শিরিষ গাছের ছায়ায়
ওরা
(লালনসাইজি বিনয় করে সিরাজ সাইজির পায় / সাপে মারিলে লাঠিনালিশ করিব কোথায়?)
পরদিন ট্রেন থেকে নেমে আপনি হেঁটে হেঁটে ক্যাম্পাসে এলেন। বাস ছিল না। তামাটে রোদ্দুরে ঢল। আপনাকে আপনার
বন্ধুরা বলছিল রিক্সা নিতে, আপনি নিলেন না। অতোটুকু
রিক্সাচালক ছেলে এই পাহাড়িয়া রাস্তায় তিনজনকে রিক্সায় তুলে
টানবে, আপনার পছন্দ
হলো না। কাঁটা পাহাড় দিয়ে হাঁটতে থাকলেন। কী রোদ! আপনি ওড়নাটা দিয়ে মাথা ঢাকলেন।
রোদ কি কথা শোনে? বেয়াড়া বর্শা রোদ!
- আমাকে কি সমাজতত্ত্ব বিভাগটা দেখিয়ে দেবেন?
- আপনি কি ফার্স্ট ইয়ার?
- জ্বী প্রথম বর্ষ।
- আজ প্রথম?
- জ্বী প্রথম।
- আজ প্রথম?
- জ্বী প্রথম।
- প্রথম দিনই পাহাড় ডিঙ্গাচ্ছেন?
-
বিশ্ববিদ্যালয়ে কতদিন যে
পড়তে হবে আল্লা মালুম। তাই প্রথম দিন থেকেই অভ্যাস করছি।
- অভ্যাস করা ভালো। আজ খুব রোদ।
- আগস্ট মাসে রোদ তো পড়বেই, রবীন্দ্রনাথের মাস কি না...
- রবীন্দ্রনাথের মাস?
- রবীন্দ্রনাথের মাস?
- জ্বী।
- কোন্
কলেজ থেকে?
-
চট্টগ্রাম কলেজ। আপনি কোন
বিভাগের ছাত্র?
- আমি তো ছাত্র নই।
- মানে?
- আমি তো ছাত্র নই।
- মানে?
- মানে ছাত্রত্ব নেই আর।
- ও।
- ও।
- আপনি রিক্সা নেননি কেন?
-
রিক্সাভাড়া সেভ করছি।
- ঠিক নয়। আপনি ৩ জনের রিক্সায় উঠতে চাননি। ঠিক কি না?
- আপনি জানলেন কি করে?
- আপনি জানলেন কি করে?
- আমি মনের কথা পড়াই কিনা।
- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আপনি?
- জ্বী।
- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আপনি?
- জ্বী।
- ওহ স্যার শুভেচ্ছা।
- শুভেচ্ছা। কেমন লাগছে প্রথম দিন?
- আপনি নাকি মনের কথা পড়ান, পড়ে নিন কেমন লাগছে আমার!
- শুভেচ্ছা। কেমন লাগছে প্রথম দিন?
- আপনি নাকি মনের কথা পড়ান, পড়ে নিন কেমন লাগছে আমার!
- হা হা
হা হা!
পাহাড় বেয়ে নেমে গেল দু’জন। রোদ বাড়ল। সমাজতত্ত্ব মেয়েটা একটা ছায়া মতো জায়গায়
এসে থামল। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করল, কয়েক ঢোক খেল। পানিটাও গরম হয়ে আছে। ধ্যাৎ!
মনোবিজ্ঞান স্যার দূরে
আরেকটা গাছের ছায়ায় দাঁড়াল। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করল, গরম হয়ে গেছে বোতলটা, খেল না। আবার হাঁটল।
মেয়েটা গপগপ হেঁটে আর্টস ফ্যাকাল্টির সামনে থামল। কী সুন্দর
লাল রঙা ইটের বিশাল বিল্ডিং! মন ভালো হয়ে গেল। শিরিষ গাছের ছায়া ওর লাবণ্য বাড়াল। নাকের ডগায়
ঘাম মুছে নিল ওড়নাটা দিয়ে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করবে ভাবল, খুব তৃষ্ণা। দূর থেকে কিসের যেন মিছিলের শব্দ কানে
এলো। আবার বোতলটা ব্যাগে রেখে দিল।
চারিদিকে তুমুল চিৎকার। ছেলেরা দৌড়াচ্ছে, মেয়েরাও। আচমকা আর্টস ফ্যাকালটির সামনে বোমা ফুটল মনে হলো, কিংবা গুলির প্রলয় শব্দ। কানের কাছে তীব্র শীসার মতো শোঁ আওয়াজ। পালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। তারুণ্য প্রলয় নাচনে মেতে উঠল ক্যাম্পাস।
চারিদিকে তুমুল চিৎকার। ছেলেরা দৌড়াচ্ছে, মেয়েরাও। আচমকা আর্টস ফ্যাকালটির সামনে বোমা ফুটল মনে হলো, কিংবা গুলির প্রলয় শব্দ। কানের কাছে তীব্র শীসার মতো শোঁ আওয়াজ। পালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। তারুণ্য প্রলয় নাচনে মেতে উঠল ক্যাম্পাস।
মনোবিজ্ঞান স্যার
খানিকটা উদ্বিগ্ন। কী করবে ভাবছে। হঠাৎ মনে হলো, সমাজতত্ত্বের লাবণ্য মেয়েটি শিরিষ গাছের ছায়ায় ঢলে পড়ছে। অস্ফূট ধ্বনি কানে এলো : মা গো!
দূর থেকে মনে হচ্ছে সমাজতত্ত্বের মেয়েটি চলচ্চিত্র দৃশ্যের মতো লুটিয়ে পড়ছে শিরিষ শাখার প্রাঙ্গনে বেতস লতার মতো। কৃষ্ণচূড়ার মতো রক্ত কেন মেয়েটার শরত নীলের মতো কামিজের চারপাশে? মেয়েটা মাটিতে পড়ে যাচ্ছে কেন?
দূর থেকে মনে হচ্ছে সমাজতত্ত্বের মেয়েটি চলচ্চিত্র দৃশ্যের মতো লুটিয়ে পড়ছে শিরিষ শাখার প্রাঙ্গনে বেতস লতার মতো। কৃষ্ণচূড়ার মতো রক্ত কেন মেয়েটার শরত নীলের মতো কামিজের চারপাশে? মেয়েটা মাটিতে পড়ে যাচ্ছে কেন?
মনোবিজ্ঞান চিৎকার করে
উঠল। প্রলয়ের মতো দৌড় শুরু করে সমাজতত্ত্বের দিকে।
- এইই মেয়ে! কিহয়েছে? সমাজতত্ত্ব
তো চারতলায়... দাঁড়াও আমি আসছি...
মিছিল কোথায় যে চলে গেছে! মিছিলের ছেলেরা ক্যাফেটরিয়ায় এসে পাখার নিচে বসল, কী ভীষণ পরিশ্রম গেছে আজ! ওরা কোকাকোলা খাচ্ছে। বাইরে রোদের ঢল তখনো। শিরিষ গাছ
থেকে একটা পাখি মন খারাপ করে উড়ে পড়ে থাকা সমাজতত্ত্ব মেয়েটির পাশে এসে কী যেন দেখল।
তখনও কী রোদ !মেয়েটার গায়ে
আর রোদের তাপ লাগছে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন