কালিমাটি অনলাইন / ৪৩
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে আজকের প্রজন্ম যেসব অভূতপূর্ব
সুযোগ ও সুবিধে অনায়াসে আয়ত্ত্ব করে তার ব্যবহার করতে পারছে, আমাদের কৈশোর, প্রথম যৌবন, এমনকি উত্তর যৌবনেও তা ছিল না। সেই সময় আমদের অনেক কিছুই ছিল না – যেমন টিভি ছিল না, ডিভিডি ছিল
না, মোবাইল ফোন ছিল না, কমপিউটার
ছিল না। এবং আরও অনেক অনেক
কিছুই ছিল না। তবে রেডিও ছিল, তাতেই আমরা খবর শুনতাম, গান শুনতাম,
নাটক শুনতাম, খেলার ধারা বিবরণী শুনতাম। দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য চিঠি লিখতাম। সিনেমা দেখার জন্য যেতাম সিনেমাহলে, খেলা দেখার জন্য মাঠে ময়দানে। বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের গান শোনার
সুযোগ ঘটত বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জলসায়। আর ঘরে গ্রামাফোনে ‘রেকর্ড’ বাজিয়ে প্রিয় শিল্পীদের গান শুনতে শুনতে
বুঁদ হয়ে থাকতাম। আমাদের মধ্যে
যাদের সাহিত্যচর্চার উৎসাহ ছিল, নিজেদের
তাগিদেই বিভিন্ন লেখকের বই সংগ্রহ করে পড়তাম, সাহিত্যের আড্ডায় ও অনুষ্ঠানে
উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতাম, নিজস্ব লেখার তাগিদে লিখতাম। কিছু একটা লিখলেই লেখাটা
অন্যকে পড়ে শোনানোর জন্য মুখিয়ে থাকতাম, আর প্রকাশ করার উপযুক্ত হয়েছে মনে করলে
পাঠিয়ে দিতাম বিভিন্ন মুদ্রিত পত্র পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে। এবার অপেক্ষা,
শুধুই অপেক্ষা, কবে আসবে সেই লেখাটির মনোনয়ন অথবা অমনোনয়ন সংবাদ। অমনোনীত হলে ভীষণ
মনখারাপ, আর মনোনীত হলে ছাপার অক্ষরে নিজের নাম ও লেখাটি দেখার জন্য আকুলতা।
আজকের কাছে অবশ্য এসবই নেহা ৎই অকল্পনীয়
ব্যাপার-স্যাপার। যদিও একথা ঠিক যে, এখনও কোনো মুদ্রিত বা অনলাইন পত্রিকায় লেখা প্রকাশের
জন্য ‘সম্পাদক’ জাতীয় এক ধরনের জীবের
ভালোলাগা বা না লাগার জন্য লেখককে হা পিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়; বিশেষত সেই
‘সম্পাদক’ জাতীয় জীবটির আদৌ কোনো বিচারযোগ্যতা আছে কিনা, এই ভাবনাটাও সমানেই
মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায়। কিন্তু শুরুতেই যে
কথাটা বলেছিলাম, আজকের উন্নততর প্রযুক্তির কারণে বর্তমান প্রজন্ম এই সমস্যা
ও পরমুখাপেক্ষিতা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। কেননা এখন
মুদ্রণব্যবস্থা এতটাই সহজসাধ্য হয়ে উঠেছে, যে কোনো সাহিত্যযশঃপ্রার্থী কোনো পত্র
পত্রিকায় লেখা পাঠানোর ঝামেলায় না গিয়ে নিজেই একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের
ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা যথেচ্ছ প্রকাশ করতে সক্ষম হচ্ছেন।
আবার আন্তর্জালের ব্যাপক সুবিধের ফলে নিজেরাই অনলাইন পত্রিকা ‘লঞ্চ’ করে নিজেদের
লেখা ‘আপলোড’ করে দিতে পারছেন। আবার যারা
প্রযুক্তির এত সুযোগ সুবিধে থাকা সত্ত্বে নিজেরা ঝাড়া হাত-পা থাকতে চান, তাঁদের
জন্যও সাজানোই আছে ‘রেডিমেড’ ব্যবস্থা। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেমন ফেসবুক,
নিজের ‘ওয়ালে’ নিজের লেখা অনায়াসে পোস্ট
করা যায়, যা সেই মিডিয়ার বন্ধুদের কাছে সহজেই পৌঁছে যায়। লেখা মনোনয়নের জন্য কোনো
সম্পাদকীয় বাধাও থাকে না। আগ্রহী বন্ধুরা সেই লেখা পড়ে তাঁদের অভিমত জানান বা জানানো প্রয়োজন মনে করেন না। সে
যাইহোক, মোদ্দা কথা হচ্ছে, এখন একান্তে কিছু লেখার পর তা নিজের কাছে লুকিয়ে রাখার
কোনো জোরালো যুক্তি নেই; বিশেষত লেখক স্বয়ং যদি মনে করেন তা পাতে দেবার
যোগ্য, তা তিনি দিতেই পারেন। যারা পাত পেতে বসে আছেন তারা নিজেদের রুচি অনুযায়ী তা
গ্রহণ করতে পারেন, সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি প্রয়োজন মনে করলে কিছু আলোকপাতও করতে পারেন। এবং এই দৃষ্টিকোণে
ব্যাপারটা ভেবে দেখলে একথা বলা যেতেই পারে যে, সাহিত্যের ক্ষেত্র এখন আগের থেকে ব্যাপক
হয়েছে এবং লেখক ও পাঠক সরাসরি একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে পারস্পরিক মত বিনিময় করতে পারছেন। এবং এটা নিঃসন্দেহে সম্ভব হয়েছে আজকের
উন্নততর প্রযুক্তির কল্যাণে। ‘কালিমাটি অনলাইন’
ব্লগজিন সবাইকে জানাচ্ছে সমাদর ও শুভেচ্ছা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ
করা যেতে পারে, এই সংখ্যাটি প্রকাশের সঙ্গে শুরু হলো ‘কালিমাটি অনলাইন’এর পঞ্চম
বর্ষে পদচারণা। আপনাদের সবার শুভেচ্ছা ও সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
দূরভাষ যোগাযোগ :
0657-2757506 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal
Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road,
Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন