বালিঘড়ি
(২)
গল্প বলছে বাবা। একটা নদীর গল্প। গঙ্গোত্রী হিমবাহের সাদা তুষার চাদর মুড়ে বসে আছি আমি। আর বিকেলের রোদে আলতো করে পিঠ ঠেকিয়ে বাবা। বলছে গল্প... পিন্ডারি গ্ল্যাসিয়ারের... “তারপর ভগবান কোত্থেকে কী জোগাড় করে খিচুরি বানিয়ে দিল কে জানে! ঐ ঠান্ডায়, অতখানি ট্রেকিং। পুরো অমৃত লাগছে তখন”।
দীর্ঘ পুজোর ছুটির শেষদিকগুলো এমনি রঙ নিত। ছোটবেলায় আমার ধারণা ছিল, গঙ্গোত্রীর কাছেই কৈলাস আর মানস সরোবর। আর ঐখানেই পুরাণের স্বর্গরাজ্যখানা।
আমি চোখ গোল গোল করে বলি, “ভগবান খেতে দিল? কেমন দেখতে? কোন ঠাকুরের মূর্তির মতো?”
বাবা অন্যমনস্কের মতো বলে চলে, “অমর শেরপা আর ঐ পোর্টার, ভগবান; সেবার খুব করেছিল ঐ দুজন। ট্রেকিং-এ এরাই দেবতা, বুঝলি!”
বাবা অন্যমনস্কের মতো বলে চলে, “অমর শেরপা আর ঐ পোর্টার, ভগবান; সেবার খুব করেছিল ঐ দুজন। ট্রেকিং-এ এরাই দেবতা, বুঝলি!”
একটা নদী সেই কোন এক হিমবাহ থেকে এসে আমার বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যায়... এটুকুতেই তখন ছিল অপার বিস্ময়।
তারপর, যখন নিজে নিজে পুরাণের গল্প পড়তাম, ছুটির দুপুরে বাবাকে জোর করে শোনাতাম ভগীরথের গল্প, শান্তনু আর গঙ্গার গল্প। বাবা শুনত মন দিয়ে। যেন আগে শোনেনি কখনও!
তারপর, যখন নিজে নিজে পুরাণের গল্প পড়তাম, ছুটির দুপুরে বাবাকে জোর করে শোনাতাম ভগীরথের গল্প, শান্তনু আর গঙ্গার গল্প। বাবা শুনত মন দিয়ে। যেন আগে শোনেনি কখনও!
হাই ইস্কুলে পড়াকালীন আমার গভীর অনীহা ছিল পাঠ্য ভূগোল বইগুলির ওপর। বাধ্যতামূলক মুখস্থের ক্ষেত্রগুলিতে বাবার হাতে থাকত বই। আমার অভ্যেস ছিল শুনে মুখস্থ করার।
বাবা পড়ছে... একটানা... “ভাগীরথী, অলকানন্দা, পিন্ডার ও মন্দাকিনীর মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত। হরিদ্বারের কাছে এসে গঙ্গা সমভূমিতে মিশেছে”।
উত্তর ভারতের আর সব নদীর সাথে এক সারিতেই উচ্চারিত হতো গঙ্গা। তবু, যতক্ষণ না সে হরিদ্বারের সমভূমিতে পা ফেলত, আমি বাস্তবের গঙ্গাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতাম পুরাণে।
গঙ্গার চেয়ে গঙ্গাকে ঘিরে যত গল্প... তাদের প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল তীব্র।
আজও পুজোর ছুটি আসে। কিন্তু গল্পেরা আর অমন বিশ্বস্ত ছুটির পশরা সাজিয়ে আসে না।
শুধু হরিদ্বার যাবার টিকিট কনফর্ম হলো কি না জানতে এসে, আমার পিছনে দাঁড়িয়ে পড়ে বাবা। আমার হাতে পূজাবার্ষিকী ‘দেশ’ দেখে জিগেস করে, “শুকতারা কিনিস নি এবার? কীসব পড়ছিস বসে! একটা নদীর গল্প শোনাব চল...”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন