যেভাবে বেঁচে থাকা
একটি জোনাকির কাছে আমি
একটি ঝিকিমিকি আলোর সন্ধ্যা চেয়েছিলাম
তার বদলে জোনাকিরা উড়ে এসে
আমার ঘর পূরবীতে বাঁধে
একটি মাছরাঙার কাছে তার
অপরূপ পালক রঙ চেয়ে পেলাম না
একটি অচিন পাখি ফাগুন রঙের
গুলাল গুলে দিল
আমার কৃষ্ণা নদীর জলে
বসন্তের স্বাক্ষর কচি পাতায়
হলুদ বনের স্বর্ণলতায়—
আর শিশিরের স্বাক্ষর
মুক্তোখচিত ইচ্ছের নিশিবাসে
আমার নাক্ষত্রিক অক্ষরের জন্ম
খসে যাওয়া নাড়ীর টানের মতো
শীতকালের ভোরের মতো
একটা কিছুর ধূসর আবরণে
আমার মনখারাপের কুয়াশা উড়ান
নির্জন শূন্য দ্বীপের ক্যানভাসে
টাইফুন ভেঙে পড়ে অভিমানে
শতাব্দী প্রাচীন তক্ষশীলার জ্ঞানপথে
দীর্ঘ রাতভোর আলো অন্ধকারের যুদ্ধ বিদ্যুৎরঙ প্রাসাদের গম্বুজের রঙ
পাল্টে সাদা করে দেয়
বছরের ধুলোবালি ডিঙিয়ে
বসন্তের শেষ দিনে পদ্মের আবেশে আড়মোড়া ভাঙে কাঞ্চনমালার ঘুম
রামধনুর রঙে সোনা উপচে
শিশুর টলোমলো দুধ পায়ের
স্বপ্ন ঝরায় মায়ের চোখে
ভিতর বাইরে ধিকিধিকি করে
জ্বলতে থাকে রঙবনের ঋতুরাজ
তখন লোকারণ্যে বেঁচে থাকার
আস্ফালন আর শুধু খিদে
কৃষ্ণচূড়ার শহর
তোমার সন্ধ্যা-বাগানে পুঁতে রেখেছি আমার যত যন্ত্রণার শীত ঘাম
ওম্ ওম্ বিষণ্ণতার বরফ
শাদা এনিমিয়া
আমার সব চেনা সন্ধ্যাগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে আমার কৃষ্ণচূড়ার শহর
মধ্যরাতের অচেনা তারার মতো
তোমার অনেক দিনের না ছোঁয়া
পুরুষ হাত ছুঁয়ে যায়
ক্লান্ত সংসারের এপিটাফ
স্মৃতিভ্রষ্ট তুমি চলেছ
পূর্বজন্মের দিকে
আমিও স্মৃতিভস্ম গায়ে মেখে পাড়ি দিচ্ছি আয়ুরেখার শেষ
লোহিত বিন্দুতে
তোমাকে মেখে নিচ্ছি শরীরে
পলাশ রেণুর মতো
পিকাসোর ছবির মতো নিঃশব্দে সাজাবো সংসারের চতুষ্কোণ
বোবা জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে নারীজন্মের পাথুরে দেওয়াল
এই না-কথা বলা চতুষ্কোণকেই কী ঘর বলে পুরুষেরা
একখণ্ড কালো মেঘের তলায়
দাঁড়িয়ে আছি
বৃষ্টির সংকেত নিয়ে
ফুসফুসে লেখা তোমার নাম
ছুঁয়ে দেখব আজ
এবার ঈশ্বরের সাথে ভাসব
একই ভেলায়
খরস্রোতা নদীর ঢেউয়ে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন