শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

অপরাহ্ণ সুসমিতো

বৃষ্টির লোপামুদ্রা বা ধ্রুপদ খাঁ সাহেব

উপস্থাপক মাইক্রোফোনে আমার নাম ঘোষণা করতেই দর্শক আসনের আলো নিভে গেলএই জীবনে এত কবিতা পড়েছি অনুষ্ঠানে তবুও নাম ডাকবার আগে এক  ধরনের টেনশন কাজ করেুকের কাছে জ্যোৎস্নার মতো হু হু শূন্যতা হয়টের পাইমাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতে টের পাই দর্শক আসনের সারি সারি অন্ধকার মুখ আর উৎকীর্ণ চোখ

সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরুবার মুখে তোমার ছোট্ট ফুটফুটে টেক্সট এলো :

তুমি যখন কবিতা পড়,
চারপাশে হানা দেয় সবুজ সন্ত্রাস

অফিসের গাড়িকে বলেছিলাম সন্ধ্যায় আমাকে ড্রপ করে দিতে
গাড়িতে ওঠার সময় এক উঠতি ছোকরা আমাকে দেখে লারে-লাপ্পা টাইপ শিষ দিলগাড়িতে  ওঠার মুখে মিররে তাকিয়ে দেখি আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছেড্রাইভার বলল : ম্যাডাম, চলি?

যখন চেয়ে মানুষ কিছু পায় না
, তখন দেখা যায় না চাইলে সব পাওয়া যায়সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকা ভালো সেঁচে মরে লাভ নেই

গাড়ি চলতে শুরু হলে ঘন মিহি বৃষ্টি। মন দমে যায়। বৃষ্টি হলে দর্শক আসবে তো?

তোমার টেক্সটটা আবার পড়িধুলোর মতো সন্ধ্যা বৃষ্টি আরো জুড়ে বসে। আমার চায়ের তেষ্টাটা জেঁকে বসে। ইশ চা চাই চা

তোমাকে টেক্সট করতে লেগে যাই বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে :

বাপী চাস্মিন্ মরকতশিলাবদ্ধসোপানমার্গা
হৈমৈশ্ছন্না বিকচকমলৈঃ স্নিগ্ধবৈদূর্যনালৈঃ
যস্যাস্তোযে কৃতবসতযো মানসং সংনিকৃষ্টং
ন ধ্যাস্যন্তি ব্যপগতশুচস্ত্বামপি প্রেক্ষ্য হংসাঃ

আমি জানি এটা পড়ে তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে অর্থ না বোঝার কার
ণেহিহিহিহি 

ভীরু পায়ে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতে আবার তোমার কথা মনে হলো। আচ্ছা বলো তো এর কোনো মানে আছে? কোনো মানে নেই। কী কান্ড!

যোজন দূরত্বে চাঁদ বসে থাকে আকাশ দিয়েছে অন্য মাধবী চন্দ্রদ্বীপ
আমি তবু খোঁপা করা নবনীতা বেলী ফুল
বৃষ্টি তবু না থামুক আজ,দূরের টলটল মেঘদূত
শোনো তুমি আজ আমার কবিতার ধারাপাত

আজ আমার সন্ধ্যার সাজ কী যে সুন্দর যামিনী রায়আমি চোখ বন্ধ করে আবৃত্তি শুরু করি। মনের গহীন থেকে উঠে আসা শব্দবাইরে কি এখনো মাধবী বৃষ্টির লোপামুদ্রা নাকি ধ্রুপদ কোনো খাঁ সাহেব?

কে জানে!


1 টি মন্তব্য: