জার্মান রিডের হারমোনিয়াম
উজ্জয়িনী ছুটে এলেন বাইরের ঘরে। সেই পরিচিত ছাত্রছাত্রী দুটি এসেছে। টেবিলের উপর রাখা বিয়ের কার্ডটা থেকে প্রজাপতির ডানা হাজার হাজার তার শরীরে ডাউনলোড করে যাচ্ছে কেউ। দু’ হাত প্রসারিত করে নাড়তে লাগলেন তিনি। তাঁর স্বামী তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। ভিতরের ঘরে বাক ও অঙ্গ সংবাহনকারী বসে আছেন। ছাত্র ও ছাত্রীটির মায়াচোখ উজ্জয়িনীকে মহাজাগতিক তরঙ্গাভিঘাত দিয়ে যাচ্ছে। অঙ্কের পূর্ণ সংখ্যাগুলো তানপুরার শুদ্ধ ধা-য়ের সাথে মিলে মিশে একাকার। ছাত্রীটির হাতটা যেন তানপুরা। এতক্ষণ খেয়াল করেন নি কেন! এই মেয়েটার নাম তিনি জানতেন। একটা বেশ ধ্রুপদী নাম শকুন্তলা, মহাশ্বেতা বা দেবযানী কিছু একটা হবে। সেই মুহূর্তে তাঁর অধ্যাপক স্বামী বলে উঠলেন, ঝংকার আর অরুণিমা এসেছে। সামনেই ওদের বিয়ে। বন্ধুরা মিলে ওদের বিয়ে দিচ্ছে। ভাবতে ভাবতে মিসেস চৌধুরীর চোখ তেরছা আর সরু হচ্ছে। তিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে অরুণিমার হাত চেপে ধরলেন।
একটা পৈশাচিক আর্তনাদ সারা ঘরে। ব্রেন স্ট্রোকে বাঁকা আঙুলগুলো আরও বেঁকে যাচ্ছে। যেন সঙ্গীতশিল্পী দাদার জার্মান বন্ধুর সামনে চোখ তুলে তাকাতে পারছেন না! লজ্জায় তিনি গান রেকর্ড করার অনুরোধ ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তবু উপহার রয়ে গেছে। কিন্তু কোথায় ... কোথায়! নিজেকে বৌগেনভিলিয়ার ঝাড় মনে হলো। আরো কত আকর্ষ বার করলে সবাইকে জড়িয়ে ধরতে
পারবেন তিনি! এই যে ছাত্রটি সংস্কৃত সাহিত্যের নাটকের নায়কের মতো। হয়তো ওর কাছে পুতুলখেলা হারানোর বয়স আর জার্মান রিডের হারমোনিয়ামটি আছে। চেয়ে নিতে হবে।
এরা দুজনেই তাকে নাম জিজ্ঞাসা করছে। তিনিও হাত মাথা নেড়ে বোঝাবার চেষ্টা করছেন আসলে কোনও নাম তাঁর কোনো কালে ছিল না।
কী দিয়ে ভাত খেয়েছেন উজ্জয়িনীদি? এরা যতবারই কিছু জানতে চাইছে ততবার হরিদ্বার-এর গঙ্গা উথলে উঠেছে। তিনি বিছানার চাদর চাপা দিতে চাইলেন তরঙ্গের উপর। প্রকৃতপক্ষে তিনি নিজের ঢলঢলে ম্যাকসি জাতীয় পোশাকটি ধরে দোলাতে লাগলেন।
শ্রী চক্রবর্তী সারাক্ষণ চিকিৎসার ইতিহাস বলে যাচ্ছেন। উজ্জয়িনী নিজেকে ভাবলেন চিরছাত্রী। অধ্যাপক স্বামীর বক্তৃতার নোটস নিতে হবে। দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়লেন নিমন্ত্রণ পত্রটির উপর। কলম... কলম... তর্জনী তো আছে!
দরজায় বাকসংবাহক এসে হাজির। অতিথিরা এবার উঠবে বলে তোড়জোড় করতে লাগলো।
উজ্জয়িনীর কোলে কাদের শিশু ধপ করে পড়ল। মিমির পুরনো তুলো পুতুলগুলোকে আচ্ছা কষে তেল মাখিয়েছেন দিনের পর দিন। খাটের নিচে থেকে তা আবিষ্কৃত হয়েছিল।
আচ্ছা তাহলে আমরা আসছি!
না। থাকুন। গোটা পৃথিবীটা একটা অসমাপ্ত ভ্রূণ। জানেন মিমি অন্য গ্যালাক্সিতে চলে গেছে। সব বলব সব। এই মেয়েভ্রূণটা খাটের নিচে জন্মেছে।
উজ্জয়িনী ফুলে ফেঁপে উঠছেন। চোখ ঠিকরে আসছে। বর্ণভ্রূণেরা খিলখিল করে হাসছে।
ঠিকঠাক ফাটতে না পারা তুবড়ি বাজির শব্দ তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে
আসে ঠোঁট মুখ বিকৃত হয়ে যায় সে প্রচেষ্টায়। উজ্জয়িনী প্রস্থানরত অতিথিদের হাত ধরে টানাটানি করতে লাগলেন। অন্যদিকে বিপরীত বল প্রয়োগ করতে লাগলেন শ্রী চক্রবর্তী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন