চারানা আটানা
৩১) রবি, আবার রবি...
কবিপক্ষে আর কী নিয়ে
লেখা যায়, সেই সবেধন-নীলমণি বুড়োদাদু ছাড়া? তবে এগুলো সব বিচ্ছিরি পিজে। যাদের
পিজে ভাল্লাগে না, তারা প্লিজ পড়বেন না।
এক
যাদের মামা নেই, তাদের মতো দু:খীশৈশব আর নেই।মামার বাড়ি ভারি মজা, কিল চড় নাই তো বটেই, মামাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্রয়, উপহার ও আদরের ফলেই তো বিবর্তন উলটে মানুষ আবার বাঁদর হওয়ার সুযোগ পায়। তারা সারাজীবন পড়ে যায়, নেই মামার চেয়ে কানামামা ভালো। অথচ তাদের তো নেইমামা। খামোকা কানালোক রাস্তায় দেখলেই তাদের তো আর মামা বানিয়ে দেওয়া যায় না! ফলে ভালোত্বর স্বাদ তারা পায় না কোনোদিনই। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো একে তাকে মামা বলে ডাকে হয়তো, কিন্তু তারা যেহেতু কানা নয়, তারা নেই-মামার চেয়ে যে ভালো, তা বলা যাবে না।
কী দু:খ! কী অনুতাপ!!
সেই দু:খের প্রগাঢ় অনুভূতি থেকে উঠে আসে রবীন্দ্রনাথের সুরে গান – ‘কোথায় আমার হারিয়ে যাওয়া নেই-মামা, কানামামা?’
দুই
- অ্যাই ছোকরা, ইদিকে আয়! অ্যাতোগুলো ভ্যাড়া নিয়ে কোতায় যাচ্চিস?
- এগুলো ভ্যাড়া লয়, কত্তা!
- ভ্যাড়া নয়তো কী? ছাগোল?
- শুয়োর কত্তা।
- চোপ,
শুয়োর কি আউলাদ! আমি শুয়োর চিনি নে ভাবচিস? মস্করা কচ্চিলুম। তা এই শুয়োরের পাল নিয়ে যাচ্চিস কোতায়?
- চরাতে কত্তা।
- আমাদের এলাকা দিয়ে শুয়োরের পাল চরাতে নিয়ে যাচ্চিস, পারমিশান আচে তোর? বলি,
ইটা কি শুয়োর চরাবার জায়গা?
- না কত্তা, আকাশে ম্যাঘ, তাই ভাবলাম শটকাট করি। কখুন বিষ্টি এসে যাবে!
- অ,
আর অমনি আমাদের এই পাড়ার মদ্যে ঢুকিয়ে দিলি তোর শুয়োরের গুষ্টি! সাহস তো কম নয় তোর, ছোকরা!
এইসব সাত সতেরো ভ্যানতাড়া চলার মধ্যে কখন প্রবল ঝড় এসে গেল। শুয়োরগুলো উদ্ভ্রান্ত হয়ে লাগালো ছুট। তাদের কিছু দৌড়ে ধরে ফেলা গেল, কিছু গেল না। ঝড় থামলে শোনা গেল গাছতলা থেকে ভেসে আসা রাখাল বালকের মরমী গলার গান -
‘জে রাতে মোর শুয়ারগুলি ভাগলো ঝড়ে...’
তিন
রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বয়সে সামান্য ছোট ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। দুজনে বন্ধু ছিলেন যদিও, উপেন্দ্রকিশোর ছোটদের জন্যে লিখতেন, রবি সবার জন্যে লিখতেন। উপেন্দ্রকিশোর ঠাকুরদের মতো জমিদারও ছিলেন না, তাঁর অল্প একফালি জমি ছিল।
এইসব কারণে তাঁকে বাড়িতে ডেকে সিঙ্গুর স্টাইলে ‘বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে’ হুমকি দেওয়া রবীন্দ্রনাথের একদম উচিত হয়নি।
তিব্রো পোতিবাদ জানাচ্ছি।
চার
"বাংলায় "অপূর্ব' শব্দ বিশেষ অর্থে প্রচলিত হইয়াছে।
"অপূর্বসৌন্দর্য' বলিতে আমরা original beauty বুঝি না। যদি বলা যায় কবিতাটি অপূর্ব তাহা হইলে আমরা বুঝি তাহার বিশেষ একটি
রমণীয়তা আছে, কিন্তু তাহা যে original এরূপ
বুঝি না। ইংরেজিতে যাঁহাকে original man বলা যায় তিনি চিন্তায়
কর্মে বা আচরণে অন্য কাহারো অনুসরণ করেন না। বাংলায় যদি তাঁহাকে বলি 'লোকটিঅপূর্ব' তাহা হইলে সেটা ঠাট্টার মতো শোনায়। বোধহয়
এরূপ প্রসঙ্গে স্বানুবর্তী ও স্বানুবর্তিতা কথাটা চলিতে পারে। কিন্তু রচনা বা কর্ম
সম্বন্ধে ও কথাটা খাটিবে না। 'আদিম' শব্দটি
বাংলায় যদি 'primitive' অর্থে না ব্যবহৃত হইত তাহা হইলে ওই শব্দটির
প্রয়োগ এরূপ স্থলে সংগত হইত। বিশেষ কবিতাটি আদিম বা তাহার মধ্যে আদিমতা আছে বলিলে ঠিক
ভাবটি বোঝায়। বস্তুত, অপূর্ব = strange, আদিম = original। অপূর্বসৌন্দর্য = strange beauty, আদিমসৌন্দর্য = original beauty, আদিগঙ্গা = the
original Ganges, আদিবুদ্ধ = the original Buddha, আদিজ্যোতি = the
original light. অপূর্বজ্যোতি বলিলে বুঝাইবে, the strange light. আদিপুরুষ = the original ancestor, এরূপ স্থলে অপূর্বপুরুষ
বলাই চলে না।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এটা পড়তে পড়তে একদল লোক
বলল, 'উফ,
রবিঠাকুর আর বিষয় পেলেন না, সেই বুদ্ধ,
সেই জ্যোতি, মা-মাটি-মানুষ যাদের বর্জন করেছে
..."
পাঁচ
"মেঘের 'পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে
আসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কাজের দিনে নানা কাজে
থাকি নানা লোকের মাঝে,
আজ আমি যে বসে আছি তোমারি
আশ্বাসে॥"
কে কাহাকে কোন প্রসঙ্গে
বলিয়াছেন? উক্তিটির
ভাব সম্প্রসারণ করো।
উত্তরঃ নির্ঘাৎ কোনো
এক যুবক তার পরিবারের প্রধান, হয় বাপ বা ঠাকুর্দাকে বলেছেন।
সে কাজের ছেলে, কোথায় কাজ করে
দুটো পয়সা ইনকাম করে আনবে, তা না তাকে বলা হয়েছে বৌয়ের পাশে বসে
থাকতে। তাই তার রাগ।
মে মাসের গরম। মে'র ঘেরের ওপর
মেঘ জমছে অথচ বিষ্টি নেই। দরদর ঘাম ঝরছে। এর মধ্যে - আধার করে আসে - মানে হাতে এলো
আধার কার্ড। সেই কার্ড দেখে বাপ বা ঠাকুদ্দা ভাবলো, ব্যাস,
হয়ে গেল, এবার তো ভাতা-টাতা বাঁধা, যুবশ্রীর কাঁকরমণি চাল আর কন্যাশ্রীর ভাঙা সাইকেল। তাই বসিয়ে রাখলো ব্যাটাকে
- একা দারের পাশে - মানে, বৌয়ের আঁচল ধরে। কাজের দিনে সে তো নানা
কাজে থাকে। 'থাকি না নোলকের মাঝে' মানে
বৌয়ের নাকের নোলক-ফোলক দেখে সময় নষ্ট করা তার ধাতে নেই। কিন্তু আজ তাকে বলা হয়েছে সে
বসে থাকলে ফায়দা হতে পারে, তাই অগত্যা মধুসূদন!
ছয়
- তোকে বললাম, ট্রানস্লেট কর, আমি লালমাটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাব, এটা কী লিখেছিস?
- কেন স্যার, ঠিকই তো লিখেছি। আই শ্যাল ওয়াক অন দ্য টাওয়েলস।
- টাওয়েলস? লালমাটির রাস্তার ইংরাজী টাওয়েলস?
- টাওয়েল মানে গামছা না?
- হ্যাঁ, তার সাথে এর কী সম্পর্ক?
- বাহ, রবিঠাকুর যে বলেছেন – ‘গামছারা ওই রাঙামাটির পথ’।
সাত
বাজারের ফর্দে শিম লেখা ছিল, আমি ভুল করে এক ডজন ডিম কিনে এনে কোথায় রাখব বুঝতে না পেরে রেখে দিয়েছিলাম একটা জগের মধ্যে। একে তো ভুল জিনিস এনেছি, তার ওপর সেটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এই নিয়ে বাড়িতে দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়ে গেল। না, এটাই চ্যাঁচামেচির মূল কারণ নয়, বরং বলা যায় অনুঘটক, কেননা অন্তত শ’ খানেক বার্নিং ইস্যু আছে। সেই আলোচনায় আমি যেন পুরো নতুন জীবন লাভ করলাম।
আমার কথা নয়, রবীন্দ্রনাথের। উনি গানেই লিখে গেছেন এটা -
‘জগহতে আনঅন্ড যজ্ঞে শ’বার্নিংমন্ত্রণ।
ধন্য হলো, ধন্য wholeও মানবজীবন।
(লেখার পরে খেয়াল হলো, সবার তো নয়, আমার
নিমন্ত্রণ ছিল; যাক গে!)
আট
‘আমার প্রাণের মাঝে সুধা আছে, চাও কি -
হায় বুঝি তার খবর পেলে না।
পারিজাতের মধুর গন্ধ পাও কি -
হায় বুঝি তার নাগাল মেলে না...’
বলো দেখি কোন জিনিস স্মরণ করে দাদু এই গানটা লিখেছিলেন?
পারলে না তো! জানতাম, পারবে না।
‘প্রাণের মাঝে সুধা আছে’ – এটাই হিন্ট। ভাবো।
পারলে?
উত্তর হচ্ছে...
প্রাণের লিচু ড্রিঙ্ক। সুধা আছে। এই গরমে... আহ্!
নয়
‘একটি গাঁয়েই আমরা আছি দু’জন
একটি মাত্র সুখই কেবল জানে
দোয়েল পাখির তাদের গাছে কূজন
আমার বুকের নৃত্য তাহার গানে
ভেড়া দুটির পালনকর্ত্রী সেই
মোদের বটমূল যে তাদের প্রিয়
আমার খেতের বেড়াতে ধেই ধেই
নাচলে ভাঙে, দিই পেতে কোল স্বীয়
আমাদের এই খঞ্জনাই তো গ্রাম
আমাদের এই অঞ্জনাই তো নদী
আমার গ্রামের পাঁচজনার যা নাম
রঞ্জনারটা তারো ভালো হতো যদি...’
এটা পিজে? ধ্যুস্! পচা টমেটো আর বিকট প্যাঁক
উড়ে এলো বলে!
দশ
‘যদি তোর ঢাক শুনে কেউ না হাসে, তবে প্যাঁক বাঁচলো রে...’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন