শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

তমাল রায়

কাব্যে উপেক্ষিত


পাখিভোর যখন সকালের ট্রেনে চেপে এসে পৌছলো, তখনও কুয়াশা অনেক আর তিনি চলে গেলেন শীত এখানে মাধুকরী কপোতাক্ষ নদের নাম আর ভুসোকালি মাখা দেওয়ালে যে গল্প লেখা হয় তার নাম রান্নাঘর আলোগুলো ল্যাম্পপোস্ট জুড়ে জ্বলছে রাস্তা শুয়ে আছে যেমন থাকে রোদ্দুরের গাড়ি লেট প্রাণগুলো ইতিউতি জেগে ওঠার চেষ্টায় এখনও আড়মোড়া ভাঙছে সময়েই সুসংবাদেরা আসে, পরিযায়ী পাখি হয়ে আতাগাছে তোতাপাখি ডালিম গাছে মৌ, সারারাত আলো জ্বলে, এই তো নেভার কথা! ঘরের কথা বলছিলাম চিলেকোঠা আত্মজীবনীর পাতাগুলো তো এখানেই, শব্দের পর শব্দ হয়ে বসছিল অবশ্য শব্দ থেকে শব্দের মধ্যে আগে বসে পান চিবুতেন ছোটপিসিমা মা জাঁতি বার করে সুপুরি কাটছে পাশে রাখা লক্ষ্মীর পাঁচালি সুর হয়ে পুরু হলুদ দুপুর, যদিও এখন নিতান্তই শৈশবীয় সকাল... আর খইও নেই, ছাইও অথচ তিনি ছিলেন

সেই র‍্যাম্পাটে বসে খেলা দেখা মনে পড়ে? গোওওল! আর চীৎকারগুলো আকাশ  ছুঁচ্ছে রিকশায় পা-এর ওপর পা তুলে লম্বা দোহারা চেহারা, আনমনে ধোঁয়া ছাড়ছে ইতিহাস বলে সেই মানুষকেই মনে রেখো, যে বিজয়ী গল্প এক বেরসিকের, যে চা খেলেও তেতো, মিষ্টি খেলেও তেতো, সর্বজয়ারা কী করে যেন নিশ্চিন্দিপুরেই সেঁধিয়ে  গেল অলখনিরঞ্জন একটা প্রকৃত মিথ্যা যদিও এবসলিউট মিথ্যা বলেও কিছু হয় না মিথ্যে তো প্রকৃত একপেয়ে সারসের মতো চোখ বুজে সংসার করছে, আর খেয়াল রাখছে মাছের গতিবিধি তিনি গানের দেশে গান, আলোর দেশে অন্ধকার, হাওয়াই চপ্পল ফটর ফটর করে তিনি গৌরবর্ণ, উন্নত নাসিকা, বৃহৎ ললাট নিয়েও ভাগ্যতাড়িতের মতো উপুড় হয়ে খাতা জুড়ে কাটাকুটি খেলায় ব্যস্ত কিছুপর  হাফবয়সী শৌভিক আর অনন্ত আসলে প্রাণ খুলে হাসবেন যারা অগ্রজ তাদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেবেন অগ্রাহ্যতা সমবয়সীরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় জিতে যাচ্ছে আজন্মই যেমন হয় কুমীরডাঙা খেলায় তিনি আলো খাচ্ছেন লিখছেন গর্ভ, তিনি আঁধার খেলে লিখছেন সিঁড়ি উড়োজাহাজ ভেসে গেলে, ছায়া দেখছেন জলে, স্থির কালো এক বিন্দুর দিকে এগোতে গিয়ে এই প্রথম দেখলেন সাইকেল চালক বালককে

ইরেজার না ঘষলেও জীবন কেন জানি আপনা থেকেই রঙচটা সে সব হাফপ্যান্ট আর গামছা গায়ে চা খাবার সকালের গায়ে কেবল ঝুলে আছে উপবীত ব্রাহ্মণ্যবাদে অবিশ্বাসী হলেও তিনিই একক এবং পূজারি কেবল ঈশ্বরী তার ওপর বিমুখ দুপুরের সংসার ধারাপাতে যৌনতা ফুরোলে তো পড়ে থাকে আঁশ, কাঁটা, এঁটো জীবন এবার হয়তো খাতায়  এসে বসবে বোর্নভিটার মতো পুষ্টিময় তাচ্ছিল্য বৃষ্টি লিখলে  কাঁটাতার আঁকবে ভাস্বতী সময়ে রক্তপাত প্রবল ভূমিকম্প, খরা আর অপ্রস্তুত বানভাসি এখন ছিটিয়ে ছড়িয়ে ফ্যাকাশে রক্তেরা আ-মরি বাংলা ভাষার বুকে ঝুলে থাকবে লঙ্কা, লেবু, বুড়া নজর বালে, তেরা মু কালা আপনা হতেই ভেসে যাচ্ছে কবিতার খাতা জুড়ে সিন্ধবাদ নাবিকের পাল ভেসে যাচ্ছে কম্পাস সেই সারনাথেই লাস্ট দেখা যায় আন্তোনিয়োনি রেড ডেজার্ট না বানালে জানতাম মরুভূমি শুধু ধূসর পীতবর্ণের আর তিনি শিক্ষক ছিলেন গান ভাঁজতেন গলায় অশ্রুত সে সব গানে কুকুর হেঁটে বেড়াত ছায়া হয়ে শিস দিতে দিতেই তাকাতেন আমাদের সিঁড়িগুলো, আলোদের উঠে যাওয়া বা নেমে আসা ভেঙে পড়া প্রাচীন ঐতিহ্যের গায়ে হাত রাখলে ফোটো ফ্রেমে বিষাদ বেজে উঠত সেই সব নির্জন উপক্রমণিকা জুড়ে কি করে যেন কুয়াশার জন্ম হতো, যেমন আজ সকাল শিশির যা ভিজিয়ে দিয়েছে ফুল  আর পাতার বন্ধুতাকে কান্না না ভাবলেই হয় মানুষ মূলত দু’প্রকার, কেউ মুখ দিয়ে কথা বল্‌ কেউ পায়ু অভিমানী শব্দকে ব্যঞ্জন বা স্বরবর্ণে বিভাজিত না করাই  শ্রেয়, তা হলে খই আর ছাই কি লিখবে নীরস শোকপ্রস্তাব?

আরব সাগরের তীরে যে আলোকসজ্জা, বঙ্গোপসাগরে তাই নিভৃত গোপন আস্তানা বানিয়ে দিব্যি বসবাস শুরু করলে কী করে যেন কচুরিপানা ভেসে আসতো  ব্যাকওয়াটারে তিনি কেউ ছিলেন না, কথা লিখতে গেলে কলমের কোনো দোষ ছিল না কলমও তো সাহসীর অসি ভীতু, দলছুট, একবগগা পাগলা অথচ অসহায় দধিচীর কেবল পুড়তে থাকাই, খাক হয়ে যাওয়া গলির গলি তস্য গলি, সরু অন্ধকার সিঁড়ি বেঁকে গিয়ে হারিয়ে গেল চিলেকোঠায় এরপর উত্তুরে হাওয়ায় পরস্পর বিপরীতমুখে বসে থাকবে মা, ছোটপিসিমা, বোন, নুব্জদাদু, হেরে যাওয়া বাবা, আর পাতা আর অক্ষর চলাচলে অরণ্যের গভীর হতাশা তিনি ছিলেন, আশ্চর্যজনক হয়েই তিনি ছিলেন বিষাদের ভাই, বন্ধু বা স্বামী হয়েই কেবল মার্বেলগুলি খেলতে গিয়ে দেখা হয়ে গেল মৎসকন্যার সাথে, নাম দিলেন কোপাই ওই শ্বাস সন্ত পৃথিবী জুড়ে সান্টাক্লজ তখন, আলো হয়ে মিশে যাচ্ছে আত্মজার সাথে দেখ নদী জুড়ে জল কোপাই বুঝি ঘুম ভেঙে উঠে সুরুল পেরিয়ে, ভুবনডাঙা পেরিয়ে ময়ূরাক্ষীতে মিশছে, প্রাণ জাগলে, অক্ষরের ছুটি... তবু, ওই যে ঝিকিয়ে পড়া উঠোন, পাতা পরে আছে, শ্যাওলার মতো বেঁচে থাকা, আর পাঁচিল ফাটাচ্ছে অশ্বত্থ খেলা বা ধুলো,
ছোটপিসিমার গল্প হয়ে ওঠা, আলোকে কামড়াতে আসছে আলো ঘনিষ্ঠের মতো, তিনি বেছে নিচ্ছেন আঁধার, এরপর শ্মশান, ঘেঁষের মাঠ, গঙ্গার বুকে নৌকো লাফাচ্ছে, পরে যাবার সময় যে শব্দ কাঠআর জলের সংঘর্ষে, তাকে খাতায় লিখতে গিয়েই শেষ হলো চারমিনারের প্যাকেট আসলে, না লিখতে পারাগুলোই কবিতা হয়ে ওঠাগুলো নিউমার্কেট, সান্টা আসলে বড়দিন আসে অযাচিত গিফট রাখা থাকে বালিশের তলায় সেই সব নিয়েই তিনি হেঁটে চলেছিলেন নিরুদ্দেশে তখন ভোর অথবা ভোরের মতো চিলেঘরের আলোটা জ্বলছিল ঘুমাচ্ছিল সহস্র বৎসরের সঙ্গীনি, আদর করে যার নাম রেখেছিলেন মেমসাহেব, তার বুকের মধ্যে নিশ্চিন্ত ঘুমে কুঁড়ি বীজের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র রেখেই, খাতায় আঁচড় উঠলো, এরপর ঝড়, মৌসুমি বাতাসে তখন নিম্নচাপের আভাস না তেমন কিছু হয়নি হয়ও না সচরাচর ভিজে আয়নায় গামছা জড়ালে কেবল কোথা থেকে ভেসে আসে জলোচ্ছাস 'ফিট উচ্চতায় কী করে বিষণ্নতার মেঘ উঁকিঝুঁকি দেয় বেড়াল ডিঙলো পাঁচিল, জানালাগুলো কেবল পড়ছিল দুমদাম আলো জ্বলছিল রাস্তা দিয়ে কেবল হেঁটে যাচ্ছিল কেউ, যার ছায়া নাই... ধর একটা রিকশা, পায়ের ওপর পা তোলা, ঠোঁটে সিগারেট, আর গান, অশ্রুত গান আর তাতে কুকুরের ছায়া পড়ছে যাতে

খইও নেই ছাইও অথচ তিনি ছিলেন নইলে দু’মলাট তাঁকে বাঁধতে পারেনি কেন, আজন্ম...! রোদের গাড়ি এসেছে, অথচ এত নির্জন কেন এ সকাল, আজ কি তবে ছুটির দিন, আগে থেকেই জানতেন তিনি?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন