এই সময় অন্য সময়
এই লোকটার যাবতীয় কর্মকাণ্ড আলাদা। এই যেমন সে পার্কে চিত হয়ে শুয়ে আকাশ দেখছে। দুই হাত দিয়ে কপালের দুই পাশ ঢেকে রেখেছে। আমি একদিন কৌতূহলী হয়ে জানতে
চেয়েছিলাম, দুই হাত দিয়ে ওরকম করে ঢাকার মানে কি?
স্বাভাবিক ছন্দ পতনের কারণেই তিনি আমার উপর বিরক্ত
হয়েছিলেন। তবুও জবাবে যা জানিয়েছেন তার অর্থ হলো, দুই হাত দিয়ে ওরকম করে রাখার
কারণে তিনি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে আকাশ
দেখতে পারেন। অন্য কোনো চলমান দৃশ্য যাতে
তার চোখে এসে না পড়ে। আকাশ দেখার এই অখণ্ড মনোযোগ তিনি নষ্ট করতে চান না অন্য
কিছুর উৎপাতে।
বিরক্তি গায়ে না মেখে আমি বললাম: তোমার পাশে বসি?
লোকটা হো হো করে হেসে দিল। হাসি মানেই সম্মতি। এই লোকটাকে চেহারায় চুলে দাড়িতে ভ্যান গগের মতো লাগছে।
লোকটা হো হো করে হেসে দিল। হাসি মানেই সম্মতি। এই লোকটাকে চেহারায় চুলে দাড়িতে ভ্যান গগের মতো লাগছে।
: আবার বলবে না তো এবার পাশে একটু শুই?
আমিও শব্দ করে হাসলাম। দুজন মানুষ পরষ্পর হেসে ফেললে বন্ধুতার ট্রেন যাত্রা শুরু হয়। পরষ্পর নিরাপদ ভাবে। কথা বলছে লোকটা; দুটি চোখের পাতায় থমকে থাকা এক চিলতে আলো হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যা নামায়। রোদ মেখলায় মাখামাখি কাচ বাসন মন। ডাকাত বাতাস দোল দোল চিরুনী। টুকরো করে দেয় সময় ক্ষণ।
আমিও শব্দ করে হাসলাম। দুজন মানুষ পরষ্পর হেসে ফেললে বন্ধুতার ট্রেন যাত্রা শুরু হয়। পরষ্পর নিরাপদ ভাবে। কথা বলছে লোকটা; দুটি চোখের পাতায় থমকে থাকা এক চিলতে আলো হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যা নামায়। রোদ মেখলায় মাখামাখি কাচ বাসন মন। ডাকাত বাতাস দোল দোল চিরুনী। টুকরো করে দেয় সময় ক্ষণ।
একটা জটিল প্রশ্নপত্র, ক্রমাগত সাদা কাগজের নৌকায় কলম ঠুকে...
উত্তর মগজে টালমাটাল... কোনো কোনো তারাই যেমন ধ্রুব, বন্ধ চোখের তারায় সেই একটা মুখ, আকাশ। একটা কণ্ঠ পোড়াতে পোড়াতে জাগিয়ে তুলতে তুলতে ভাসিয়ে নিয়ে গেল পাল তুলে তার ময়ূরকণ্ঠী
নায়ে।
বহুদূর বিস্তৃত সেই কণ্ঠধ্বনি গভীরতম তোরঙ্গে আছড়ে পড়ে... প্রতিধ্বনিত হয় গহীনে, লবণ
জল মুছে দিয়ে এই একটি কণ্ঠেই নীল কণ্ঠ ঢোক
করে গিলে টালমাটাল মগজের উত্তর বের করে আনে। বলে;
এই যে দেখো, ধরো। এই তো সেই আকাশ। আমাদের মাথার উপর ছাতা
আকাশ...
কিছুতেই মনে করতে পারছে না কবিতাটি। একদিন অনিচ্ছাতে যেটা
মনে রাখতে চায়নি, আজ মগজ হাতড়ে বেড়াচ্ছে, হু হু করে উঠছে বুকের ভেতর।
সেখানে চিরকুটটি রাখা সেই চিরকুট সারাদিন মান সন্ধ্যা রাত
উন্মাদের মতো চষে বেড়ায় সারা শহর। সেই গাছের ছায়া। মঞ্চ, বিশ্ববিদ্যালয়ের
করিডোর... নাহ কোথাও নেই!
হাওয়া যেতে যেতেও পরশ বুলিয়ে যায় কিন্তু মানুষ হাওয়া হয়ে
যায় কী নিষ্ঠুরভাবে, একটু নিশানা পর্যন্ত রাখে না। অন্তর্হিত হতে হতে ধোঁয়া ওঠা
গরম ভাতের মতো রেখে যায় স্মৃতি। এত টাটকা! লেগে থাকা একত্র আত্মা বিচ্ছেদ নিতে আর
কত পারে? গা ঝাঁকিয়ে জ্বর আসে। তন্দ্রালু বিবশ। নাকে আসে মোগলাই পরোটার ঘ্রাণ, আহা সেই সেই একদিন। শেষ রাতের দিকে স্বপ্নে আসে
এক অবয়ব। পত্রিকা বিছিয়ে রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে শুয়ে আছে।
ঘেমে নেয়ে ঘুম। ভেঙ্গে যায়। ভিজে যায় বুকে থাকা চিরকুট... আলুথালু
পা দুটোকে টেনে হিঁচড়ে ঝড়ের গতিতে উদভ্রান্তের মতো কখন যেন দাঁড়ায় প্লাটফর্মে। হু্ইসেল
বাজিয়ে একটা ট্রেন ছেড়ে যায় স্টেশন। ঐ তো ঐ যে কিছু খবরের কাগজ। তবে কি সত্যি সে
ছিল?
উন্মাদ আতিপাতি করে খোঁজে। ঘ্রাণ পায়। আহা সেই কমলালেবু
ঘ্রাণ। সেই অতি পরিচিত অবিচ্ছেদ্য লেপ্টে থাকা ঘ্রাণ। হঠাৎ কাগজের ভিড়ে বিস্ফোরিত
চোখে দেখে রিলকের সেই কবিতাটি।
শূন্য প্লাটফর্ম। হাঁটু গেড়ে বসে কবিতাটি বুকে ধরে চিৎকার
করে ওঠে সেই সময় অন্য সময়।
চোখে ওর অনুক্ষী বৃষ্টি।
আকাশ দেখা ক্ষ্যাপা লোকটার ভেতরে
হুট করে ঢুকে পড়ি আমি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন