি লক্ষ্য রাখি এবং ওর সঙ্গে
কারণে-অকারণে চ্যাট করি, আর কিছু নয়।
সেই
যোগাযোগের জন্য ধীরে ধীরে আমি দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে উঠছি। প্রতিদিন জন্ম
নিচ্ছি আবার মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছি। মাঝেমাঝেই অমল আমাকে শাসাচ্ছে, ‘শোন্ জিৎ,
বেইমানি করবি না। তোকে শুধু অনন্যার প্রতি ফ্রেন্ডলি নজর রাখতে বলেছি। অনন্যা শুধু
আমার।’ আমার কৌতূহল উৎকণ্ঠায় দিনরাত এক হয়ে যাচ্ছে। আর সেই মেয়ে অনন্যা বলে যে
ফেসবুক তো ফেকবুক। সকলেই তার বন্ধু। দ্যাটস অল্।
ডক্টর
দাশ পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘আপনার লিভার ক্যানসার ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে, মিস্টার জিৎ।
মদ আর খাচ্ছেন না, তো? ডাক্তার হিসেবে আমার কাজ হলো আপনাকে সাহস জোগানো। তবুও পেশেন্টের কাছে সত্যটা
লুকোনোর কোনো মানে হয় না, বলে আমি মনে করি।’
‘থ্যাংকস
ডক্টর। আমি সসম্মানে মরতে চাই।’
‘মৃত্যুর
কথা এখনই ভাবছেন কেন বলুন তো! এখন তো আপনার ট্রিটমেন্ট চলছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা
করছি। পজিটিভ চিন্তা করুন, মিস্টার জিৎ। সব সময় খুশি-খুশি থাকার চেষ্টা করুন।’
খুশি
থাকার হাজারো সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। জীবনে একজনকে পছন্দ হলো, তাকে সে কথা
সোজাসুজি বলার সাহসটুকু এখনও অর্জন করতে পারলাম না। এখন জীর্ণ শরীরে প্রতিটা মুহূর্ত যে
যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, কার সঙ্গেই বা শেয়ার করি! এদিকে অমলের ধমকি
দিনদিন আরও বিষময় হয়ে উঠছে আমার জীবন।
‘অনন্যা,
কেমন আছো?’
‘ভালো,
জিৎদা’
‘আজ
আর দাদা নয়, শুধু জিৎ বলো ডিয়ার’
‘আপনি
সুস্থ আছেন তো, আই মিন মেন্টালি হেলদি?’
‘একদম।
কেন বলো তো?’
‘হঠাৎ
আপনার আচরণে কিছু অসঙ্গতি নজরে আসছে, তাই’
‘আই
লাভ ইউ, অনন্যা’
‘ওহ!
এই রোগে ভুগছেন!’
জিৎ অনন্যাকে আরও কিছু মেসেজ লিখল, কিন্তু মেসেজটা
যাচ্ছে না। তার মানে অনন্যা জিৎকে ফেসবুকে কেটে ব্লক করে দিয়েছে।
মৃত্যু, মুক্তি, লড়াই, পালিয়ে যাওয়া, আশ্রয় খুঁজে
নেওয়া, ভালোবাসা –– এই শব্দগুলোর প্রকৃতি চিনতে চিনতে হয়তো একদিন সত্যিই সে হাত
রাখবে তার ভালোবাসার নারীর হাতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন