শূন্যকাল
একটি নিঃস্বকাতর পলাশের পাশে দাঁড়িয়ে স্পর্শরেখা
কলঙ্কের পাহাড় নিয়ে কতটা হৃদয় গোপন করে রাখে
কিছু ফুল ঝরে গেলে এক শূন্য থেকে শুরু হয় উল্কাপাত
অথচ যাবার সময়ে নতুন ছায়ার মোহিনী অন্তর্বাস
শিশির ধোয়া ধান ক্ষেতের মন্ত্রে যাবতীয় জীবন যাপন
ওপারে নামছে মেঘ ও রোদ ফুটে আছে ব্রহ্মকমল
এপারে অমিত প্রেমলিপি জ্যোৎস্নার কপালে অষ্টপ্রহর
সাজঘর, ভেসে আসছে
আলপথের বিবাগী পথিক
নিঃশেষ হতে কত বাকি যদি ভেসে আসে পুবের সৌগন্ধ
ডানায় ছড়িয়ে দেই মর্মরিত অনন্তকাল আমার—
সকাল ও পলাশকাঁটা
সকালের দৃশ্য খুলতে থাকে
অভিসার টপকে রাস্তার শাখা প্রশাখায়
সামাজিক কুয়াশা
জলজ হওয়ার আবেদন জানিয়ে পানকৌড়ির ডুব
আর
তলপেটে গাঁথা মেঘের ময়ূর উদাত্ত স্নায়ুতে
গেঁথে দেয় পলাশ কাঁটা
দিঘির জলে ছটপট করে সবুজ
ভীষন আপন এই অবগাহন কাল
কেউ নেই
রং-বেরঙের আবেগ ফুঁড়ে এবার খিদের অসুখ
আকন্ঠ বায়ু পথের নাম নিয়ে তীব্রতা বাড়ায় শ্বাসের
আনন্দ বোঝার আগেই হিসেব গড়িয়ে যায়
সব দুঃখ কষ্ট ভয়
শিখে নেয় গাঢ় নাস্তিকের
সাধন ভজন—
নিরক্ষীয়
কলম ধরতে শিখিনি এখনো। আঙুলের খসখসে চামড়ায় শিউরে ওঠে
অক্ষর। কর্কশ যন্ত্রণা থেকে পালাতে চায় ভোরের কোকিল। তাপ বাড়তে থাকে। মাটির রস উবে
যায় মহাকাশে।
পথের দুপাশে অযত্ন নিয়ে ঝোপ ঝোপ সাদা ভেঁটু ফুল। তারই সুবাস
নিয়ে অনাথ সময়ের হেঁটে যাওয়া। সেপথ পাঁচালির। শান্ত পরিক্রমায় মাটি কামড়ে থাকা
দূর্বালতা, জন্মমৃত্যু নিয়ে অনিকেত।
নিয়ে হেঁটে যায় সরস্বতী। অহংকারী বিভঙ্গ তার। ভেঙ্গে পড়া কোলাহলে নেমে আসে নীল
তারার আকাশ।
নিজেকে দাহ করার কাঠখড় খুঁজতেই ঝুঁকে পড়ে বাঁশ ঝাড়। শনশন
শব্দে হৃদয়ের টান গুলো জোনাকির পথ খুঁজে। উড়ে যায় অন্ধকারে। সেই শেষে নদীর সাথে
ময়লা হই। বন বাদাড়ে শুই।
তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে দিগন্তরেখা।
মগ্ন আলাপ
দীপ্তিময় রোদের নিচে দাঁড়িয়ে এক ধূসর নীরব আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল- বাঁকের ওপাশে যে
মানুষটি ধানখেত নিড়াচ্ছে তাকে চেন তুমি?
আমি বাঁকের মাঝামাঝি, পেছনে আমগাছ থেকে মুকুল ঝরে যাচ্ছে,
তলায় মাটিপোঁচের ইটের বাড়ি থেকে
ভরাট পুত্রবধুটি বালতিতে জাবনা নিয়ে দেশি গাভীর দিকে- পথে কিছুটা কচি ঘাসের আল্পনা, তার উপরেই ফড়িংয়ের জলপাই রঙের চোখ, সূর্যটা কতক্ষণ যে পুকুর টাকে ছুঁয়ে ফেলছে-
মাঝমাঝি দাঁড়িয়ে আছি নিরুপায়। সামনে ঢেঁড়স আর পুঁই ডাঁটার
বেড়ার ভেতর অবৈধ প্রজাপতি। জলসেচের অপেক্ষায় আটকে আছে উর্বরতা, সবুজ বাস্পে উড়ছে বকের অঙ্কন প্রনালি। আর মাঠের সাথে চলছে
মহাদেবের মগ্ন আলাপ-
আমি হেঁটে চলেছি সেই লাঙলের পেছন পেছন, উদোম গায়ে সূর্য মাখতে মাখতে লাঙলের মুঠি ধরে আছেন আমারই
পূর্বপুরুষ, পিতামহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন