বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

পারমিতা চক্রবর্তী

মৃত্যু কি স্বেছায় হওয়া উচিত?




God, but life is loneliness, despite all the opiates, despite the shrill tinsel gaiety of "parties" with no purpose, despite the false grinning faces we all wear. And when at last you find someone to whom you feel you can pour out your soul, you stop in shock at the words you utter - they are so rusty, so ugly, so meaningless and feeble from being kept in the small cramped dark inside you so long. Yes, there is joy, fulfillment and companionship - but the loneliness of the soul in its appalling self-consciousness is horrible and overpowering.
Sylvia Plath

মৃত্যু এক চরম অপ্রিয় সত্য এক মৃত্যু পারে না শূন্যস্থান পূরণ করতে ৷ আবার মৃত্যু আত্মা অঙ্গাগিভাবে জড়িত একে অপরের সাথে আত্মা দেহ' সম্পর্ক চালক গাড়ির মত  

আত্মা একটি জড় শরীর থেকে অপর একটি জড় শরীরে গমন করতে পারে, দেহান্তরিত হতে পারে যখন একটি দেহের মৃত্যু হয় তখন তার মস্তিষ্কের কোষগুলি নষ্ট হয়ে যায়, এবং কোনোরকম বাহ্যিক প্রক্রিয়ার সাহায্যেই সেগুলিকে আর অন্য আরেকটি মস্তিষ্কে প্রভাবিত করতে পারে না, সেইজন্য কখনই কোনো মৃত মানুষের স্মৃতি কোনো শিশুর মস্তিষ্কে শারীরিকভাবে সঞ্চারিত হবার বা করবার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না সুতরাং আত্মা' পরিধি অনেক বিস্তৃত  

মৃত্যু স্বেচ্ছামৃত্যু বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, স্বেচ্ছামৃত্যুর গভীরে লুকিয়ে থাকে  অনেক রূঢ় সত্য, অবসন্নতা, জড়তা, একাকীত্ব এখন প্রশ্ন হল স্বেচ্ছামৃত্যু কি  আত্মহত্যা? নাকি তাকেও স্বাভাবিক মৃত্যু বলব? তবে স্বেচ্ছামৃত্যুকে কেন আইন বৈধতা দেয় নি?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বেচ্ছামৃত্যু আবশ্যক হয়ে পড়ে গলায় ক্যান্সার আক্রান্ত এক  রোগীকে দিনের পর দিন বলতে শুনেছি, বিষ এনে দেওয়ার কথা যন্ত্রণা চাপতে না পেরে একদিন সেই রোগী আত্মহত্যা করেন হিন্দুশাস্ত্র মতে আত্মহত্যা মহাপাপ কিন্তু সময়ের স্রোতে আত্মহননকে আইনসিদ্ধ হতে হবে মেডিকেল টার্মে যার নামমার্সি কিলিংযা নিয়ে গোটা দুনিয়া তোলপাড় তবে ভারতে' শীর্ষ আদালত স্পষ্টতই রায় দিয়েছে, কেউ জীবনের ভার অসহ্য মনে করলে নিজের জীবনের  পূর্ণচ্ছেদ ঘটাতে পারেন বিশেষ করে মুমুর্ষূ , মৃতপ্রায় ব্যক্তি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মেডিকেল সায়েন্সের নিষ্কৃতির পথ বেছে নিতে পারেন


আবার দিনের পর দিন একা বাড়িতে থেকে বহু বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা কোর্টে স্বেচ্ছামৃত্যু অ্যাপিল করেছেন সাত বছর ধরে দুই প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য সাহায্য চেয়ে এসেছেন বৃদ্ধ বাবা-মা কখনো হাত পেতেছেন স্থানীয় নেতাদের কাছে, কখনো আবার একের পর এক চিঠি লিখেছেন সরকারকে  সাহায্য মেলেনি এদিকে, নিজেদেরও বয়স বাড়ছে অনটনের সংসারে তাদের অবর্তমানে দুই মেয়েকে দেখবে কে? বাধ্য হয়ে তাই প্রতিবন্ধী দুই মেয়ের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাবা-মা হতাশ দম্পতির একটাই আবেদন, সাহায্য করতে না পারলে সরকার অন্তত মেয়েদের স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতিটুকু যেন দেয়

আরেকটি ঘটনা নদীয়ায় পরিবারের উপার্জনক্ষম বাবা পেশায় দিনমজুর স্ত্রী  গৃহবধূ ছেলে বিএসএফের সদস্য দেশরক্ষার ব্রত পালনে নিয়োজিত দুই মেয়েকে নিয়ে দুটি ঘরে থাকেন দম্পতি দুই মেয়ে কৃষ্ণা এবং রমা শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন তাদের শরীরের ৮৫ শতাংশ অসাড় পাড়ার কয়েকজন শিশুকে পড়িয়ে সামান্য আয় করেন দুই বোন কোনো রকমে টেনেটুনে চলে সংসার এখানে ভাবতে হবে উন্নয়নশীল মানুষদের স্বেচ্ছামৃত্যু কেন ? কোন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছামৃত্যুর কথা ভাবে মানুষ পরিবারের চার সদস্যের স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি এক পিতার মেহেরপুরে একই পরিবারের চারজন মানুষ, সবাই জানেন তাদের মৃত্যু আসন্ন তবে তার আগে  তাদের ভুগতে হবে পঙ্গুত্বে অথর্ব হয়ে পড়ে থাকতে হবে বিছানায় আর অবস্থা থেকে আগেভাগেই মুক্তি পেতে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনে বলা হয়, তাদেরকে মেরে ফেলার অনুমতি দেওয়া হোক, অথবা তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করা হোক পরিবারটির চার সদস্যই ভুগছেনডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফিনামক এক রোগে রোগের নিশ্চিত পরিণতি - পঙ্গুত্ব বরণের পর ধীরে ধীরে মৃত্যু মেহেরপুর শহরের বেড় পাড়ার ফল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন তার স্ত্রী বাকপ্রতিবন্ধী আর ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফিতে আক্রান্ত তার দুই ছেলে আবদুস সবুর রায়হান হোসেন মেয়ের একমাত্র ছেলে সৌরভ হোসেনও আক্রান্ত রোগে তিনি জানান, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়ই বড় ছেলে আবদুস সবুরের শরীরে রোগটি দেখা দেয় আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যেতে থাকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বর্তমানে শয্যাগত, একেবারেই পঙ্গুঅন্যদিকে ছোট ছেলে রায়হান হোসেনের অবস্থাও একই পরিণতির দিকে সে পায়ে কিছুটা শক্তি পেলেও তেমন হাঁটাচলা করতে পারে না আর মেয়ের ছেলে সৌরভ হোসেনও বর্তমানে রোগে আক্রান্ত। এমত অবস্থায় অসহায় হয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুরোধ করেন তারা


বেলজিয়ামে প্রথম স্বেচ্ছামৃত্যু হয় আজ থেকে তিন বছর আগে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বেলজিয়ামে স্বেচ্ছায় আরামদায়ক মৃত্যুর ঘটনা আলোড়ন ফেলে ৷ এক  বেলজিয়ান আইনজীবী জ্যা জ্যাকস ডি গচ জানান, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এক শিশু গত সপ্তাহে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করে আদালত তা মঞ্জুর করেন স্বেচ্ছামৃত্যু আইনের সমর্থক এই আইনজীবী জানান, আমার মনে হয়, এরকম অবস্থায় কেউ যখন স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিতে চায়, আমাদের উচিৎ তাদের সুযোগ দেওয়া
ডেসমন্ড টুটু, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাথলিক নেতা নিজের চোখের সামনে বন্ধু  নেলসন ম্যান্ডেলার যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দেখেন তারপর একাটি পত্রিকায় তাঁর দ্বেষ উগরে দেন জীবন যাপনের মতোই মৃত্যু উদযাপনে মানুষের সমান অধিকার থাকবে না কেন ? প্রয়োজন হলে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে নিষ্কৃতি মৃত্যুর আরেক সমর্থক বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নিজেই জীবন বিসর্জন দিতে গিয়েছিলেন এছাড়া সক্রেটিস, প্লেটো এবং বহু গ্রীক দার্শনিক সহ রাজা পঞ্চম জর্জ অনেকেই ইউথ্যানেসিয়ার সমর্থক ছিলেন

১৯৭৩ সালে নভেম্বরে' রাতে ধর্ষিত হয়ে মুম্বাইয়ের কে এম হাসপাতালে ভর্তি হন অরুণা শানবাগ গলায় ভয়ংকর ভাবে কুকুর বাঁধার চেন পেঁচিয়ে রাখা হয়েছিল তাকে এই পাশবিক অত্যাচারে মস্তিষ্কের বেশ কিছু অংশ বিকল হয়ে পড়েছিল তারপর সে কোমায় চলে যায় টানা বিয়াল্লিশ বছর সে কোমায় থাকে তাঁর এই  অবস্থা দেখে এক সাংবাদিক বন্ধু পিঙ্কি ভিরানি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন যার বয়ানে বলা ছিল, জীবন আর মৃত্যুর মাঝে চলচছক্তিহীন অবস্থায় হাসপাতালে বেডে দিনের পর দিন নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি কেন দেবে না আদালত ? এই বিতর্কে দেশ উত্তাল হয় ২০১১ সালে তিন সদস্যের একটি প্যানেল গঠন করে অনেক টালমাটালের পর সিদ্ধান্তে আসে -- বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীকে (যদি রোগী জড় পদার্থের মত হয়) রোগীর আত্মীয়ের অনুমতি নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে নয় পরোক্ষভাবে নিষ্কৃতি মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে এমন রায় যুগান্তকারী ভারতবর্ষে

স্ব-ইচ্ছায় মানুষ জীবন যাপন করলে মৃত্যু কেন স্ব-ইচ্ছায় নয়! মৃত্যুকে কাছ থেকে  দেখার অধিকার সবার থাকা উচিত শেষে বলি, প্রাণ ভরে বাঁচি আমরা – “মোরে আরও আরও দাও প্রাণ...” 

ছবি : পার্থ সিংহ


(তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন