রেললাইনের ক্রস এন্ড নাট
অঙ্কুশ
হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে থাকে মাঝে মধ্যে। ধুলো
ধোঁয়ায় প্রাণভরে শ্বাস নেয়। নিচে ট্রেন ও
মানুষের যাতায়াত দেখে। আঁকাবাঁকা লাইন পেরিয়ে ভাঙ্গা পাঁচিলের মধ্যে
দিয়ে কত যে মানুষ যাচ্ছে আসছে!
অঙ্কুশ বহু বছর আগে ঐ মালগাড়ি যাবার স্থান দিয়ে যাতায়াত করত যখন রূপা সঙ্গে থাকত। হাওড়া গার্লস কলেজে ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী ছিল রূপা। কী স্বাস্থ্য, মাজা রং আর চটপটে! ইংরেজি নিয়ে পড়াটা অঙ্কুশেরই আগ্রহের ফল। অঙ্কুশের বাড়ির পাশে মেয়েদের একটা উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপা পড়ত যখন ক্লাস ইলেভেনে, তখন থেকে পরিচয়। পরিচয় হয়েছিল স্কুলের জানালার সঙ্গে বাড়ির জানালার। অথচ অঙ্কুশকে ওভারটেক করে বেরিয়ে গেল পরিচিত দেবজিত নামের ছেলেটি। দেবজিত চার্টার্ড একাউন্টেট। রূপাকে অঙ্কুশ এজন্য কোনো দোষ দিতে পারে না। একটা নামকরা প্রেসে চাকরি করে অঙ্কুশ, শহরতলি এলাকায়। রামনবমীতে ধুমধাম করে রামপুজো হয়। রূপার ফার্স্ট ইয়ার পড়া অব্দি প্রেম স্থায়ী ছিল। রূপা অনেকবার শীর্ষ আনন্দ চেয়েছে অঙ্কুশের কাছে। সুযোগ করেও দিয়েছে। কিন্তু অঙ্কুশের নৈতিকতায় বেঁধেছে। ও শুধু রূপার মুখটা হাতের তালুতে চুমু দিয়েছে। ব্যাস! চাওয়া পাওয়ার ঐ সংঘাত আর ভারসাম্যহীনতা থেকেই ওরা দূরে সরে গেল। শুধু রেললাইনের মতো ভারি কিছু উক্তি স্থায়ী রয়ে গেল তার মনে, আর সেগুলোই তাকে এই সেতু অঞ্চলটাতে ঘুরিয়ে মারে।
আচমকা একদিন অঙ্কুশ দ্যাখে, মাথায় সিঁদুর কোলে বাচ্চা মেয়ে নিয়ে রূপা তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘আচ্ছা এখানে কাছাকাছি কোথায় খেলনার দোকান আছে বলুন তো? মেয়েটা বায়না করছে তখন থেকে... চলুন না আমার সঙ্গে, একটা কথাবলা পুতুল কিনে দেব... হাত পা নাড়িয়ে ও বলবে ‘রেপ অফ দ্য লক’। মানেই আজকালকার বিশ্রী রেপের ঘটনা নয়... আরাবেলার রেপ শব্দটা শুনে খচে যাওয়া রক্ষণশীল ইনজিনিয়ার কাকা আর কখনও চিৎকার করবে না কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে, এসব বই কখন আমি কিনব না। তোমাকে ইংরাজি অনার্স পড়তে হবে না... ওহ তোমাকে যেতে হবে না আমি অঙ্কুশের সঙ্গে যাব... রূপার হাত ধরে অঙ্কুশ সিঁড়ি বেয়ে নিচে রাস্তায় নেমে যাচ্ছে... রূপাই তো?
রেপ অফ দ্য লক
উত্তরমুছুন