শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

নভেরা হোসেন

বেদনার মতো

নিজেকে উজাড় করে ভালবাসলে
চারিদিকে ধুন্দুমার পলাশ ফুটেছে
তারকাখচিত রাতের আকাশে বিক্ষিপ্ত উল্কা
সময় আজ বদলে গেছে
তোমার তুলোর মত মন আজ অনুভূতিহীন
গায়ের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলেও  টের পাও না
আঙুল থেকে নখ উপড়ে নিলো কিছুই বললে না
চুল ছিঁড়ে দেয়ালে টাঙ্গানো হলো
এইসব নির্দয় বর্ণনার মতো তুমিও আজ নিষ্ঠুর এক
রবি ঠাকুরের গানেরা মাথার মধ্যে কিলবিল করে
বিক্ষিপ্ত আলো হাওয়া
কতকাল ভেসে চলে যায়
মন তবু কোন  অচিন নগরে
একবার আকাশ ছোঁয় অন্যবার আগুন
যে হাত একদিন ধরতে ছেয়েছিল প্রেমিকের হাত
সে হাত এখন সশস্র
এ যুদ্ধ কোনো এক ছায়ার বিপরীতে
মগজে ঢুকে থাকা যতসব রদ্দিমাল
আজ তোমাকে বানিয়েছে দুর্ধর্ষ
এ যেন নিজের বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করানো
আকস্মিক ঝলসে উঠলো হাতের অস্র
বিদ্ধ হলো নিজের প্রতিচ্ছবি


এপ্রিল ২০১৭

অনেক বছর পেরিয়ে গেছে
আরও অনেক বছর সামনে পড়ে
রবি বাবুর নতুন শতকও পেরিয়ে যাচ্ছে
আমরা এক পা মাটিতে আর এক পা আসমানে রেখে ঘুমাই
ঘুমগুলো লেক্সটানিলে পোরা
এখন প্রাকৃতিক বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই
সুন্দরবনের মধু মুখে দিলে চিনির মতো লাগে
অলঙ্কারের দোকান থেকে হিরের আংটি কিনলে
যেন কাচ দিয়ে বানানো
এ বছর বহু লোক জঙ্গিবিদ্যায় নাম লিখিয়েছে
তাদের বুকে ভেস্ত হাতে গ্রেনেড
কোনো এক জাদুমন্ত্র বলে সকলেই শহীদ হচ্ছে
রাষ্ট্র তাদেরকে ধরতে পারছে না
অন্যরাও দূর থেকে দেখছে
কেউ কেউ দর্শক হতে গিয়ে প্রাণ হারাল
জীবন এখন খুব সস্তা
প্রতিদিন হাজার হাজার লোক মরছে
মসুলে, প্যারিসে, তিকরিতে
তাদের গণকবর খুঁড়ে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না
লাশগুলো গায়েব
হাতের আংটি, গলার  চেন, চোখের মণি -
ডায়নিং টেবিলে এক প্রস্থ রক্তাক্ত উড়ু
তুমি দৌড়ে বেসিনে যাও
সেখানে কুয়ার মতো স্বচ্ছ জল
ভাসছে শত শত নরমুণ্ড
এসব দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে এলে
টেলিভিশনের চ্যানেল ঘুরিয়ে দাও
স্টার জলসা, সনি আট, ডিসকভারি
আজ উর্দু মাসালা চ্যানেলের সিজলার বিফ খুব সুস্বাদু হলো
চিকেন নাগেটসের সাথে ডাবল চিজ বার্গার
এসব বাচ্চাদের স্কুলের টিফিন
ভেড়ার পালের মত সবাই জেলখানায় ঢুকছে
সেখান থেকে মাথা মুড়িয়ে আবার বেরিয়ে পড়ছে
বাচ্চাদের মায়েরা ছাতা হাতে তৃষ্ণার্ত চাতক
বছরগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে চলছে
অনেক ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ
অনেক এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার, নাট্যশালা
ভাস্কর নভেরাকে নিয়ে নাটক হচ্ছে
বুদ্ধিজীবীরা একেকজন একেক ছাতার নিচে
কেউ জানে না কারো খোঁজ
ঝাঁকে ঝাঁকে সাহিত্য পুরস্কার
তোমার হাতে আর্টিফিশিয়াল মেহেদী
দেশে ধানের বাম্পার ফলন, চৈত্রে বৃষ্টি –
এসবও পুরনো হচ্ছে
কয়েক দশক পেরিয়ে গেল
কিন্তু বয়স যেন থেমে আছে
তুমি যে বছর মারা গেলে তার পরের বছরই তুফান হলো
ছবিটা দেয়ালে আটকে আছে
নীল অপরাজিতা বারান্দার টবে
এসবও পুরনো হচ্ছে
নতুন বৃষ্টি তোমার কবরকে ধুয়ে দিচ্ছে
তুমিও ভাবছ নতুন শতকে  শুঁয়োপোকা হয়ে জন্মাবে নাকি?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন