কালিমাটি অনলাইন
/ ৪৭
বিষয়টা এখন নিতান্তই ক্লিশে হয়ে গেছে, তবে আমার ইস্কুল জীবনে বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে রচনা
লেখার জন্য এই বিষয়টা ঘুরে ফিরে প্রায় প্রতি বছরই আসত – ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ’। তা বিষয়টা
নিতান্তই ‘কমন’ হওয়ার দরুন আমরা ছাত্র ছাত্রীরা মোটামুটি প্রস্তুতই থাকতাম।
এবং যদিও সেই নিছক ছেলেবেলায় আজকের যুগের
ছেলেমেয়েদের মতো তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণস্পর্শ বিন্দুমাত্র পাইনি, কিন্তু তাসত্ত্বেও রীতিমতোই বিশেষজ্ঞের মতো বিজ্ঞানের আশীর্বাদের বিশদ বর্ণনা উপস্থিত করে মন্তব্য
করতাম,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে অ্যাটম বোমা বর্ষণ কিন্তু
বিজ্ঞানের অভিশাপকেই প্রমাণ করে। বস্তুতপক্ষে এই ধরনের আরও অনেক তথ্যপ্রমাণ তুলে
ধরতাম সেই রচনায়, যা বিজ্ঞানের
আশীর্বাদের পাল্লা থেকে অভিশাপের পাল্লাটাই ভারি করে তুলত। কিন্তু সেইসঙ্গে একথাও
উল্লেখ করতাম যে, দোষটা আদৌ
বিজ্ঞানের নয়, বরং বিজ্ঞানকে যারা যে
কৌশলে ধ্বংসাত্বক কাজে প্রয়োগ করে তাদের। অর্থাৎ প্রযুক্তিবিদদের। এই সরল কথাটা তো
আমরা সবাই জানি যে, বিজ্ঞানের
কোনো গুণ বা দোষ থাকার প্রশ্নই অবান্তর। বিজ্ঞান হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম, যে নিয়মে বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড সৃষ্ট ও পরিচালিত হচ্ছে। এই
নিয়মে কোনো বেনিয়ম নেই। আর যদি কোনো বেনিয়ম ঘটে, তা প্রাকৃতিক কারণেই ঘটে, এবং তার পেছনে
শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণই থাকে, অন্য কোনো
কারণ নয়। কিন্তু বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে যে প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে, তা একান্ত ভাবেই এই পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষেরই কৃতিত্ব।
এবং নৈতিকতা বলে, সেই প্রযুক্তি
এই গ্রহের কল্যাণেই ব্যবহার করা উচিৎ। আর গণ্ডগোলটা এখানেই। বিজ্ঞান যেহেতু মানুষের
অধীন নয়,
তাই বিজ্ঞান তথাকথিত আশীর্বাদ এবং অভিশাপের উর্ধে। কিন্তু
প্রযুক্তি মানুষেরই সৃষ্টি এবং তার পরিচালনার চাবিকাঠিও মানুষেরই হাতে। আর তাই সেই
প্রযুক্তিকে আশীর্বাদ অথবা অভিশাপ কীরূপে প্রয়োগ করা হবে, তার নির্ণায়কও মানুষ। যেমন হয়তো অনেকেই শুনেছেন, আমিও শুনেছি, এই বিশ্বের এক বিশাল শক্তিশালী দেশের অন্যতম প্রধান উৎপাদন হচ্ছে সমরাস্ত্র। এবং
এই সমরাস্ত্রকে কেন্দ্র করে সেই দেশের অর্থনীতিও আবর্তিত হয়। সুতরাং দেশের অর্থনীতিকে
চাঙ্গা রাখতে সেইসব সমরাস্ত্রের কেনাবেচা খুব জরুরী। আবার কেনাবেচাকে সচল রাখতে
যুদ্ধও খুব জরুরী। আর তাই মাভৈ! সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দাও যুদ্ধের উন্মাদনা! লড়িয়ে
দাও এক দেশের বিরুদ্ধে আর এক দেশকে! লড়াইয়ের জন্য অস্ত্রের অভাব হবে না! আমরা তো
দোকান খুলেই বসে আছি! তোমরা তোমাদের দেশের
জনসাধারণের টাকায় সেইসব অস্ত্র কিনে নিয়ে যাও! তোমরা বাঁচো অথবা মরে যাও, কিন্তু যুদ্ধটা জারি রাখো!
সম্প্রতি প্রযুক্তির তথাকথিত অভিশাপের একটা ছোট্ট নমুনা
পাওয়া গেল পশ্চিমবাংলাতেও। নিতান্তই কম বয়সী একটা ছেলে, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে আদৌ কোনো জ্ঞান আছে কিনা জানি না; কিন্তু তা বলে তো ব্যবহারে কোনো বাধা নেই! আর সে সেটাই করে বসল। ছেলেটা হয়তো নেহাতই গাড়ল, অথবা নিতান্তই বদ, অথবা এমনও হতে পারে তার পেছনে কিছু অমানুষের মদত ছিল, যে জন্য তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে এমন একটি কার্টুনচিত্র
ইন্টারনেটে উপহার দিল, যা অত্যন্ত
ঘৃণ্য,
আপত্তিজনক ও ক্ষমার অযোগ্য। ছেলেটি নিঃসন্দেহে অপরাধী এবং
তার শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তার থেকেও বেশি অপরাধী তারা, যারা এই অবাঞ্ছনীয় ঘটনার সুযোগ লুফে নিয়ে পরবর্তী অসামাজিক
কাজকর্মে লিপ্ত হলো। আমরা আর কবে আমাদের সমাজ ও জীবন পর্যায়ে সচেতন হব? কবে বিজ্ঞানের যাবতীয় সত্যের সঙ্গে পরিচিত হব? কবে উপলব্ধি করব যে, এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডে আমাদের কারও একক অস্তিত্ব নেই, বরং আমরা জড়িয়ে আছি প্রকৃতির অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে। প্রতিটি জড় ও অজড়
উপাদানের সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তার শেকড়বাকড় আছে জড়িয়ে। বলা বাহুল্য, জীবন ও জগতের এই সার সত্যটা বুঝে নেওয়া একান্তই জরুরী। আর
তখনই একমাত্র সম্ভব হবে প্রযুক্তিকে শুধুমাত্র আশীর্বাদ রূপে গ্রহণ করে তার কল্যাণস্পর্শ লাভ
করা।
পরিশেষে একটি বিনীত অনুরোধ ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের
লেখক ও পাঠকদের কাছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, কোনো কোনো লেখক তাঁদের লেখা ‘কালিমাটি অনলাইন’এ প্রকাশিত হবার পর সেই লেখাটি সরাসরি পোস্ট করেন ফেসবুকের
পাতায়। এটা তাঁরা করেন, হয়তো আরও বেশি
পাঠকের কাছে লেখাটি পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে।
কিন্তু আমাদের অনুরোধ, লেখাট এভাবে
পুনঃপ্রকাশ না করে বরং লেখাটির অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করে লেখাটির লিংক শেয়ার করুন।
তাতে আগ্রহী পাঠকেরা অনলাইনে প্রবেশ করে লেখাটি পড়ার সুযোগ পাবেন। আবার একই সঙ্গে
লক্ষ্য করেছি, আগ্রহী পাঠকেরা
তাঁদের প্রিয় লেখকদের লেখা পড়ে ফেসবুকের
পাতায় তাঁদের অভিমত লিপিবদ্ধ করেন। অথচ ‘কালিমাটি অনলাইন’এর প্রতিটি
বিভাগে প্রতিটি লেখার নিচে ‘কমেন্টবক্স’ আছে। কিন্তু সেখানে তাঁরা তাঁদের অভিমত লিপিবদ্ধ করেন না।
এবং আরও দুঃখের ব্যাপার, লেখকরাও
পাঠকদের উৎসাহিত করেন না ব্লগজিনের কমেন্টবক্সে অভিমত লিপিবদ্ধ করার জন্য। আসলে, ফেসবুকের পাতায় পাঠকদের অভিমত লিপিবদ্ধ হলে লেখকেরা যেমন তাৎক্ষণিক
তাঁদের লেখা সম্পর্কে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেন, তেমনি পাঠকরাও
নিজেদের অভিমত ফেসবুকের পাতায় দেখে খুশি হন। কিন্তু কেউ কি একবারও ভেবে দেখেছেন, কিছু সময়ের পরে সেইসব অভিমত ফেসবুকের
বহমান স্রোতে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে?
ইচ্ছে করলেই কি তা আবার দেখার
বা পড়ার সুযোগ ঘটে? ধরাযাক ২০১৬
সালের জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত কোনো এক
লেখকের কোনো একটি লেখা পড়ে পাঠকদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গেছিল। এবং পাঠকেরা সেই লেখাটি
সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা তর্ক বিতর্ক লিপিবদ্ধ করেছিলেন ফেসবুকের পাতায়।
এখন এই ২০১৭ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে যদি কেউ সেইসব অভিমত খোঁজেন ফেসবুকের
পাতায়,
তা কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে? আমি সত্যিই জানি না, সেই সব অভিমত পুনরুদ্ধার
কীভাবে সম্ভব! কিন্তু যদি সেইসব আলোচনা
ব্লগজিনের কমেন্টবক্সে লিপিবদ্ধ থাকে, তাহলে অনায়াসে তা পাওয়া যায় ব্লগজিনের আর্কাইভে (মণিভান্ডার)। আশাকরি আমাদের
প্রিয় লেখকেরা ও পাঠকেরা এই ব্যাপারটা
ভেবে দেখবেন।
সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। সবাই ভালো থাকবেন।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
08789040217 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal
Sen, Flat 301,
Phase 2,
Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar,
Jamshedpur 831002,
Jharkhand, India
লেখকদের ফেসবুক প্রীতি নিয়ে যথার্থ লিখেছেন। তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তার মোহে স্থায়ীত্ব বলে জিনিসটাকে ফেসবুকও মারছে, আর লেখকরাও স্রোতে গা ভাসাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ভাবি ফেসবুকের কর্মপদ্ধতির বিরুদ্ধে ব্লগারদের কোনো প্রকার সংগঠিত প্রতিরোধ আন্দোলনের দরকার কি না...
উত্তরমুছুনজরুরি প্রসঙ্গ। এ নিয়ে ভাবা উচিত, জনমত গঠন করা দরকার।
উত্তরমুছুন