বিদ্বেষ
ফতেমা লক্ষীর মেয়ের জন্য এই বাড়বাড়ন্ত গরমেও সোয়েটার বুনছে। শীত আসতে আসতে শেষ হয়ে যাবে আশা করছে। ওরা রোজকার সহযাত্রী পাঁশকুড়া লোকালের। পথ কাটাতে কাটাতে বন্ধুত্বেরও কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। এরকম বন্ধু ফতেমার বেশ কয়েকজন আছে, তবে লক্ষীর সাথে যেন বাড়াবাড়ি!
লোকাল ট্রেনের ভীড় নতুন কিছু নয়, যাত্রীরা নিত্য আনাজের মতো বোঝাই হয়। সুদেষ্ণা সেদিন তার নাইনে পড়া মেয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ডাক্তার দেখাতে। বাড়িতে কেউ দেখার নেই বলে, ফতেমা রোজ ছেলে নিয়ে স্কুলে যায়। সুদেষ্ণার মেয়েটি ট্রেনের দরজার কাছে এসে পিছিয়ে পড়ল। স্টেশন সামনে। সুদেষ্ণা অস্থির হয়ে উঠছিল এই বুঝি ভীড়ে মেয়েকে হারিয়ে ফেলবে। ফতেমা আশ্বস্ত করছিল, কিছু হবে ন্ সে ঠিক নামিয়ে দেবে। কিন্তু সুদেষ্ণা বলল, ও আপনার ছেলের মতো অতটা পাকা নয়। ফতেমা বলল, ট্রেন থেকে নামতে হলে পাকা হবার প্রয়োজন নেই। সুদেষ্ণা বলল, কি প্রয়োজন আর কী নেই আপনাকে বুঝতে হবে না, লম্বা নাক গলাতে আসবেন না। ফতেমা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল, তাহলে কি আমরা বড় বড় ছেলে মেয়েকে কোলে নিয়ে ট্রেন থেকে নামব?
বচসার কয়েক সেকেন্ড পর ট্রেন থামল দাশনগর স্টেশনে। সুদেষ্ণা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল ফতেমাকে উপযুক্ত জবাব দেবে। ফতেমা নেমে দাঁড়িয়ে হিজাব ঠিক করল কিছুক্ষণ, তারপর ছেলের হাত ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলে সুদেষ্ণা বলল, মুসলমানরা এরকমই হয়!
ফতেমার ঠোঁটে মেঘ।
তবে কোনো উত্তর দিতে পারেনি। বাবা একদিন বলেছিলেন, এসব কথার কোনো উত্তর দিতে নেই!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন