ধর্ষিত পান্ডুলিপির গল্প
(১)
রোজের স্নেহের আঁচলে জড়িয়ে রাখা
একটু একটু প্রোটিন আর অপার ভালোবাসায়
মস্তিষ্ক গর্ভজাত আমার পান্ডুলিপি সন্তান
চাইনিস মোবাইলের অভূতপূর্ব ডাইলগে
ডি. জে মিউজিকের কোরাসের অ্যাটমসফেয়ার...
টোপের তত্ত্ব সাজিয়ে ছিল দু'ফর্মার কবিতার সারিতে-চিকন শরীরে।
ইনভেলপ দেখে ভেতরের খবর আন্দাজ শক্ত না হলেও
বিশ্বাস শব্দের প্রকৃত মমার্থ অনুভূত ছিল সংস্কারে।
(২)
উৎসবের মেলার আনন্দে দোলনায় দোল খাচ্ছে কত পান্ডুলিপি
সুশোভিত জামা বৈচিত্রময় প্রচ্ছদে-
পান্ডুলিপি শিশুরা এখন সবাই নিজ নামে পরিচিত
আত্মহারা উৎসবমুখর কোলাহল-বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের প্রাণ।
কেউ কোলে তুলে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়
কেউ নবজাতকের মুখে হাত বুলিয়ে ঝরিয়ে দিচ্ছে ভালোবাসা
কেউ শারীরিক গঠনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ
প্রশংসায় জন্মদাতা-জন্মদাত্রীর নাম মুখে মুখে ঘুরে বেড়াই যখন
আমার জমজ সন্তানেরা তখনও অবহেলায়
মাটিতে পড়ে ধুঁকে ধুঁকে শুষে নিচ্ছে ধূলো
অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে...
(৩)
যন্ত্রণা পাড় ভাঙলে প্রশ্নের স্রোতে
উত্তরে উঠে আসে হাঙর আর কীর্তনের মহিমা।
পান্ডুলিপি বিবর্ণ ফ্যাকাসে, শেষ নিঃশ্বাস বেরিয়ে যাওয়ার আগেই
লবণাশ্রু কাতর অনুরোধে মিউট হয়ে যায় ব্যস্ততম পৃথিবী
নেটওয়ার্ক জেগে ওঠলে বাহানার বিশাল বটের ঝুরির সঙ্গে
আলোকিত শাখা-প্রশাখার সুপরামর্শ-প্রতীক্ষা, নির্বিবাদী সরীসৃপ জীবন।
(৪)
দুই কুড়ি আর জমজ সন্তানের ভবিষ্যতে আত্মহারা
জননীর প্রয়াস-কাতর অনুনয়-বিনয়ের শেষে
প্রত্যুত্তরে ঠগীজ্ঞানীর আশ্বাস
নতুন পোষাক-প্রচ্ছদে সেজে উঠবে আমার পান্ডুলিপি সন্তান
বলবে কথা ঝিমন্ত শিশু সাদাকালো অক্ষরে?
যন্ত্রণার ইতিহাস পার করেও রঙিন চোখে মুগ্ধ স্বপ্ন দেখবে-
চমকিত জননী। প্রতীক্ষায় প্রতিবেশী জনদরদি সমাজ।
(৫)
দিনের পর দিন কত পূর্ণিমা অমাবস্যা ছায়া ঘেরা পথে
বাহানার কালো রাতের অন্ধকার কাটিয়ে
দোমরানো মোচরানো শরীরে মেকী ব্যাচ পড়িয়ে
একদিন পাঠিয়ে দিলে...
ফিরে এলো ঝা চকচকে প্রচ্ছদ-পোষাকে।
কালো অক্ষরের ব্যর্থ প্রলাপে
অমিলের মধ্যে মিল খুঁজে খুঁজে দিশেহারা
অক্ষরের অকারণে ইতস্তত কথায়
চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম স্নেহভরা চোখে
প্রলয় নিয়ে এল বুকে যন্ত্রণার সুনামী।
(৬)
বর্বরের হাতে বারবার ধর্ষিত হয়েছে
আমার মস্তিষ্কজাত সন্তান।
আঙ্গুলের ছোঁয়ার স্পর্শে হৃদয়ের রক্তমাখা
মৃত শ্বেত-লোহিত কণিকার জ্বলন্ত সাক্ষর
কালো অক্ষরের পান্ডুলিপি
আমার নির্জন তপস্যার ফল-
আজ কালিমালিপ্ত।
হাত বদলের পরিষ্কার ছাপের সিল মেখে
পরিচিত সমাজ হতে বহুদূর
লজ্জায় নিজেকে একহাত গুটিয়ে
নোংরা হাতের ব্যাঙ্গ পোশাক গায়ে এঁটে
ডেকে আনে অনাহূত শ্রাবণ...
(৭)
চিরশিশু আজ পরিত্যক্ত
তবুও প্রদীপ্তহীন আমার নীরব অহংকার
মানুষের বেশে পশু
পশুর ডি এন এ-এর ধারক ও বাহক
সমাজসেবীর ভেকধারী
সাহিত্যের শিক্ষিত সু-সন্তানদের ভাষণের আড়ালে
অদৃশ্য প্রহেলিকাময় অভিজ্ঞতার বীভৎস এক জঙ্গল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন