যখন একোয়ারিয়াম
অঞ্জলদের আজ হাফছুটি হয়ে গেল। ওদের বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর একটি শিশু
থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছিল, তার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার সংবাদ চতুর্থ পিরিয়ডের শেষে এসে পৌঁছল। অঞ্জলদের পাড়াতেই বিদ্যালয়টি। স্কুল পরিচালন কমিটির নানা রকম বিবাদ সারাবছর লেগে থাকে। বেশি তকমাধারি শিক্ষকরা প্রায়ই পদত্যাগ করেন। একটানা পাঁচ বছর মায়াবী সম্পর্কে বাঁধা পড়ে আছেন হাতে গোনা কয়েকজন স্যর ও ম্যাডাম। প্রিয়াংকা ম্যাডাম এঁদের মধ্যে একজন।
যে বাচ্চাটা মারা গেল তার নাম ঋষভ পান্ডে। ওর দাদা অর্ণব সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে একই সেন্ট হেলেন হাইস্কুলে। প্রিয়াংকা ম্যাডাম ও অর্ণবরা বনলতা রেসিডেন্সে থাকেন। আর অঞ্জল অন্য একটা এলাকায়। তবে ওদেরকে ম্যাডাম নিজের ফ্ল্যাটে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদান করেন। ঋষভদের বাড়িতে বাবা সরকারি চাকুরে আর একজন রাতদিনের পরিচারিকা আছে। ঋষভের মা সুইজারল্যান্ডে চলে গেছেন বিয়ের চার বছর পরেই। ওখানেই সংসার। কিন্তু এখন ভারতে এলে বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করে, উপহার পাঠায় আর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। ঋষভের চিকিৎসার খরচাও যোগান দেয়, প্রিয়াংকা জেনেছেন সম্প্রতি। আসলে পরিবারটির সঙ্গে উনি জড়িয়ে যাচ্ছিলেন। হাসপাতাল আর ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার মতো ব্যাপারেও নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল বাচ্চা দুটির বাবা শ্রীঅনিমেষ দত্ত। অঞ্জল প্রথমেই খোঁজ নিল প্রিয়াঙ্কা ম্যাডাম স্কুলে এসেছে কিনা। আসেন নি। স্কুল থেকে ছুটির খবর পেয়ে অঞ্জলকে নিতে এসেছে ওর মা। অর্ণবের বাড়িতে কেউ নেই। কাজের মাসিও হাসপাতালে গেছে। অঞ্জলের মন খারাপ। অর্ণব মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অতএব অঞ্জলের মা অর্ণবকে নিয়ে গেল নিজের বাড়িতে মিঃ দত্তের ফোন পেয়ে।
এর কিছুদিন পরে অঞ্জল অর্ণবের বাড়িতে এলো এক শনিবার। অর্ণব সিক্রেট বিল্ডারস খেলায় মগ্ন। অঞ্জল দেখল দত্তকাকুর শোবার ঘরে প্রিয়াঙ্কা ম্যাম, অর্ণবের মা ও দত্তকাকু মিলে কথা বলছে। প্রায় বোবাদের অঙ্গুলি পরিচালনার মতো লাগছে। অর্ণব ওর পাসপোর্ট মেলে ধরে দেখাচ্ছে। অঞ্জলের চোখে প্রশ্ন, একেবারে চলে যাবি? না কয়েকদিনের জন্য? তোর বাবা একা থাকবে? ওদের কারো চোখে হারাবার বেদনা নেই। অঞ্জলের মনে হচ্ছে, ও একটার পর একটা একোয়ারিয়াম পেরিয়ে যাচ্ছে। মাছেরা বিরক্ত বোধ করছে না। কোনো মাছের সঙ্গেই ওর ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে না। হঠাৎ ওর ইচ্ছে হলো মাছেদের গায়ে অবতারের পোশাক পরিয়ে দেবে, কিন্তু চেষ্টা করেও পারছে না। ও ছবির ঋষভের দিকে অনুনয়ের ভঙ্গিতে তাকিয়ে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন