সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

বিতস্তা ঘোষাল

উরকি  ধান

()

কী বা চাওয়ার ছিল
কী বা দিতে পারি তোমায়
শরীর বা মন! অনেক হলো
তার চেয়ে দেব তোমায় 
এক আকাশ মেঘ,
নদীর ছলাৎ ছলাৎ
কিম্বা দীর্ঘ প্রেমের কবিতা...
হাসছ তুমি? ভাবছ শেষে কবিতা!
তবে দিলাম
সাত সমুদ্র জল - যত ইচ্ছে নিও
তারপর বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেও
এই মন কেমনের শহরে

()

এই যে তুমি নেই
মানে আমিও নেই
কিম্বা আছি নিঃশ্বাসের মতো
অবিরাম বয়ে চলা সময়ও জানে
কার মূল্য কত
আমি জানি সব কথা শেষ হলে
নীরবতাই ছুঁয়ে দেবে তোমাকে। 

()

আজ কোনো কথা নয়
প্রেমের কবিতা শুনব
কবিতা নাকি ঝলসানো
তবে গান শুনব...
আজ কোনো কথা নয়
চেনা পথ ভুল করে
হাতে হাত চোখে চোখ রাখব 
এলমেলো বাতাস -
পুড়ে যাব ভিজে যাব
মাঝ নদীতে আধার এলে
জ্যোস্না গায়ে -
নিমফুলের গন্ধ নিয়ে জোনাক হব
আজ শুধু তোমার আমি
আমার তুমি...

()

কোনো কোনো পথ একাই হাঁটার   
রাস্তায় ক্লান্তি ভরা মিছিল
অজানা বাঁক - হাই রোড কিম্বা খানাখন্দ-
মাথার পর বিবর্ণ একফালি চাঁদ 
সাইরেন বাজিয়ে
ঢুকে পড়ে অন্দরমহলে।
সে পথেও কাদা ছিল-
তবু সেই বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি  
আমরা তখন চলতি হাওয়ার পন্থি


শব্দমালা

কবিতা, তোমার সাথে দেখা
               এক চৈত্রের বিকেলে
হয়তো বছর কুড়ি আগে, হয়তো বা আরো পরে
                      তখন তুমি ষোড়শী
চোখের মদিরতা, ভ্রু’র বাঁকা চাউনি, ঠোঁটের বক্রতা
               রাজহংসীর উন্নত গ্রীবা - আমি ফ্ল্যাট।
সেদিন ঝড় উঠেছিল
সারা শহরে ছাতা খুঁজেছিলাম তোমায় ঢাকব বলে-
কৃষ্ণচূড়া পলাশ ভেদ করে সেদিন গোধূলির আলো মেখে
                      স্পন্দিত এ বুকে তুমি ছিলে-
বহুর আড়ালে, অটোর দীর্ঘ লাইনে, রিক্সার রিফিউস্যালে, ঘর্মাক্ত শরীরে
                       শুধু তুমিই ছিলে বাসন্তিকা হয়ে

সীমান্তের সীমানা ছাড়িয়ে, চীনের দেওয়াল পেরিয়ে
এখন তোমায় নিয়ে যেতে পারি প্যারিস কিম্বা ইতালী
শোনাতে পারি কফি হাতে বিঠোফেন
অনায়াসে সেই দুর্লভ সুগন্ধী দিয়ে মুছে দিতে  
পারি যাবতীয় মান, অভিমান।
কীটসের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে
চিৎকার করে বলতে পারি
কবিতা, শুধু তোমার জন্যই বেঁচে থাকা...

কবিতা কোথায় তুমি?

কবিতা, একটা একটা করে খুলে ফেলেছ তোমার সাজ
মাথার খোঁপা থেকে বুকের ওড়না
                   হাওয়ায় উড়ে যায়-
কাজল-বারো ঘন্টা আয়ু  
সে’ও দু’চোখে বৃষ্টি মাখছে
আইশ্যাডো কেবলই ছায়া ঘনায়

বিন্দু বিন্দু ঝরে পছে ফেসপ্যাক
বহু বিজ্ঞপিত লিপস্টিকের আড়ালে
                দগ্ধ ঠোঁট।
ক্রমশ ধূসর হয়ে যাওয়া
শরীরে ক্লান্তি। শব্দ আসে না, আসে না চৈত্রের ঝড়
তবু তুমি ভিজে যাচ্ছ, গলে যাচ্ছ-
ভালোবাসাহী আতরের আঁশটে গন্ধ
               তোমার সর্বাঙ্গে কিসের ক্ষত?
কবিতা একী রূপ তোমার! পুড়ে যাচ্ছি, জ্বলে যাচ্ছি...

ফিরে এসো,
হাতে হাত ধরে হাঁটব ভিক্টোরিয়ার নুড়ি বিছানো পথে
কুড়িয়ে নেব ইউক্যা্লিপ্টাস থেকে ঝরে পড়া পাতা,
তারপর মুখোমুখি বসে গল্প- আকাশ, নদী, মেঘ কিম্বা শুধুই জীবনের গল্প
গল্প শেষ হলে লিখব প্রতিক্ষিত একটি প্রেমের কবিতা
আর তুমি ছুঁয়ে যাবে যাবতীয় শব্দমালা...



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন