পন জুয়েলার্স
সুন্নতি দাড়ি-২ ফোনটা ধরছে না। দুপুরের পর থেকেই টেনশনটা বেড়েছে। টেনশন বাড়ার অর্থ হলোই খামোকা মোবাইলে ফোনটা নিয়ে টেপাটিপি, ঘন ঘন বাথরুম আর মাবুদ মাবুদ বলে তোলপাড় করা।
একটা যাযাবরী অস্থির সময় এখন পার করছে সুন্নতি দাড়ি-১।
সুন্নতি দাড়ি-৩ এর মরিশাস যাবার কথা। গেল কিনা বুঝতে পারছে না। দুপুরের পর থেকে সময়টা আর কাটতে চাইছে না। দেয়াল ঘড়িটার কুচকুচ কাঁটা, ফোনের সময়
নির্দেশন, জানালা বন্ধের গুমোট গুলশান সব যেন কংক্রিট হয়ে আছে
দাপটে।
এই ৩ জনই আধুনিক। সুদর্শন জ্যামিতিক শরীর কাঠামো। অনেক বিল থেকে শালুক কুড়ানো মানুষ, ঝকঝকে। নাভির নিচে লাম্পট্য আছে আফটার সেভ লোশনের মতো। আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের গভীর পর্যন্ত দেখা যায় বলে কাঁপন তোলা একটা ভয় আছে মনে
মনে সংগোপনে। এই ভয়টা সারাক্ষণের বলে ৩ জন একটু একটু ছাট দেয়ানো, মসৃন দাড়ি রাখছে।
ফেসবুকে এই দাড়ি রাখা প্রোফাইল ছবিতে কত যে উর্বর মন্তব্য আর
ফুটন্ত খইয়ের মতো লাইক। বন্ধুরা আদর করে ওদের সুন্নতি দাড়ি-১,২,৩ বলে ডাকে।
ড্রাইভার বকশিকে বকশিবাজার পাঠানো হয়েছিল, এখনো আসছে না কেন? সুন্নতি দাড়ি-১ ভয়ে মোবাইলটা অন করতে পারছে না। পরশু থেকে সে আপাত: পলাতক। ছোট বোনের শ্বশুরবাড়ি আত্মগোপন করে আছে। টেনশন হচ্ছে কখন এই বাড়ির লোকজন
জেনে যাবে...
হাতে স্পেড কার্ডের সংখ্যা কমে আসছে। ট্রাম্প করার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে বেতনের টাকা ফুরানোর মতো করে। মহাজাতকের কোয়ান্টাম মেথড ফলো করবার চেষ্টা করলো।
তাহসানের একটা গান গুনগুন করে;
: কেউ না জানুক, আমি তো জানি আমি...
এই সহজ সুরে গানটা গাইতে ‘তোমার’ শব্দটায় এসে মুখ ফসকে প্রায় বলেই জিভে আটকে গেল। থমকে গেল সব জানাশোনা সুর।
ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া বউটার শরীরের অলি গলি চম্পাকলি ভাবার চেষ্টা
করল, উপস্থাপিকা বউয়ের শরীর ছাপিয়ে এই মেয়েটার মুখ
ভেসে এলো প্রজাপতি পাখনায়।
ট্রেনের জানালায় যেরকম করে ছোট নদী, নাম না জানা জসীম উদ্দিন গ্রাম, রবীন্দ্রনাথের
মতো একাকী তালগাছ সাঁ সাঁ করে পেছনের দিকে দৌড়ে পালায়; তেমনি
এই মেয়েটার দাপুটে শরীর লাবণ্য ছুটে এলো। আইডিয়াটা মন্দ না যে টেনশন রিলিফ করার জন্য মাস্টারবেট করা যেতে পারে।
ড্রাইভার বকশী’র মোবাইলে বিষয়টা রেকর্ডটা করা আছে। দারুণ স্মার্ট এই শালার ড্রাইভারটা। সে জানে কোন দেবতা কোন ফুলে
তুষ্ট। রেকর্ডটা আবার দেখতে পেলে বেশ হতো...
নটীর বাচ্চাটা বকশীবাজার গিয়ে আর ফিরছে না কেন? সুন্নতি দাড়ি-১ ছোটবোনের ফোন থেকে একবার
ফোন করেছিল। নটীর বাচ্চাটা ফোন বন্ধ করে রেখেছে। উফ...
মাস্টারবেটের আগে একটা মালাই চায়ের
মতো কড়া পর্ণো দেখলে জম্পেশ হতো।
ছোট ভাগনীটার ল্যাপটপ চেয়ে নিল।
অপ্রত্যাশিত ঢেউয়ের মতো সুন্নতি দাড়ি-১ ফেসবুকে লগইন করতেই শরীরের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে গেল.. তার ইনবক্স ভর্তি তীব্র আক্রমণ, টাইমলাইন জুড়ে শ্লোগান
আর ছবির পোস্টার।
: এই ৩ ধর্ষককে ধরিয়ে দিন।
সুন্নতি দাড়ি-১,২,৩ এর সুদর্শন ছবি।
সে ইলেকট্রিক শক খাবার মতো করে ল্যাপটপের ডালা নামিয়ে ফেলে.. মনে হলো সমস্ত শরীর সজারুর কাঁটা খোঁচা। পর্ণো দেখবার ইচ্ছা মুহূর্তে উবে যায় স্যুপের বাটি থেকে ওড়া ধোঁয়ার মতো।
ছোট বোনের আরেকটা মোবাইল থেকে দাড়ি-২ ও ৩কে ফোন করার চেষ্টা করলো। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল সাহেবকে ফোন করার চেষ্টা করল।
সবার ফোন গুদাম গন্ধী বন্ধ।
ছোট বোনের আরেকটা মোবাইল থেকে দাড়ি-২ ও ৩কে ফোন করার চেষ্টা করলো। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল সাহেবকে ফোন করার চেষ্টা করল।
সবার ফোন গুদাম গন্ধী বন্ধ।
গুলশানের চোখের কোণার মতো সুন্দর বাড়িটাতে বসে সে সুনামগঞ্জের
বিধ্বস্ত হাওড় দেখতে পাচ্ছে। সরষে ফুল কি সে জানে না। ছোট বোনটার বুয়া রান্নাঘরে
সরষে ইলিশ করছে। অন্য সময় হলে সে নাক টেনে ঘ্রাণ নিতো, আজ ইলিশের এই ঘ্রাণে পেট
গুলিয়ে উঠল, বমি পাচ্ছে।
ওয়াক বলে দৌড়ে বাথরুমে যাবার
সময় মনে হলো, তেল পিচ্ছিল একটা ফাঁসির দড়ি তার দিকে এগিয়ে আসছে। জল্লাদ দিলদার সিনেমায়
দেখা জল্লাদের মতো থমথমে হয়ে আছে অষ্পষ্ট।
সুন্নতি দাড়ি-১ অবাক হয়ে তাকিয়ে
আছে জল্লাদের দিকে। আশ্চর্য জল্লাদের গায়ে এত জুয়েলারি কেন? গা ভর্তি চকচক করছে
সোনার আপন গয়না।
কুয়াশার ছায়ার মতো ছোট বোনটাকে দেখতে পেল এগিয়ে আসছে। সব
ঝাপসা লাগছে মুখের ছবি বায়তুল মোকাররম ভিড়ের মতো। ছোটবোন নাকি ঐ মেয়েটা..
আশ্চর্য !
আশ্চর্য !
হাতে বটি কেন?
মুখ থুবড়ে পড়ে যাবার আগে তার কানে ভেসে এলো টেলিভিশনের সুরেলা বিজ্ঞাপন কন্ঠ;
মুখ থুবড়ে পড়ে যাবার আগে তার কানে ভেসে এলো টেলিভিশনের সুরেলা বিজ্ঞাপন কন্ঠ;
: পন জুয়েলার্স পন জুয়েলার্স...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন