নীল তিমি
বাড়ির গেট খুলে দরজায় একটা লাথি মেরেই বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে
চিৎকার শুরু করল, “কেন তুমি
সবার সামনে আমাকে এইরকম বললে? এভাবে
অপমানিত আমি জীবনেও কোনোদিন হইনি... ধুর সবাই কি ভাবলো, বলতো বাবা!” বলেই মিমি মায়ের কাছে চলে গেল পাশের ঘরে।
--রানা! তুমি মেয়েকে কী বলেছো? এভাবে কাঁদছে! কয়েক দিনের জন্যই তো বাড়িতে
এসেছে। কী যে করো! কী বলেছে বাবা, মিমি আমায় বল
তো?
--তুমি বুঝবে না।
--বলেই দ্যাখ।
--আরে বলেছে… সিনেমায়
সুযোগ করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শহরে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির রমরমা। আরও বলেছে, অনলাইন গেমের খপ্পরে না পড়তে, সবার সামনে।
--তুই তো সারাদিন গেম খেলিস। স্নান, পটি সব সময় ফোন হাতে। মাত্র ইলেভেনে পড়িস। বাইরে থাকিস, আমার খুব ভয় হয়।
কয়েকদিন পর মিমি হস্টেলে চলে গেল।
রানা বারবার ডাকছে, “রিনা, আমার আজকে খুব তাড়াতাড়ি যেতে হবে কলেজে, সেমিনার আছে”।
--আচ্ছা রানা, গেমটা কী গো? আমায় খেতে খেতে একটু বলবে?
--তবে শোনো... একটা অনলাইন গেম যার নাম ‘ব্লু হোয়েল’। কেউ খেলায়
ইচ্ছুক হলে তার কাছে পৌছে যায় নির্দেশাবলি। সেইমতো নির্দেশ বা চ্যালেঞ্জগুলি পূরণ
করে ছবি পাঠাতে হয় গেম হ্যান্ডলারকে। হোয়েল বলা হয় এই খেলায় অংশগ্রহণকারীকে।
স্বেচ্ছায় তারা এই মরণ খেলায় যোগ দেয়। এই খেলায় ৫০টি ধাপ, প্রথমদিকের টাস্কগুলি মজার হওয়ায় সহজেই আকৃষ্ট হয় ছেলেমেয়েরা।
-- মরণখেলা জেনেও খেলছে ওরা?
--হ্যাঁ গো! গেম
যত এগোবে, টাস্ক তত ভয়ঙ্কর হতে থাকবে। গেমের শেষে নিজের হাতে পিন বা
ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় তিমি, তারপর ছবি তুলে পাঠাতে হয়। শেষে এদেরই আত্মহত্যা করতে বলা হয়।
--কী বলছো! ভয়ঙ্কর ব্যাপার!
--আরো শোন, মাঝপথে কেউ খেলা ছাড়তে চাইলে, তাকে ব্ল্যাকমেল করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। প্রিয়জনদের ক্ষতি
করার হুমকি দেয় তারা। রিনা, তুমি শুনলে আরো
অবাক হবে, এই খেলার জন্মদাতা মাত্র ২২ বছরের এক তরুণ ফিলিপ বুদেকিন।
এই খেলার জন্ম রাশিয়ায় ২০১৩ সালে। দেশ বিদেশ জুড়ে এখন আতঙ্কের নতুন নাম ‘ব্লু হোয়েল’!
--রানা, প্রশাসন কিছু করছে না গো!
-- হে হে করছে, সতর্কতা জারি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার প্রবণতা ছড়াচ্ছে। জেলায় জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবকদের সচেতন
করতে প্রচার চালানো হচ্ছে। কথায় কথায় অনেক দেরি হলো গো! তুমি আজকে হসপিটাল যাবে না, রিনা?
--হ্যাঁ, বেরবো, কিন্তু খুব চিন্তা হচ্ছে।
--রিনা, আমি ওকে
সন্দেহ করছি। তবে সেটা কি এই গেম, নাকি সিনেমার
ভূত চেপেছে ওর মাথায়! তুমি ভেবো না, কয়েকদিন পর তো পুজোয় বাড়ি আসছে। এবার যাচ্ছি গো...
--রানা, পুজোয় মেয়ে এসেছে বাড়িতে। অথচ মনেই হয়
না। সারাদিন মোবাইলেই বুঁদ হয়ে থাকে। দ্যাখো না গো কী করে?
--আমি সব ভেবে রেখেছি রিনা, তুমি চাপ নিও না প্লীজ!
পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই মেয়ের চিৎকার। আমার ফোন হারিয়েছে মা, খুঁজে দাও প্লীজ!
-- মিমি মা, আমারা এবার
তোমায় দামি ফোন কিনে দেব। কয়েকদিন অপেক্ষা করো।
-- না মা, আমার আজকেই
চাই। আমি ফোনেই পড়ি, নেট থেকে নোট নিই।
--দাঁড়া, বাবাকে ডাকছি
।
--আমি তোমার বাবা। আমি কলেজে পড়াই, মিমি। আমায় তুমি বোকা পেয়েছ?
মেয়ে সব ভেঙে ফেলছে, ঘরে যা কিছু ছিল। কিছুতেই কেউ আটকাতেই পারছে না। রিনা ঘুমের ইজেক্সন দিয়ে দিল জোর করে। তারপর
ডাক্তার ডাকলো। প্রেসার মাপতে গিয়ে দেখে হাতে অনেক কাটা দাগ। ডাক্তারবাবু বললেন,
ঘুমের ওষুধ ছাড়া উপায় নেই সিস্টার। ঘুম
ভাঙলেই চিৎকার করছে ফোনটা দাও প্লীজ। আমার খুব দরকারি গেম আছে।
পরের দিন মিমি ঘুম ভেঙেই মা’কে জড়িয়ে বলল, মাগো, তোমাদের মেরে ফেলবে ওরা। গেমটা খেলতেই হবে।
--তুই ভয় করছিস কেন মিমি...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন