শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চিত্রা ব্যানার্জী

শিক্ষক




ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া
চক্ষূর্ন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রী গূরবে নমঃ ।।

প্রকৃতির অঙ্গনে এসে বসি রোজ প্রত্যুষে। হাওয়ার পেলব হাত বোলানো, কাকলিকূজনে, ‘আলোর নাচন পাতায় পাতায়’ দেখতে দেখতে বুক ভরে যায়, কিছু নিয়েই উঠি প্রাত্যহিকতার সূচনাপর্বে

ভরা দুপুরে দেখি জানালা খুলে, ভরপেট খেয়ে আগেকার বাঙালির ভাতঘুমের মতো  চুপচাপ যেন থমকে গেছে পারিপার্শ্বখালি এক একটা হঠাৎ উড়ে আসা কাক মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙাবার চেষ্টা করেসে উড়েও যায় আর আমার ঝুলিতে কিছু ভরে

দেখি গোধূলিতে সিদুঁরে আকাশ। আমি এখনো ঘরপোড়া নই, অতএব সেই সে গরুটার মতো ভয় পাই না, কিন্তু এক পলকে দেখি প্রকৃতির আনমনা ছবি আঁকা। রঙের সংগ্রহ, মিশ্রণ কৌশল, তুলির পটুতা। রোজ অবলীলায় নতুন চিত্র উপহার, মনে রোজ নতুন নতুন দাগ কাটে

আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসেআমার চায়ের কাপ দাগ শুকিয়ে শুকিয়ে কত যে অনপনেয় ছোপ ধরিয়েছে! এই সময় প্রকৃতির খোলারূপের অস্হায়ী বিশ্রামগ্রহণ, অন্যত্র খেলা শুরু

একটু পরে রাতের আকাশের দিকে তাকাই। শহুরে সব রূপই নকল, সুতো থেকে বুনট আর কাপড় শুধুই রং ধরানো ধাঁধা। গ্রামগঞ্জে রাতের আসল রূপ, আজকাল যদিও বেশিটাই কল্পনায়আর কল্পনাও আজকাল কৃপণ হয়ে যাচ্ছে।

নিশীথের হীরেখচিত আকাশ আমায় টানে। বর্ষার হালকা লালচে আকাশ, শীতের ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা ধোঁয়াশা আকাশআমার সিলেবাসে আরো অধ্যায় যুক্ত হয়। না না, ভুল করবেন না -- রবীন্দ্রনাথকে ধার করার যোগ্যতাও আমার নেই




এমনি ভাবেই নানাপ্রকারে শিক্ষকমশাই ও মশাইদের কাছে শিখতে শিখতে স্কুল কলেজ সব পাস করে অধুনা এখানেতাঁদের গুরুদক্ষিণা দেবার ক্ষমতাও আমার নেই। আমি নিশ্চিত, শিক্ষক ও শিক্ষা দুটোই অফুরান শিক্ষা সর্বত্র, শিক্ষক অল্পবিস্তর সকলেসেই খুঁটে খুঁটে জমা করা রতনে আমার সিন্দুক ভরেছে ও নিত্য ভরছেভাগবতের কাকভূশুন্ডি আর অবধূতের কাহিনীর মতো

আমার মনে হয়, প্রথাগত (বা জীবিকামূলক শিক্ষা) শুধু দ্বার খুলে দেওয়া মাত্র, অন্য শিক্ষা সাদরে গ্রহণ করবার পাসপোর্ট আর অনন্তকালীন ভিসাযাদের সে পথ বর্জনীয় মনে হয় অহঙ্কার বা আত্মতুষ্টির প্রশ্রয়ে, তারা কি আদৌ শিক্ষিত, সন্দেহ হয়!



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন