মাছের বাড়ি
অরবিন্দ ঘোষ হেঁটে যাচ্ছে। হাতে একটি বাঁকানো লাঠি পায়ে কেডস্, ঈষৎ ঝোঁকানো শরীরে মাথায় সাদা টোপা। মঙ্গলবার বেলা এগারোটার রোদ্দূর। দূরে আম গাছের
ডালে ঘু ঘু কূহর কেটে যাচ্ছে একটানা। অরবিন্দ ঘোষ কি এখন
মর্নিং ওয়াকে
বের হয়েছেন? নাকি কি ভেবে গত বর্ষা থেকে এমন হাঁটার অভ্যাস! রিটায়ার করার পর
আঠেরোটা বছর নিরুপদ্রবে কাটিয়ে যখন তাঁর আরও আটটা মাস বাকি লাফিং ক্লাবের মেম্বার
হতে এবং বাতাসে পাকা কুলের গন্ধ যখন ফিকে মেরে এসেছে , সেই ফেব্রুয়ারী মাসের কোনো
এক মঙ্গলবারে বরুণ দেখল অরবিন্দ ঘোষ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ।
এই
একটু আগে অব্দি অরবিন্দ ঘোষের গল্পটা পড়ছিল বরুণ। এবং গল্পটা পড়বার সাথে সাথেই
গল্পটা আর পড়বার প্রয়োজন নেই এটাও মন দিয়ে ভাবছিল। টেবিলের ওপর গোবি মরুভূমি সাইজের বড় খাত,
তাতে সারিবদ্ধ গল্প লাইন করে এ দিগন্ত থেকে পাড়ি দিয়েছে ও দিগন্ত পানে। প্রত্যেকটা গল্পের শেষে যেখানে রয়ে গেছে কাচ
বসানো ঘাঘরা পরিহিত জিপসী মেয়েদের এক টুকরো করে নাচ বোলিয়ে...। এর মানে কি বরুণ জানে। প্রতিটি গল্প ঝমক তুলে গিয়ে শেষ হয়েছে যেখানে একটি
করে যাবজ্জীবন
প্রশ্ন দাঁতে দাঁত পিষে র্যাপিড ফায়ার অ্যাকশন পর্ব শুরু করে দিয়েছে বরুণ তথা
সমস্ত পাঠক কুলের উদ্দেশ্যে।
সুতরাং গল্প না গল্পের অসংগতি ঠিক কোন বিষয়ে লিখবে বরুণ তাই এখনো এই মঙ্গলবার বেলা
এগারোটা পর্য্যন্ত জেনে বুঝে উঠতে পারেনি। যদিও খাতায় লেখা অরবিন্দ ঘোষের গল্পটা জলবৎ
সরল। ভারতীয় উপ মহাদেশের অগ্নিযুগ, আলিপুর বোমার
মামলা, শ্রী অরবিন্দ ঘোষের নাতি দীর্ঘ বিচার, দীর্ঘ মেয়াদী কারাদন্ড, দন্ডোকারণোত্তর
পর্বে তৈতিরীয় উপনিষদ অনুসারে আনন্দেধ্বো খল্বিমানি
ভূতানি জায়তে... পন্ডিচেরী আশ্রমের সূত্রপাত ইত্যাদি ইত্যাদি...
সুচিন্তিত কিছু মতামত লিখে ফেলার
আগেই বরুণের কপালে ভাঁজ পড়ে। না, এখানে কোনো নতুন জিনিষ সে তৈরী করতে পারেনি। এ গল্পের সবাই সবটা জানে এবং সবাই যেটা জানে না
তার জন্য অপেক্ষা করেছে বরুণ তার নিজস্ব গোবি মরুভূমির মাঝে একলা দাঁড়িয়ে।
ফলে
এগুলো নিয়ে সারাদিন গভীর চিন্তা করে গেছে বরুণ, অরবিন্দ ঘোষ তৈতিরীয় উপনিষদ from Delight being are born, by Delight they
exit and grow, to Delight they return... এবং লেড়কী আঁখিয়োসে
গোলি মারে...। গল্পের অজানা দিকটুকু
অনাবিস্কৃত দিকটুকু যে করেই হোক লিখে ফেলতে হবে। আর সেটা লিখে ফেলতে হবে আজই এক্ষুনি। এজন্য সে আজ তিনদিন দুপুরের শর্ট ব্রেকে চা চিঁড়ে
ভাজা না খেয়ে বরং ঐ সময়টায় বিভিন্ন তথ্য দিয়ে গল্পটাকে সাজিয়ে গেছে মন দিয়ে। ফলে শেষ অব্দি সব গল্পগুলোই এক সমতল চত্বরে এসে বসে পড়েছে হাত ধরাধরি করে,
দেখে ঠিক মনে হয় কারুর কাছেই কারুর কোনও ঋণ নেই। এটা সেই জায়গা যেখানে সব কোলাহল থেমে গেছে। মিলিয়ে গেছে সমস্ত অস্ফূট
প্রশ্নবোধক গুঞ্জনধ্বনি। প্রতিটি শব্দের গায়ে একবার করে পরম মমতায় আঙ্গুল বুলিয়ে বরুণ দেখে নেয় কোথাও কোনো
অসংগতি রয়ে গেল কিনা! দেখল দুনিয়ার সব তৈতিরীয়
উপনিষদ সমস্ত অরবিন্দ ঘোষকে সে অতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পেড়ে ফেলতে পেরেছে নিজের খাতায়।
দেখতে দেখতে পাথুরে ভাস্কর্যের মত বুঁদ হয়ে যাচ্ছিল আর ঠিক
তখুনি তার চোখে পড়ল বাইরে রাস্তা দিয়ে ধীর লয়ে লাঠির ঠুকঠুক শব্দ তুলে সময়ের
সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে আটাত্তুরে প্রতিবেশী শ্রী অরবিন্দ ঘোষ। মুহূর্তে সমস্ত শতাব্দীকে সচকিত করে পারমাণবিক অতি পারমাণবিক বিভ্রান্তিরা ছুটে আসে বরুণকে আক্রমণ করবে বলে! ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের মত সোঁওওওও শব্দ তুলে এক লহমায় দ্রুত বাইরের
রাস্তায় পৌঁছে যায় বরুণ।
আপনি
এখন কোথায় যাচ্ছেন? আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন? আপনি এখন কোথায় যাছেন? আপনি এখন কোথায়
যাচ্ছেন?
আমি
একটা গল্প লিখে শেষ করেছি। আমি একটা গল্প লিখে শেষ করেছি। আমি একটা গল্প লিখে শেষ করলাম এই মাত্র।
ওহ্!
গল্প শেষ করলে? তা ভাল! কিন্তু তোমার কি হয়েছে বরুণ? সবাই বলে বটে তোমার নাকি অসুখ করেছে। সেটা কি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন