৪১ লক্ষ
খবরের কাগজের একটা টুকরো বাতাসে উড়ে উড়ে ঢাকা উত্তর মেয়র অফিসের
সামনে এসে পড়ল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন একদা, এখন বিসিএস করে কাস্টমস ক্যাডার, ঐ পথ দিয়ে
যাচ্ছিলেন ৪১ লক্ষ টাকা দামের জিপ গাড়িতে চড়ে।
এই কর্মকর্তা গাড়িতে বসে আরাম পান না, এক ধরনের মেরুদন্ডে ব্যথা টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স, তার পাশে বসেছিলেন
বাতাসে উড়ু উড়ু চুল নিয়ে আরেক জন, তাঁর প্রাক্তন ছাত্রী। এখন তিনি মন্ট্রিয়লে থাকেন স্বামী সহ। গাইবান্ধা সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
গরমের ছুটিতে ঢাকা এসেছেন উড়ু উড়ু চুল।
পাশে ড্রাইভার গম্ভীর হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। ড্রাইভারের এসব বেলেল্লাপনা একদম অপছন্দ। দাঁত কিড়মিড় করছে আর মনে মনে বলছে : আল্লাহর গজব পড়ুক…
সামনের স্পিড ব্রেকারে এসে গাড়ি স্লো হলো। কাস্টমস কর্মকর্তাও স্লো মোশনে উড়ু উড়ু চুলের ঊরুতে হাত রাখলেন আলতো করে... যেন
তিনি উদাসীন। যেন নিজের অজান্তে এই হাত। মেয়েটা খানিক চমকে উঠলেও মেনে নিলো। মেয়েটি জানে যে এই কবি ও
কাস্টমস হাত রাখবেই। এই হাত সুদূরপ্রসারী।
কর্মকর্তা গাড়ির জানালার ফাঁক
গলে বাইরে তাকাতে চোখে পড়ল উড়ে আসা খবরের কাগজের টুকরোটিকে। গাড়ি স্লো
হবার কারণে তিনি হেডলাইন পড়তে পারছেন। হেডলাইন পড়ে তিনি চমকে উঠলেন, তলপেট কেমন
যেন করলো।
চশমার কাচ ঠেলে তিনি পড়লেন খবরের কাগজের শিরোনাম:
দুররানী বেগমকে রইসুদ্দিন ফাকরীর ১৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি
উপহার।
তেলতেলে মুখ নিয়ে তিনি এবার উড়ু উড়ু চুলের দিকে একবার, একবার
ড্রাইভারের দিকে তাকালেন। ড্রাইভারকে মৃদু ধমক দিলেন-
: জোরে চালাইতে পারো না?
ড্রাইভার স্পিড বাড়াতে মেয়েটা চোখ থেকে সানগ্লাস নামিয়ে কবি
ও কাস্টমসের কানে কানে ফিসফিসিয়ে উঠল-
: আমার গাড়িটা যেন ৪১ লক্ষের
হয়।
বাতাস খবরের কাগজের টুকরোটাকে কোথায় যেন আবার উড়িয়ে নিল।
কর্মকর্তার ভুঁড়ির আধিক্যের কারণে আজকাল
ঠিকমতো প্যান্ট ফিট হয় না। কারণে অকারণে জিপারটা নেমে যায়। সুড়ুত করে জিপারটা
লাগাতে লাগাতে ভুস করে দম ছাড়লেন।
গাড়ির ভিতর নীরবতা গুমোট কাটাতে ড্রাইভার স্যারের অনুমতি
নিয়ে সিডি প্লেয়ার ছেড়ে দিলেন-
: তোমার দিল কি দয়া হয় না...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন