গ্রহরত্ন
যে কথা বলা
হয়ে ওঠে না, তা বলতে
গিয়েই কলম ধরেছিল, সে।
মানে বলা কওয়া হয়ে ওঠে কই! সারাক্ষণ মোবাইলেই মুখ গুঁজে দুজনেই। ডোডো তাই স্থির
করেছে ঠাম্মুর কাছে চলে যাবে। ঠাম্মু তো স্টার। ডোডোও তাই হবে। তবু তো ভাব হবে আরও
অনেক স্টারের সাথে। এই দক্ষিণের তেরোতলা ফ্ল্যাটে একা একা কতক্ষণই বা পোষায়! আপাতত
মানুষ নয়, বলা যাক পাথর টাথরের
কথা। কিম্বা পাথরের খোঁজে আসা মানুষের কথা। পাথরের কত যে গুণ! আগে কে জানতো!
জায়গাটির নাম, যাই হোক, সোনাপট্টি হিসেবেই
খ্যাত। বিখ্যাত সব জুয়েলারির দোকান। আপাতত ঘোষ জুয়েলার্সের বাইরে, সার সার গাড়ি। এই জাস্ট মশার ধোঁয়া দিয়ে গেছে মিউনিসিপ্যালিটির
রিক্সাভ্যান। মালিনী রুমাল দিয়েছে মুখে। তবু খুক খুক করে কাশছে। বাইরে বিকেলটা রাত্তিরে মিশে যাচ্ছে, ফোটো ফ্রেমের মতই। তিনি আসলেন। হাসলেন। তাঁর গাড়ির সামনের কাচে প্রেস স্টিকার। পরনে গেরুয়া পাঞ্জাবি আর রুদ্রাক্ষের
মালা। মালিনীর প্রথম ডাক পড়ল।
আটার গুলি
নিয়ে জলে ভাসানো হয়েছে। অপেক্ষা ডোবে না ভাসে দেখার। আচার্য প্রণব ভারতী মিটি মিটি হাসছেন। আর নিজের লম্বা চুলে আঙুল
চালাচ্ছেন। গুলি ডুবলো। প্রমাণিত হল, যা সন্দেহ করেছিলেন তা সত্য! এবার নিদানের পালা। স্লিপ গেল, সামনের কাউন্টারে। ধারণের জন্য দিয়েছেন গোমেদ, মুনস্টোন, এক রতি পলা, মুক্তো না পেলে এমিথিস। এবার বশীকরণের জন্য, হ্যাঁ একটু বেশিই খরচা। মাত্র পাঁচ হাজার। মালিনী রাজি। বাইরে দাঁড়িয়ে সুজিত। মালিনীর ফোন সাইলেন্ট। লক্ষ্য করেছে, মিসড কল পাঁচটা। সুজিত মালিনীর প্রেমিক হব হব। ফেসবুকেই আলাপ। আচার্য নিশ্চিত করলেন সুমন এবার ঘায়েল
হবেই। মিউ মিউ করবে, মালিনীর সব কথাতেই। ডোডোটার খুব অসুবিধে। ডোডো মানে, মালিনীর নবম বর্ষীয় পুত্র। সারাক্ষণ বাপের এই সব বিশ্রি কথা আর চিৎকারে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। পড়বে কী, বেচারা যে কার দিকে যাবে বুঝতেই পারে না, বাবা না মা! এবার মালিনী নিশ্চিন্ত। আর মেয়েটার মানে সুমনের গার্ল ফ্রেন্ডের
অনিষ্ট চাইলে, আরও পাঁচ
হাজার লাগবে। আপাতত মালিনীর ব্যাগে অত টাকা নেই, সুজিতের কাছেই মালিনী ধার চাইলো। ক্যাশ নেই। কার্ড এগিয়ে দিলো, সুজিত। মালিনী হাসতে হাসতেই বেরোল এন্টি চেম্বার
থেকে। এখন মাপ দিচ্ছে আঙটি আর তাবিজের।
এন্টি চেম্বারের
এন্ট্রি আর এগজিট আলাদা। এন্ট্রি পাশের সরু গলিপথ দিয়ে।
এগজিট জুয়েলারি শপের ভেতর দিয়ে। এখন চেম্বারে আচার্য পরের কাস্টমারকে টাইম দিচ্ছেন। এবার ওনার এপ্লিকেশন মেথড ভিন্ন। কারেন্ট গেছিল অল্প কিছুক্ষণের জন্য। এখন এসে গেছে। সাদা কাগজকে বালবের গায়ে লাগালে যদি মড়ার
খুলি ভেসে ওঠে, তাহলেই
নিশ্চিত... হ্যাঁ ভেসে উঠছে। আর তো দ্বিধা নেই। আইটিতে কর্মরত বর্তমান ক্লায়েন্ট শুনে নিচ্ছে কী কী ধারণ করতে
হবে। বশীকরণ ও মারণাস্ত্র প্রয়োগে
সে রাজি। এবং পুরোটাই সে কার্ডে পেমেন্ট করবে। এবার খানিক নিশ্চিন্ত সে। ঋতিকা বাইরে দাঁড়িয়ে, সেলফি তুলছে, এবার সেও মুখ
বাড়ালো। পেছনের কাপলের সাথে ধাক্কা ধাক্কিতে পেছন ঘুরেই সুমন দেখে মালিনী
-
তুমি
এখানে?
বাকিটা পরে
বলা যাবে। আপাতত বলা যাক, সে রাতে একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরে সুমন আর মালিনী। আর তাদের একসাথে বাড়ি ফিরতে দেখে যৎপরোনাস্তি
আনন্দিত হয় ডোডো। এখন ডোডোকে পড়াচ্ছে দুজনেই। সুমন আর মালিনী। আর ডোডো মনে করতে পারছে না শেষ কবে দুজনে
এক সাথে পড়াতে বসেছিলো। আকাশে ইয়া একটা চাঁদ...
বলা হয়নি, ঋতিকা আর সুজিতের বিয়েতে সুমন আর মালিনীই ছিলো
মূল উদ্যোক্তা। আর হ্যাঁ, ঘোষ জুয়েলারিতে পাশাপাশি শুয়ে আছে সুমন আর মালিনীর তাবিজ। কেউ হয়ত আজ বা কাল কিনে নেবে। কারণ আচার্য প্রণব ভারতীর চেম্বারে ভীড়
বাড়ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন