জলকাটা
কালবৈশাখীর সোঁ সোঁ শব্দ আর কার কত
ঝাঁকড়া চুল - উড়ানোর বাজি গাছেদের। দেখতে দেখতে তিয়াসা কখন যে তার মাথার ক্যাচারটা খুলে গাছ হয়ে
বিদ্যুতের ঝিলিক যেন চমক লাগাচ্ছে তার খোলা চুলের
ডগায় ডগায়! বৃষ্টি এলো। জানালার কাচটা বন্ধ করতে তিয়াসার হাত
ভিজে গেল। ফাইলের ভার, ফাইলের
খোলা পৃষ্ঠা উঁকি দিচ্ছে বাংলা লেখায়। চোখ পড়তেই - ফাইলটি তিয়াসার
কোলে। বাসের জানালার কাচ বেয়ে জল চুঁয়ে যাচ্ছে। লোকটার ডান হাত, ডান পায়জামা ভিজে গেছে। তিয়াসার কোলে
ফাইল। তিয়াসা জানে না, সব চরিত্র তখনও শুকনো। জল গড়ানো কাচ কথা বলছে, কবিতা শুনতে চাইছে। তিয়াসা কবিতা আওড়াচ্ছে। লোকটা স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ছাতার রঙবাহারি স্নান, রেনকোট পরে
মায়ের হাত ধরে ছেলেটার স্কুল থেকে বাড়ি
ফেরা, গাড়ির ফগকাটারের জল কাটা দেখতে দেখতে একটু নাম, ঠিকানার উৎসাহে আলাপচারিতায় ব্যবধানে ইরেজার
ঘষে দিচ্ছে। এবার লোকটা গল্প বলছে, তার ছোট্ট পাঁচ
বছরের মেয়ের মিথ্যে কাহিনী উপস্থাপনার। সে
জানে মেয়ে মিথ্যে বলছে, তাও বাধা দেয় না, কল্পনার
রসদে। লোকটা স্বপ্ন খোঁজে, একদিন এই মিথ্যেকথন হয়তো
কল্পনা প্রবণতার জায়গায় ঝড় তুলবে গল্পগাঁথা হয়ে। তিয়াসা
ও লোকটা রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ আওড়াচ্ছে,
আর মুগ্ধতার দৃষ্টিতে-
‘শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি’
‘শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি’
ভেজা ডান হাত এগিয়ে - আমি নাট্যকার, তিয়াসা, তোমার কোলে নাটকের স্ক্রীপ্ট, চরিত্র। তোমায় আমরা পাবো লেখায় - তুমি পারবে, তোমার মাঝে শব্দ আছে,
আমার চোখ শব্দ পড়েছে! এসো কখনও
আমার অফিসে। ভিজিটিং কার্ডে ঠিকানা সন্ধানী তিয়াসা জীবনে ঠিকানা পাল্টাতে পাল্টাতে
হারিয়ে ফেলেছে... শুধু ভেজা ডান হাত, আজও জানালার কাচে জল গড়ালে নাম ঠিকানাহীন কথায় ভাসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন