ধর্ষক
ও
মা, ওরা ছেলে কেন? ওরা যে কেবল ধর্ষক।
ইজ্জত
নিয়ে টানাটানি করে,
মেয়ে শরীরের দর্শক।
ও
মা, ওরা পুরুষ কেন? ওরা কি বীর্যবান?
ওদের
বোধহয় অন্য জাত, ওরা শক্তিমান।
ও
মা, ওরা কি কা-পুরুষ তবে? নাকি চতুর্থ
সেক্স?
ওদের
লিঙ্গ বোধহয় আলাদা,
পাইরেটেড, ট্রিপল এক্স।
ওরা
ধর্ষক, লোমহর্ষক, নারীর শরীর ওদের কাছে বড়ই চিত্তাকর্ষক!
ওরা
যে একটা ক্লাস!
ওদের কাছে নারীর শরীর নিছক কাচের গ্লাস!
কন্যে
আমি
আবার
আমায় নাও না কোলে তুলে কিম্বা না হয় ঠাঁই দাও
মাগো তোমার জরায়ুতে,
এবার
দশ-মাস দশ-দিন নয়, থাকব মাগো
সারাজীবন ধরে।
এই
সমাজের চেয়ে বোধহয় ভালো ছিল তোমার পেটের ভেতরটা,
শোণিত-লোহিতকণার
মাঝে রক্তমাংস'দলাটা।
তবুও
তো আমি সুরক্ষিত সেখানে
ভিতর-বাহিরে
অন্তরে অন্তরে ঠিক যেমনি ছিলাম
তোমার
মনের মাঝখানে।
কেউ
কথা রাখল না
সেই
ছোট্টবেলায় ঠাম্মা বলেছিল,
শ্বশুরবাড়িতে সকলের কথা শুনতে হয়, সকলকে
মান্যি করতে হয়... কিন্তু ঠাম্মা! আমি
তো নিজের সবটুকু ছেড়ে দিয়ে বাধ্য বৌ হলাম তবুও কেউ কথা রাখল না
যে!
মা
সেই কবে থেকে শিখিয়ে এসেছিল, কারোর দোষ দেখো না
কখনো, কেবল নিজের দোষ দেখবে, তাহলে শান্তি পাবে, শ্রীমা বলে গেছেন। কিন্তু মা, আমি কিন্তু তোমার কথা
রেখেছি, ওদের আপন করতে চেয়েও পারলাম না বড়, ওরাই যে শুধু আমার দোষের ঝুলি ভর্তি করে ঘরের কোণ বোঝাই করল!
ভালোবেসেছিলাম যাকে সে বলেছিল আমাকে ছেড়ে যাবে না
কখনো, কিন্তু ও কথা রাখার আগেই অন্য দেশে
পাড়ি দিয়েছিল। আবারো কথা রাখল না সে।
বাবা
বলেছিল যতদূর ইচ্ছে ততদূর তোকে পড়াব, কিন্তু ভালো
পাত্র পেয়েই বাবা আমাকে বিয়ের
পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করেছিল। কথা রাখেনি বাবাও।
গড়িয়াহাট
নার্সারীর একটা চেনা ফুলওয়ালা প্রতি বছর আমার
ছাদবাগানের শীতফুল দেয়। প্রতিবছর রাজগাঁদার নাম করে আটপৌরে গাঁদা দেয়। বেজায় দাম
নেয়, আমার কাছ থেকে। আমি ওকে বিশ্বাস করি প্রতিবার, কিন্তু ও কথা রাখে না।
ঠিক
যেমন বদল হয় রাজনীতির রং। আমরা ভালোবেসে একজন কারোর হাতে সঁপে দি রাজ্যপাট, ভাবি
কত কিছু নতুন চমক আসবে রাজ্যের, বদলে যাবে সবকিছু নিমেষের
মধ্যে। কথা রাখে না
কেউ।
শিল্প, স্বাস্থ্য,
শিক্ষা, বেকারত্ব, পথঘাট
সর্বত্র যেমন হাহাকার ছিল তেমনি থাকে, কেউ কথা রাখে না
শেষমেশ।
কথা
রাখেনি পাড়ার প্রোমোটার। সস্তার নোনা বালি দিয়ে আমার শখের ফ্ল্যাটটা বানিয়ে দিল।
তিলতিল করে জমানো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলাম। কয়েক বছরেই বালি খসে, নোনা
ধরে আমার ফ্ল্যাট শ্রীহীন হয়ে পড়ল। আবারো কেউ কথা রাখল না।
ঠিক
যেমন এদেশে বসে বারব্রত করে বাংলার মায়েরা, বিদেশে থাকা সন্তানের মঙ্গল
কামনায়
ফুল-তুলসী
চড়ায় শালগ্রাম শিলায়...
একদিন
তার প্রবাসী ছেলে দেশে ফিরবে সেই আশায়! সেই সন্তান কথা রাখে না।
ফিরে আসে না দেশে। হায় ঈশ্বর! তুমিও
রাখো না কথা!
এভাবেই
কত কথারা শুধু কথা হয়ে টুপটাপ ঝরে পড়ে শহরের অলিগলিতে।
কথা
না রাখার ফলে হারিয়ে যায় বন্ধুতা, ভেঙে যায় সম্পর্কেরা।
দ্বিরাগমন
তোদের
দ্বিরাগমন হোক বারে বারে, তোর
জন্য সবকিছু আজ গুছিয়ে দিলাম ওরে! গরমকালের নরম শাড়ি,
শীতের মোজা, বালুচরি, ঠিক
যেমনটি চেয়েছিলি তুই,
কিনে
কেটে রেখেছি রে। তোর-আমার বৃষ্টিশাড়ি? সেটাও দিলাম তাড়াতাড়ি। যদিও পুরনো, তোর যে প্রিয়, বর্ষাভেজা
মায়ের গন্ধ লেপটে আছে তাতে যদিও।
আলগোছে
সব, আলতো হাতে, বাক্সে ভরে, যত্ন
করে, তোদের জন্য সাজিয়ে দিলাম মনের সুখে আদর করে। আচার,
বড়ি, কাজললতা, হাতের
ছোঁয়ার নকশীকাঁথা, বাটিক চাদর, গয়নাগাটি,
কবিতার বই, গানের খাতা। আনকোরা সব ঝকঝকে তা,
সবচেয়ে তুইই পুরনো যা।
আর
পুরনো বইগুলো সব, হাতড়ে পেলাম সেই
চিঠিটা। পাঠিয়েছিলি প্রথমবারে, বিদেশ থেকে মনে পড়ে? সেই
পুরনো গন্ধমাখা, আমার দিয়ার হাতের লেখা? নতুন-পুরনো মিলিয়ে মিশিয়ে এক করলাম নোনতা জলে। কথা
দিলাম, কাঁদব না রে।
ওরে আমার লক্ষ্মীমেয়ে,
আসিস তোরা বারে বারে।
উপছে
উঠুক গেরস্থালী,
লক্ষ্মীঝাঁপি, গয়নাগাটি। বন্ধুতায় থাকিস তোরা!
যাব যখন গল্প হবে বিছিয়ে আবার শীতলপাটি। ভালো থাকিস দুজন মিলে,
রান্না করিস পরিপাটি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন