ক্লারা
ক্লারা নামে আমার এক সহকর্মী আছে। মেয়েটা জ্যামাইকার। জ্যামাইকা হলো অ্যাথলেটেদের দেশ। মেয়েটা একসময় ওর দেশের পক্ষ থেকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছিল। পরে কানাডায় অভিবাসী হয়েছে। স্পোর্টস করা করা মেয়ে, স্বভাবতই খুব ছিপছিপে, আকর্ষণীয়া ফিগার। সে এটা ভালো করে জানে বলেই তার বেশ একটা অহংকার আছে।
সে যে বছর অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছিল, সে বছর ওর সাথে বাছাইয়ে বাংলাদেশের একটা মেয়ে ছিল। আর প্রথাগতভাবে বাংলাদেশের
মেয়েটা হিটে
আটজনের মাঝে অষ্টম হয়েছিল।
ক্লারা যখন জেনেছে যে আমি বাংলাদেশের, সে আমাকে দেখলেই বাংলাদেশের ঐ মেয়েটার কথা
বলে ক্ষ্যাপাত। আমাদের শারীরিক গঠন, অপুষ্টি নিয়ে খোঁচাত। এ কারণে ক্লারাকে আমি অপছন্দ করতাম।
আজ আমাদের অফিসে একটা ট্রেনিং প্রোগ্রাম
ছিল ৯টা থেকে ৫টা। সারাদিন একটা ক্লাসরুমে
বসে ট্রেইনারের বোরিং বকবক শোনা আর প্রজেক্টরে কিছু ডকুমেন্ট দেখা। বিষয়বস্তু আর ট্রেইনার বোরিং হলে কী যে অবস্থা হয়!
সবচেয়ে কঠিন অবস্থা হয় দুপুরের খাবার পর। ট্রেইনার রুমের আলো নিভিয়ে পর্দায় পাওয়ার পয়েন্টে কী কী যেন দেখাচ্ছে, তখন পায় সবার ঘুম। তো আজ ক্লারা ট্রেনিংএ
আমার পাশে বসে এরকম একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে পড়ে সে আমার কাঁধে
আস্তে করে
তার মাথাটা রাখে। বুঝতে পারি যে, সে ঘুমে কাহিল।
খুবই বিব্রতকর অবস্থা! ইচ্ছা হচ্ছিল ক্লারার মাথাটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই। ট্রেইনার এ অবস্থা দেখে আস্তে করে রুমের লাইটটা অন করে দেয়। ক্লারার তবুও হুঁশ নেই। ট্রেইনার চট করে তার স্মার্ট ফোনে এই ‘রোম্যান্টিক’ দৃশ্য বন্দী করে ফেলে। ক্লাসে অন্য ছেলেমেয়েদের হাসির তোড়ে ক্লারার ঘুম ভাঙ্গে। বেচারির তখন দেখার মতো অবস্থা!
খুবই বিব্রতকর অবস্থা! ইচ্ছা হচ্ছিল ক্লারার মাথাটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই। ট্রেইনার এ অবস্থা দেখে আস্তে করে রুমের লাইটটা অন করে দেয়। ক্লারার তবুও হুঁশ নেই। ট্রেইনার চট করে তার স্মার্ট ফোনে এই ‘রোম্যান্টিক’ দৃশ্য বন্দী করে ফেলে। ক্লাসে অন্য ছেলেমেয়েদের হাসির তোড়ে ক্লারার ঘুম ভাঙ্গে। বেচারির তখন দেখার মতো অবস্থা!
ট্রেইনার কিছুক্ষণ পর পর্দায় আচানক আমাদের
এই ‘জুটিবদ্ধ’ ছবি প্রদর্শন করে সবাইকে চমকে দেয়। পুরো ক্লাস অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ক্লারা ‘ও মাই
গড, ও মাই গড’ বলে লাফিয়ে ওঠে। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে যা বলল, তা হলো;
: আমার এখন কী হবে? আমার এখন কী হবে? আমার বয়ফ্রেন্ড এই ছবি দেখলে তো
আমাকে মেরে ফেলে ফেলবে! ছি ছি, কেন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম!
আমি এই সুযোগে ক্লারাকে ফিসফিস করে বললাম;
আমি এই সুযোগে ক্লারাকে ফিসফিস করে বললাম;
: কি হে, আর কখনো বলবে যে বাংলাদেশের মেয়েরা
দৌঁড়াতে পারে না? বলবে বাংলাদেশের মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে?
ক্লারা এবারে হাত জোর করে বলে;
: ফর গড
সেক, আর কখনো বলব না। আর না। আর না। ফরগিভ মি...
ট্রেইনারকে আমি অনুরোধ করে ছবিটা ডিলিট করে দিলাম।
মন্ট্রিয়লে এখন এপ্রিলের সুন্দর বিকেল। ট্রেনিং শেষ হলে আমি পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিস দিতে দিতে ক্লাস থেকে বের হলাম।
আহ, শুক্রবার বিকেলটা যে কী সুন্দর! আসলেই মন্ট্রিয়লটা অন্যরকম...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন