বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

অলোকপর্ণা

ধারাবাহিক উপন্যাস






তাহার নামটি


(নয়)   

...পুনশ্চঃ তিনি এও বললেন, “Revenge is a dish which taste best when served cold.”

পকেটে রাখা চিঠিটা ছাদে বসে বার চারেক পড়ার পরও অঞ্জন তার অনেক লাইনই বুঝতে পারে না।
চিঠিটা রাজীবের দিদির লেখা, কোনো এক সাব্বিরকে। যাকে রাজীবের দিদি নিজেই চেনে না। অঞ্জনের গুলিয়ে যেতে থাকে অনেক কিছু। আজ বিকেলের ওই ঘটনাটাই কি প্রতিশোধ ছিল? যদি তাই হয়, রাজীবের দিদি কি এখন স্থির হয়েছে, শান্ত হয়েছে?... রাজীবের দিদি রঞ্জনা, কিন্তু এই ঋতম কে? সাব্বিরই বা কে? অঞ্জন আকাশের দিকে তাকায়, একটু নীচের দিকে জ্বলে আছে সপ্তর্ষি মন্ডল, প্রশ্নচিহ্ন হয়ে।
অঞ্জনের বুকে একটা মনকেমন কষ্ট জমতে থাকে।


তোর মা কখন আসবেন?” চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে রঞ্জনা।
আজ আসবে না, মাসির বাড়ি গেছে
চায়ের কাপ প্লেটে নামিয়ে রঞ্জনা কিছুক্ষণ প্লেটটার দিকে তাকিয়ে থাকে, “ঋতম, আজকের দিনটা আমায় থাকতে দিবি তোদের বাড়িতে?” রঞ্জনা ঋতমের দিকে তাকায়।
মানে? পালিয়ে এসেছিস না কি বাড়ি থেকে!
বলতে পারিস
সে কি, কেন?” ঋতমকে চিন্তিত দেখায়।
জ্যেঠুকে লাথি মেরেছি আজকে বিকেল বেলা
মাই গড!... কিন্তু কেন!
সঙ্গত কারণেই, তুই আগে বল থাকতে দিবি কি না
আমার কি আছে, থাক, কিন্তু কাকিমা জানেন যে তুই এখানে থাকবি?”
না
তাহলে? চিন্তা করবেন তো
করতে দেরঞ্জনা চায়ের কাপ তুলে নেয়।
ঋতম তাকিয়ে থাকে রঞ্জনার দিকে, “রাতে কি খাবি?”
যা আছে তাই দিস
দুজনেই চুপ করে চায়ের কাপে মন দেয়।
তোর হয়ত শুনে ভালো লাগবে, আমি সাব্বিরকে চিঠি লেখা ছেড়ে দিয়েছি
আচ্ছা
শুধু আচ্ছা!
হুম, আর কি?”
না, ভাবলাম তুই খুশি হবি
অল্প হেসে ওঠে ঋতম, “যে নেই তার উপর ঈর্ষা কি সম্ভব?”
কে জানে...
সাব্বিরর প্রতি আমার কোনো ঈর্ষা নেই রঞ্জনা, বিষাদ আছে, আমার নিজের প্রতি
কেন?” চায়ের কাপ একটু শব্দ করেই প্লেটে রাখে রঞ্জনা।
ঋতম জবাব দেয় না, মাথা নিচু করে অল্প হাসে, “চল তোকে মায়ের ঘরটা দেখিয়ে দিই, আজকে ওখানেই থাক। কাল মা এসে গেলে অন্য ব্যবস্থা করব।
কাল আমি থাকব না ঋতম,”
কোথায় যাবি?”
জানি না
কেন থাকবি না?”
কাকিমা কী ভাববেন...
যাই ভাবুক, সেটা আমি বুঝবো, চল”, ঋতম উঠে দাঁড়ায়।
বুঝলি ঋতম, তোকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে হবে,” উঠে দাঁড়িয়ে হেসে ওঠে রঞ্জনা।
দীর্ঘশ্বাস চেপে ঋতম বলে, “আর তোকে নিয়ে একটা-দুটো উপন্যাস।





পিমের লোমে মুখ গুঁজে দেয় রাজীব। পিমসুলভ গন্ধে তার নাক ভরে যায়। ব্যালকনিতে এরকম সময় আসা যায় না, দিদি সিগারেট খায় বলে। আজ বিকেলে দিদি বেরিয়ে গিয়েছে, সাইকেল নিয়ে, সাথে কোনো জামা কাপড় নেয় নি। আশা করা যায় কাল সকালে ফিরে আসবে। জ্যেঠুকে দুটো আইস প্যাক কিনে এসেছে রাজীব। জ্যেঠু কোনো কথা বলেনি তার সাথে, চুপচাপ প্যাকদুটো নিয়ে  নিয়েছে। দিদি চলে যাওয়ার পর থেকে মা কেঁদে চলেছে ঘরের দরজা বন্ধ করে।  আজ রাতে রাজীবকে বোধহয় দিদির ঘরেই শুতে হবে। রঞ্জনার ঘরে ফিরে এসে পিমকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় রাজীব, খরগোশটা টেবিলের নীচে ছুটে চলে যায়। আয়না, বইয়ের তাক, আলমারি, বিছানা সব নিজের নিজের জায়গায় স্থির। রাজীব আয়না পেরিয়ে বইএর তাকের সামনে এসে দাঁড়ায়। কোণার দিক থেকে টি. পি. মাইতি বের করে আনে। একটু উলটে পালটে দেখে, ফিঙ্গারিং-এর পৃষ্ঠাটা ভাঁজ করে রাখা। টি. পি. মাইতিকে বইয়ের তাকে ফিরিয়ে দিয়ে রাজীব আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। এই আয়নাটার কাছে সে নতুন, অচেনা। আয়নাটা রঞ্জনাকেই খালি চিনে এসেছে বহু বছর হল। আচ্ছা, দিদি কথা বলে না কেন তার সাথে? ছোটোবেলায় তো রাজীব বেশ ভাল বন্ধু ছিল রঞ্জনার! কবে থেকে বন্ধ হয়ে গেল কথা বলা? মনে পড়ে না রাজীবের। সে আয়না থেকে সরে আসে।


অঞ্জন বা জুলপি এগিয়ে এল রঞ্জনার দিকে, রঞ্জনার পিঠ ঠেকে আছে সাদা পাঁচিলের গায়। বেশ কাছে চলে আসতেই রঞ্জনা জুলপির কলার ধরে তাকে নিজের উপর টেনে আনল। নিজের ঠোঁট চেপে ধরল জুলপির ঠোঁটের উপর। রঞ্জনার পিঠে লেগে গেল পাঁচিলের রঙ। জুলপির গরম জিভ খেলা করতে লাগল রঞ্জনার মুখের মধ্যে। জুলপিকে নিজের সাথে চেপে ধরে রঞ্জনা পা দুটো দিয়ে জুলপির কোমর  চেপে ঘিরে ধরল। জুলপি ঢুকে এল রঞ্জনার মধ্যে। রঞ্জনা দেখতে পেল, রঞ্জনা টের পেল, জুলপি নয় - তার ভ্যাজাইনার মধ্যে নীল গোল একটা পৃথিবী ঢুকে পড়ছে।  পৃথিবীটা রঞ্জনার মধ্যে ঢুকে বেরিয়ে এল, আবার ঢুকে পড়ল, আবার বেরিয়ে এল।
রঞ্জনা উঠে বসল বিছানায়। তার দুই পায়ের ফাঁক যন্ত্রণায় ভিজে গিয়েছে। ঘর অন্ধকার, ঋতমের ঘর থেকে আলো আসছে না। বিছানা ছেড়ে রঞ্জনা উঠে এল জানালার কাছে। নীচে তার সাইকেলটা দেখা যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে, রাত দেড়টা নাগাদ ঋতমের বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে রঞ্জনা বেরিয়ে পড়ল।


(ক্রমশ)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন