সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

ময়ূরিকা মুখোপাধ্যায়

নিখোঁজ


সময় প্রায়ই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে কিন্তু সেদিন প্রথম মনে হলো, সবুজ গালিচায় দাঁড়িয়ে নীল মূর্তিমান পনেরো জন নারীদেহ জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্ব সন্ধানের ভরপুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে

যে দেশে শুধুমাত্র্র বয়সের অজুহাতে ধর্ষণ নিরাপরাধ হয়ে যায়, সেই দেশেই দাঁড়িয়ে একঝাঁকচিত্রাঙ্গদাশুধুমাত্র ক্রিকেটীয় ব্যাখায় স্টেপ আউট করে দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে প্রতিপক্ষকে... কী ভয়ঙ্কর সুন্দর!

ব্যাট-বলের কারিগরীটা আমার বরাবরই খুব পছন্দের এক একটা ওভার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াইড-নো বল ছাড়াও এখন কিছু বুঝতে শিখেছি তাই দিন দুয়েক মস্তিস্কের কোষগুলোতে হরমনপ্রীত কৌর থেকে অন্জুম চোপড়া বেশ দাপাদাপি করে  বেরিয়েছে যদিও এই ব্যাপার স্যাপারগুলোর সঙ্গে আমি মোটামুটি ভালোই অভ্যস্ত,  তাও শুরুর খোঁজটা যেন কিছুতেই মিলছিল না উৎসটা ভীষণ ভাবে চেনা, কিন্তু জায়গাটা ঠিক কিছুতেই ছোঁয়া যাচ্ছিল না
তবে অপেক্ষাও বেশিদিন করতে হলো না...

সন্ধ্যের দিকটাতে দিনকয়েক ধরে বেশ হাওয়া দিচ্ছে যদিও হাওয়াদের বংশ পরিচয় নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আমার কোনওদিনই ছিল না... কিন্তু সেদিন হঠাৎই, কথা নেই, বার্তা নেই পদবীবিহীন একটা বাতাস হঠাৎ কিছু দৃশ্যের সামনে দাঁড় করালো... এবং এমনভাবে দাঁড় করালো যে, সেখান থেকে আর ফেরা যায় না


ফ্ল্যাটে ঢোকার সরু স্পেসটায় জনা চারেক একসময় চুটিয়ে ক্রিকেট খেলতাম যে সবুজ বলগুলোয়, ক্যার ক্যার করে আওয়াজ হতো লোহার দরজার নিচের দুটো  ছিটকিনি দিয়ে লেগস্টাম্প আর অফ্স্টাম্প; মিডল স্টাম্পটা একটু কল্পনা মাফিক  দেওয়ালে বল লাগলে দুই, সোজা গেলে চার, আর আমার বাড়ির দিকে গেলে আউটআমি অবশ্য ব্যাট ভালো করতে পারতাম না, তবে বলটা বেশ ঘোরাতে পারতাম নি, বিট্টুদের মতো তাবড় তাবড় ব্যাটসমানদের আউট করেছি   

মামাবাড়িটা ছিল ব্যাটিং পিচ, তাই রনিই বেশি হেল্প পেত একবার তো বল মেরে ফ্লাডলাইটটাই... আই মিন... দালানের টিউব লাইটটা পুরো উড়িয়ে দিয়েছিলাম সে কথা অবশ্য মা এখন আর মনে নেই শুধু মনে আছে, ক্যাচ ধরতে গিয়ে  একবার কড়ে আঙুলটায় খুব জো ব্যথা পেয়েছিলাম বাড়িতে বলিনি কিছু, ইনজেকশনের ভয়ে তবে মা ধরে ফেলেছিল, পরে র্ণিকা খেয়ে বেশ রকমের ধামাচাপা পড়ে গেছিল

ব্যথাটা আজ আবার হলো, তবে কড়ে আঙুলে নয়... কিন্তু কোথায় যে হলো... তা  এতটা বড় বয়সে এসেও মাঝে মাঝে বোঝাটা শক্ত হয়ে যায়

আদপে কে আমি? কেন আমি?...
এখন যা, আমি কি সত্যিই তাইই হতে চেয়েছিলাম?

পারতাম না, হয়তো পারতামই না, গুগলি ক্যারাম বলে দেশবিদেশ কাঁপাতে... কিন্তু একবার অন্তত আসল বলটাকে একটু আদর তো করতে পারতাম...

স্বপ্ন কি তাহলে এরকমই হয়? কোনও একদিন হঠাৎ করেই আসে, ব্যবহৃত কিছু চিন্তাভাবনায় চিড় খাইয়ে আবার নিজের মতো চলে যায় কার এতে কি এসে গেল,  তার কোনো দায়ই যেন তার নেই স্বপ্ন তাহলে সত্যি করে এতটাই বেপরোয়া?  এতটাই দ্রুত?
তবে কি ধরে নেব, এটাই আমার স্বপ্ন?
যেটা হারিয়ে...
আচ্ছ এবার আমি যাব কোথায়? কোন্‌ থানার আন্ডারে পরে এটা? পেপারে একটা বিজ্ঞাপন দেব? তাতে তো আবার ছবি-টবি লাগে... তাহলে?

একবার একটা সিন্থেটিক বল জোগাড় করেছিলাম কমবয়সী ভুঁড়িটাকে সঙ্গে নিয়েই টর্চ মেরে খাটের তলা থেকে বের করলাম ধুলো পড়ে গেছিল ঝেড়ে-টেড়ে, অশ্বিন যে ভাবে বল ধরে, সেই ভাবেই ধরলাম বার তিনেক বোলিং আ্যকশানটাও করলাম লুকিয়ে লুকিয়ে তারপর ভাবলাম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে স্পিন আ্যটাকেও যে কী করে  নো বলটা হলো!

মা এসে বলল, ‘বলটা আবার বের করলি কেন? রেখেছিলাম যত্ন করে... কোথায় আবার হারিয়ে-টারিয়ে যাবে...
যত্ন করে?
হারিয়ে যাবে?
হারিয়ে তো গেছেই, শুধু দিন পর আবার বের করে শুধু ধুলো ঝাড়ব




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন