থাবা
একটা বেড়াল তার থাবার মধ্যে ঘুরিয়ে
ফিরিয়ে দেখছে - সূর্য সাদা থেকে হলুদ
হয়েছে, হলুদ থেকে লাল। বেড়ালটার থাবার মধ্যে সূর্যের অর্ধেক দেখা যায়। বাকি অর্ধেক ঢাকা পড়ে। সেই অদেখা সূর্যের গায়ে
বেড়ালটা থাবা বুলিয়ে চলে। তারপর অপেক্ষা
করে শান্ত হয়ে।
লালকালো ছায়া নামে আকাশে। একদল আবছা মেঘ থমকে
দাঁড়িয়ে থাকল অচেনা আকাশের গভীর নীচের দিকে চোখ রেখে। অন্ধকার এগিয়ে আসে, যেন অসংখ্য মৃতদেহ কাফনের কাপড় পরে মিছিল করছে।
তখন অন্য এক শহরে তুই ছুটছিলি। চুলগুলো উড়ে এসে পড়ছে
তোর মুখের ওপর। লম্বা চুল তোর নাপসন্দ। তবুও কখনো সেই চুল তুই
কাটিস নি। কাটলে তোকে গোমড়া লাগত। চুলগুলো আমার মুখের
ওপর পড়লে ভালো লাগে, একথা তোকে বলেছিলাম
একদিন। সেই আধাঅন্ধকারে তোর
ঘর্মাক্ত ভুরুর নীচে উজ্জ্বল দুটো চোখ। শরীরে আঠালো
ঘামের স্পর্শ। বাকি পৃথিবীতে কোথাও
কেউ নেই।
অনেকদিন অপেক্ষা করলাম। তোর উড়ন্ত চুল আমার
মুখকে আদর করেনি। তুই ভুলে গেছিস ভেবে
আমার অভিমান হয়। একা থাকলে এমনই হরেক
ভাবনা। সূর্যটাকে পেছনে রেখে
তুই সেই উড়ন্ত চুলের ছবি তুলে ছড়িয়ে দিলি সবাইকে। হাজার হাজার ‘লাইক’ পেলি। আমি তোর চুল দেখিনি। সূর্যটাকে
ঝাপসা হয়ে আসতে দেখলাম বেড়ালের থাবার মধ্যে। আর শান্ত শুয়ে
থাকলাম যেমন ছিলাম মাটির গভীরে। বুঝলাম আকাশের হায়েজ-নেফাজ চলছে।
তুই বলিস অপবিত্র বলে কিছু হয় না।
যা ভালোবেসে চাইছি তা কখনো অপবিত্র হতে পারে না। আকাশের এই দশা আমাদের ভালোবাসা
দেবে বলেই সৃষ্টি। সৃষ্টির জন্য এতো রঙ।
এখন কি সব রঙ হারিয়ে যাচ্ছে? একটা কালো ছড়িয়ে পড়ছে বেড়ালের মতো। আমি টের পাচ্ছি দুটো
থাবা আমার বুকের ওপর চিরে দিচ্ছে। বুকের নরম
দূর্বা এলোমেলো ধ্বংস হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। একটা অন্ধকার বেড়াল বেরিয়ে আসছে বুকের ভেতর থেকে। ছায়া গ্রাস করছে আমাকে। আচমকা এত ক্ষত, যেন বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি নামলে স্যাঁতস্যাঁতে
মনে হয়। মনে হয় সব ইচ্ছের ওপরে
উঠে যাই। তোকে আর কখনো আদর করার
কথা ভাববো না। ইচ্ছেগুলো না থাকলে
মৃত্যু। তোর চুল উড়েলেও কিছু
মনে হবে না। ছোট করে কেটে ফেললে
খবর নেবার কথা মনে হবে না। তবুও…
দূর থেকে কারা যেন চেঁচিয়ে বলল – বেড়াল বলে কিছু হয় না। মানুষ অমর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন