সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

এৎগার কেরেৎ

প্রতিবেশী সাহিত্য


এৎগার কেরেৎ-এর গল্প

      
(অনুসৃজন : অদ্বয় চৌধুরী)



  
   
লেখক পরিচিতি

ইসরায়েলের নব্বই পরবর্তী গল্পকার এৎগার কেরেৎ ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। হলোকস্ট থেকে বেঁচে ফেরা বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান এৎগার ছোটগল্পকার, গ্রাফিক ঔপন্যাসিক এবং সিনেমা ও টেলিভিশনের স্ক্রিপ্টরাইটার হিসেবে লব্ধপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর প্রথম ছোটগল্প সংকলন ‘পাইপলাইনস’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। দ্বিতীয় ছোটগল্প সংকলন ‘মিসিং কিসিঞ্জার’ তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। দেশী ও বিদেশী বহু পুরস্কারে  ভূষিত কেরেৎ নির্মেদ লিখনশৈলী এবং কথ্যভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে আদর্শ গল্পকার রূপে পরিগণিত। এখানে তাঁর ‘ক্রেজি গ্লু’ নামক গল্পটির ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলা অনুসৃজনের প্রয়াস রাখা হলো



পাগলা আঠা


ও চেঁচিয়ে উঠল — “ওটা ছুঁয়ো না।”
“কি এটা?”
“আঠা। এক ধরনের বিশেষ আঠা। সেরা আঠা।”
“এটা কি করতে কিনেছ?”
“আমার দরকারএখানে অনেক কিছু জুড়তে হবে।”
“কিচ্ছু জোড়ার নেই এখানেতুমি এসব কেন যে কিনে আন, তা যদি বুঝতাম!
“ঠিক একই কারণে আমি তোমায় বিয়ে করেছি”, ও বিড়বিড় করে বলল — “সময় কাটানোর জন্য।”
ঝগড়া চাইছিলাম না আমি। তাই চুপ করে গেলাম। ও-ও চুপ করে গেল।
“এই আঠাটা কি ভালো কাজের?”— জিজ্ঞেস করলাম। ও আমায় আঠার বাক্সের ছবিটা দেখালএকটি লোক ছাদ থেকে উলটো অবস্থায় ঝুলছে।
“নাহ! কোনো আঠা এরকম ভাবে কো্নো মানুষকে আটকাতে পারে না। ওরা  ছবিটাকে শুধু উলটো করে তুলেছে। ওরা মেঝেতে আলোটাকে লাগিয়ে দিয়েছে।” ওর থেকে বাক্সটা নিয়ে ভালো করে দেখলাম“এবং, ঐ জানালাটা দেখ। ওরা খড়খড়িটা  উলটো করে টাঙানোর ব্যাপারে মাথা ঘামায় নিযদি লোকটা সত্যি ছাদে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে খড়খড়িটা উলটো হয়ে ঝুলছে। দেখ!” আমি আবার বললাম,  জানালাটা দেখিয়ে। ও তাকাল না।
“আটটা এর মধ্যেই বেজে গেছে। আমায় ছুটতে হবে এবার”। ব্রিফকেসটা তুলে নিয়ে ওর গালে চুমু খেলাম। “আমার ফিরতে বেশ দেরী হবে। আমি...”
“ওভারটাইম করবে”, ও নিজেই বলে উঠল“হুম, আমি জানি

অফিস থেকে ফোন করলাম অ্যাবিকে।
“আজ যেতে পারব না। আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।”
“কেন? কিছু ঘটেছে?”
“না... মানে, হয়তো। আমার মনে হয় ও কিছু একটা সন্দেহ করেছে।”
দীর্ঘ স্তব্ধতার মধ্যে শুধু উলটো দিকে অ্যাবির শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল
“আমি বুঝতে পারি না তুমি কেন ওর সাথে আছ। তোমরা কোনো কিছুই একসাথে  কর না। এমনকি ঝগড়াও কর না। আমি কোনোদিনই বুঝতে পারব না।” খানিক  থেমে অ্যাবি আবার বলল, “যদি বুঝতাম...!” অ্যাবি কাঁদছিল।
“সরি। অ্যাবি, আমি সত্যি দুঃখিত। শোন, একজন এসেছে” — মিছিমিছি বললাম। “এখন আমায় উঠতে হবে। আমি কাল আসব। তিন সত্যিতখন আমরা সবকিছু নিয়ে কথা বলব।”

আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলাম। “হাই!” — ঢুকতে ঢুকতে বললাম কিন্তু  কোনো উত্তর পেলাম না। বাড়ির সবকটা ঘর ঘুরলাম। কোনোটাতেই ও নেই।  রান্নাঘরের টেবিলে আঠার টিউবটা পড়ে রয়েছে। একদম খালি। বসব বলে একটা চেয়ার টানার চেষ্টা করলাম। একটুও নড়ল না। আবার চেষ্টা করলাম। এক ইঞ্চিও নড়ল না। ও চেয়ারটাকে মেঝের সঙ্গে আঠা দিয়ে জুড়ে দিয়েছে। ফ্রিজের দরজাটা খুলল না। আঠা দিয়ে সেঁটে দিয়েছে। কী ঘটছে, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। কী  কারণে ও এমন কাণ্ড করেছ্‌ বুঝতে পারলাম না। আমি জানি না ও কোথায়। লিভিং  রুমে গিয়ে ওর মাকে ফোন করার চেষ্টা করলাম। রিসিভার তুলতে পারলাম না। ওটাকেও ও সেঁটে দিয়েছে। টেবিলে লাথি মারলাম। আমার পা প্রায় ভেঙেই গিয়েছিল। টেবিলটা একটুও নড়ল না।
এবং তখন ওর হাসি শুনতে পেলাম। শব্দটা আসছে পরের দিক থেকে। আমি পর  দিকে তাকালাম ওখানেই রয়েছে ও লিভিং রুমের ছাদে উলটো অবস্থায় খালি পায়ে দাঁড়িয়ে।
আমি হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। খানিক ধাতস্থ হয়ে চিৎকার করে উঠলাম — “এসব কি ছাতার মাথা হচ্ছে... তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?”
ও কোনো উত্তর দিল না। শুধু হাসল। ঐভাবে উলটো হয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ওর  হাসিটা ভীষণ স্বতঃস্ফূর্ত লাগল। মনে হলো ওর ঠোঁট দুটো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে  আপনা থেকে ফাঁক হয়ে যাচ্ছে।
“চিন্তা কর না, আমি তোমায় নামিয়ে আনব”। বইয়ের তাকের কাছে দৌড়ে গিয়ে সবথেকে বড় বইগুলো নিয়ে এলাম। এনসাইক্লোপিডিয়া দিয়ে একটা টাওয়ার বানিয়ে তার পরে চড়লাম
নিজেকে সামলাতে সামলাতে বললাম, “একটু লাগতে পারে”। ও হাসতেই থাকল। যত জোরে সম্ভব আমি টানতে লাগলাম ওকে, কিন্তু কিছুই ঘটল না। আবার নেমে এলাম সাবধানে।
“কিচ্ছু চিন্তা কর না, আমি পাড়ার লোকদের ডেকে আনছি। ওদের কাছে সাহায্য চাইব।”
“খুব ভালো”, ও বলল। “আমি কোত্থাও যাচ্ছি না।”
এবার আমিও হেসে ফেললাম। ছাদ থেকে ঐভাবে উলটো হয়ে ঝোলা অবস্থায় ওকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে এবং অদ্ভুত বেখাপ্পাও লাগছে। ওর লম্বা চুল নিচের দিকে  ঝুলছে। আর ওর স্তন দুটো সাদা টী-শার্টের নিচে ঠিক দুফোঁটা চোখের জলের মতো  দেখাচ্ছে। অদ্ভুত সুন্দর। আমি আবার বইয়ের পর উঠে ওকে চুমু খেলাম। আমার  জিভে ওর জিভ ছুঁয়ে গেলবইগুলো টলে পড়ে গেল পায়ের তলা থেকে। কিন্তু আমি বাতাসে ঝুলে রইলাম ওর ঠোঁট থেকে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন