তেতো
‘এইটুকু সাইজের কমলাভোগের দাম দশ টাকা! এই
টাকায় তো রাজভোগ পাওয়া যায় রে ভাই!’
‘তাহলে অন্য দোকানে গিয়ে সেটাই নিন না!
আপনাকে বারণ করছে কি কেউ?’
অশোকবাবু বিস্ময়মাখানো প্রশ্নটা যে
কর্মচারী মিষ্টি দিচ্ছিল, তাকেই খাটো গলায় করেছিলেন। কিন্তু ঝাঁঝালো উত্তরটা এলো খোদ দোকানদারের কাছ থেকে। ভদ্রলোক এতক্ষণ মন দিয়ে আই পি এল ক্রিকেট দেখছিলেন। অশোকবাবুর কথাটা ঠিকই কানে
গেছে।
কিছু দোকানদার থাকেন, এঁরা যেন খদ্দেরকে
কিছু বিক্রি করে ভিক্ষা দিচ্ছেন এমন ভাব করেন। অবশ্য সেটা খদ্দের অনুযায়ী।
স্বপনবাবু যদি এখন কুড়িটার বদলে কুড়ি কেজি কমলাভোগ কিনতেন, এই দোকানদার এত উদাসীন
কথা বলতেন না। ঘাবড়ে গিয়ে হয়তো এক কাপ চা-ই খাইয়ে দিতেন। দশ-কুড়িটা মিষ্টির
খদ্দেরকে এঁরা ভিখিরিই ভাবেন।
‘মাখা সন্দেশের দাম কত?’
এই দামও আকাশ ছোঁয়া। সিঙ্গারার দাম অন্য
দোকানের প্রায় ডবল। আজ মেয়ের বন্ধুরা বাড়িতে আসবে, নিজেই তাদের আসতে বলেছেন, তাই
শহরের সবচেয়ে নামকরা দোকানের মিষ্টি কিনছেন। এখন বুঝতে পারছেন ভুল করেছেন। এরা এই
শহরের অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মমতো দাম নেয় না। এদের নিজস্ব রেট আছে। এদের ছানা সরাসরি
কলকাতা থেকে আসে।
মোটা সোনার চেন পরা মালিকটি স্বগতোক্তি
করলেন, ‘কিছু লোক এমন বিহেভ করে যেন আমরা জোর করে মিষ্টি কেনাচ্ছি। পকেট দেখে তো
দোকানে ঢুকতে হয়!’
যে কর্মচারী মিষ্টি দিচ্ছিল, ফিক করে
হাসল, অশোকবাবুর দিকে তাকাল।
এই শীতেও অশোকবাবু ঘেমে গেলেন। কান গরম
হয়ে গেল।
এই লোকটা ভাবে কী নিজেকে!
তিনশ সাতাশ টাকা বিল হল। পাশের দোকানে
গেলে এটা দুশোর মধ্যে থাকত। হয়তো স্বাদেরও খুব ফারাক হতো না।
ক্যাশ মালিকের কাছেই থাকে। ক্যাশের উপরে
তিরুপতির একটা বিশাল ছবি, সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো। অশোকবাবু একটা পাঁচশ টাকার নোট
দিলেন। মালিক ক্রিকেটের দিকে চোখ রেখেই বললেন, ‘খুচরোটা নেই? সবাই যদি পাঁচশ টাকার
নোট বের করে দেয়...’
অশোকবাবুর পকেটে খুচরো ছিল। কিন্তু মাথা
নাড়লেন।
লোকটি বিরক্তির আওয়াজ করে একশ তিয়াত্তর
টাকা শ্বেতপাথরের টেবিলে রেখে দিলেন।
অশোকবাবু তুলে নিয়ে বললেন, ‘আর আগের দিনের
দশ টাকাটা?’
‘কী?’
‘বাকি ছিল তো! সেই যে খুচরো দিতে পারলেন
না সকালবেলায়, বললেন তখনও বউনি হয়নি...’
‘ক্ষী?’
‘মনে করতে পারছেন না? গত সোমবার, সেই যে
সকালে এলাম... দেড়শ বোঁদে কিনলাম...’
‘আমাদের দোকানে বোঁদে কস্মিনকালেও পাওয়া
যায় না!’
‘কী বলছেন? মনে করুন...’
মিনিট পাঁচেক পরে যখন অশোকবাবু
শ্রীলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে হাতে বাহারি প্যাকেট ঝুলিয়ে বেরোচ্ছেন, তাঁর
রোগা মুখে চওড়া একটা হাসি লেগে ছিল।
আমার দোকানের ছানা পাঁশকুড়া থেকে আসে।
উত্তরমুছুনহুমম্, তোমার ঝলক স্টাইল যেমন