বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

তমাল রায়

ডি এন ডি


 ‘ডি এন ডি’ ডি-এক্টিভেট করতেই ভাদ্রমাসের বানের মত মেসেজ আসছে। ‘মায় একেলা হু। চটপটি বাত করনা হায় তো কল কিজিয়ে..., ‘মায় হু কাজল। পেয়ার কি বাত হো যায়ে....’ আপাতত ঋত্বিকের দিলখুশ। ক’দিন আগে এমনই এক ফোনের চক্করে ফেঁসে যেতে যেতে কি করে যেন বেঁচে গেছিলো। মা’টা মরে গিয়েই যত জ্বালা। কার সাথে কথা বলবে? কেউ তো নেই। বাপটা আছে। চাকরি বাকরি করে এত রাতে ফেরে যে, কথা বলার সময়ই নেই। তায় এক কাঁড়ি স্যর রেখে দিয়েছে। কেউ ড্রয়িং করায়। কেউ বা ইংলিশ। ঋত্বিকের এসব ভালো লাগে না। ও শুধু বিয়ে করতে চায়। কেউ তো একটা থাকবে। যার সাথে কথা বলা যাবে। বাপ একটা অফিসে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। সেখানে গিয়েও ঋত্বিকের ভালো লাগেনিসব্বাই গম্ভীর মুখে নিজের কাজে ডুবে। যদি বা কেউ কথা বলে তারা মজা লোটে। আর মজা ব্যাপারটা ভালোই। কিন্তু বেশী কি আর ভালো লাগে? মাথাটা গরম হয়ে গেলেই মুশকিল। ও খুব চীৎকার করে ফেলে বাবার সাথে মালিকদের চেনা। সে জন্যই চাকরি। কিন্তু মালিকরা বাবাকে জানিয়ে দিলো - আর লাগবে না, ওকে। দেখুন কাজ তো পারে না, চেষ্টাও নেই শেখার। কীসব ড্রয়িং খাতায় আঁকিবুঁকি করে, সিনোনিম এন্টোনিম মুখস্ত করে। তাও আপনার কথা ভেবেই রেখেছিলাম। কিন্তু এমন ভায়োলেন্ট হয়ে গেলে তো মুশকিল। অগত্যা ঋত্বিক আবার বাড়িতে। এখন ওর সাথে জয়শ্রীর প্রেম। মানে ঋত্বিক তেমনটা ভাবে আর কি! জয়শ্রী ওর কাছে বায়না ধরেছে একটা মোবাইল ফোন কিনে দিতে। অত টাকা কই। সে কথা বলতেই সে দিয়েছে ঋত্বিককে ব্লক করে। বাধ্য হয়ে ঋত্বিক ডি এন ডিটা ডি আজ ডি-এক্টিভেট করেছে। আর সাথে সাথেই লায়লার মেসেজ। ও ফোন করল। লায়লার সাথে ওর  ডেটিং আজ সন্ধ্যা সাতটায়, পার্ক স্ট্রীট, তন্ত্রার সামনে। মার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একটা নমস্কার ছুঁড়লো। বাবাকে ফোন। বাবা ফোনের ওপার থেকে খিট খিট করছে, আবার কি চাই? ইংলিশ স্যর আসার কথা সন্ধ্যে সাতটায়। তাকেও ফোন করলো, স্যর পোস্ত দেখতে যাচ্ছি। ফিরতে দেরী হবে। কাল আসুন প্লিজ। কথা বলার সময় ওর মুখ দিয়ে থুতু বেরোয় গামলা গামলা। স্ট্যামারিং তো আছেই। স্যর ফোন কাটলো। জিনসের ওপর হলুদ টি শার্ট আর পারফিউম মেখে বেরিয়ে পড়ল ঋত্বিক।

সন্ধ্যে সাতটার পার্কস্ট্রীট স্বভাবতই উজ্জ্বল খুব। ঋত্বিকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে লায়লা। ঋত্বিক আপাতত দাঁত বার করে হাসছে। লায়লাও হাসছে। হাতটা লায়লাই বাড়ালো। ঋত্বিক হাতটা বাড়াবো কি বাড়াবো না করতে করতেই বাড়ালো। কেমন আঠার মত লেগে হাতে, আটকে যাচ্ছে। লায়লা হাসলো, চকোলেট খাচ্ছিলাম হাতের মধ্যে নিয়ে... একটা দাঁত কি করে যেন ভাঙা। সেখান দিয়ে থুতু বেরোয় তারও কথা বলার সময়। ওরা হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে বসল এলিয়ট পার্কে।
লায়লাই কথাটা বলল,
-বিয়ে করবে আমায়?   
ঋত্বিকের খুব হাসি পেলো। বলল, গান গাইতে পারো? লায়লা বলল, হুম! গাইতে শুরু করল – মধুর আমার মায়ের হাসি মাকে মনে পড়ে... ঋত্বিক সাথে সাথে তাল ঠুকছে। আর লায়লা বলে চলেছে –
-   আমি না লায়লা নই। আমার নাম ঝুমা। ঝুমা সাউ। মা নেই তো! গায়ে  আগুন লেগে মারা গেছিলো মা। পাড়ার লোক বলেছিলো বাবা না’কি পুড়িয়ে মেরেছে। বাবা আছে। আছে মানে কখনও ফেরে বাড়ি, কখনো ফেরে না। খুব মারে আমায়, মদ খেয়ে ফিরলে। আমার তো মাথার  গন্ডগোল। তাই খুব চীৎকার করি। খুব একা লাগে আমার। ফোনে সারাক্ষণ ওই মেসেজগুলো আসতো,‘মায় একেলা হু। চটপটি বাত করনা হায় তো কল কিজিয়ে...’, ‘মায় হু কাজল। পেয়ার কি বাত হো যায়ে...’ পড়তাম আর খুব হাসতাম। ভাবলাম আমিই লায়লা হয়ে  যাই। তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?
-   ঋত্বিকের কি হল কে জানে। লায়লার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। লায়লা তখন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওমা ঋত্বিকও কাঁদছে...

অনেকদিন পর শহরে বৃষ্টি আবার। সোডিয়াম আলোগুলো বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে এলে কেমন জানি কনে দেখা আলো... ফাঁকা এলিয়ট পার্কের বেঞ্চে খুব কাছাকাছি দুটি ছেলে মেয়ে ভিজছে...

ওদের হয়ত বিয়ে হবে।

আপাতত স্টার্ট ডি এন ডি সেন্ট টু ১৯০৯।    


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন