দীপাকে কেউ ভালোবাসে না
(Painted by
Francine- van- hove)
দীপা ঝাল্লিঝাল্লা জামা পড়ে, মেকআপ করে না। দীপা ২৪ এফ হাওড়া। বই পড়ে, চাকরি
করে, হাসতে ভালোবাসে। দীপা নিজেকে সাধারণত কুচ্ছিৎ, ইন্ট্রোভার্ট ও মানুষ ভাবে। অসুবিধাটা এখানেই। বই কিনতে গেলে মাকালকাকু ফ্রিতে
নিজের কবিতার বই দেবে বলে দীপার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে চায়। মাকালকাকু এইভাবেই দীপাকে ভালোবাসবে কথা দিয়েছে। দীপা কখনই মাকালকাকু্র কবিতা পড়তে চায় নি। অতএব প্রেম প্রত্যাখ্যাত হয়। কাকু দীপাকে দেখিয়ে বলে বেড়ান, ওই যে আসছে
স্লাট, রূপ বেচে খায়। আমার প্রেমে পাগল। তারপর কে জানে কী করে দীপা হঠাৎ রূপসী
চার্মিং মেয়েমানুষ হয়ে ওঠে। পড়াকু দীপা হঠাৎ করে হয়ে ওঠে সব্বার ইচ্ছেপ্রেমিকা।
দীপা তবু ঝাল্লিঝাল্লা জামা পড়ে, মুখ ধোয় না। কোনোদিক না দেখে মুখ গুঁজে বই পড়ে।
লাইব্রেরিতে যাওয়ার পথে তার দেখা হয় প্রেমিক বি শর্মার সাথে। প্রেমিক বি শর্মা
বিশ্ববরেণ্য শিল্পী। এক হাতে আঁকা, দু’ হাতে লেখা, দশ হাতে লাল সবুজ পলিটিক্স সামলান। তিনি ঘন চোখে দীপার দিকে তাকিয়ে বলে ফেলেন - তোমার চোখ দুটো না আঁকলে
আমি পাগল হয়ে যাব দীপা। দীপা আকাশ পাতাল ভাবে, তার গরুচোখো ফ্যালফ্যালে পলকের
সামনে প্রেমিক বি শর্মাকে বড় কঠিন দেখতে লাগে। দীপা আঙুল তুলে একটা বাছুরকে দেখিয়ে
দ্যায়। বি শর্মা কিছুই বুঝতে না পেরে আরও ঘন হয়ে বলে- তোমার ভালোবাসি আমি, একদম নিঃস্বার্থ।
দীপার গরুচোখ আরও গরুর মতো হয়ে যায়, দীপা তো নিঃস্বার্থ
ভালোবাসা চায় নি। সে তো মানুষ, তাছাড়া বিফ নিয়ে ভারতে হেব্বি
কেলেঙ্কারি হচ্ছে। আর না ভেবে আস্তে আস্তে সে অটোয় চেপে বসে। এতক্ষণে বি’র চোখ যায় দীপার মুখে, তার
আগে তিনি দীপার টি শার্টের বুকের কোট আবিষ্কারে ব্যস্ত ছিলেন। অতএব বি প্রত্যাখ্যাত হন। তিনি
বন্ধুদের মধ্যে গভীর একাকী হয়ে প্রমাণ করেন, দীপা চোখ
দিয়ে বশ করে। সেই পাগুলে চাউনিতে সমস্ত লোক কেমন একটা হয়ে
যায়! তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু এই রকম পাগলের সাথে থাকা দায়। তাই আস্তে আস্তে ছাড়তেই হচ্ছে এসব। দুঃখ থাকলে তবেই না শিল্প! সমস্ত কিছু জয় শিল্পের নামে।
এর মধ্যে গরুচোখো দীপা আবিষ্কার করে তার চোখ কেমন যেন বাঙ্ময় ও মায়াবী হয়ে উঠেছে। ঠিক
যেন শিল্পীর হাতে আঁকা, তাতে কাজল পরা ছাড়া
আর কোনো গতি নেই। এরপর দীপা ফেসবুক করতে বসে। সাথে ঝাল্লিঝাল্লা জামা আর চার
পাঁচটা কবিতার বই। ফটোশপ ফেমাস ভাট এসে জানায়, তার খুব ভালো লেগে গেছে দীপার এই ঝাল্লিময়তা। তাই
সে ভেবেছে দীপার শরীরের নগ্নতা সে তার একান্ত স্টুডিয়োতে স্টাডি করবে। এত
সুন্দর ঝাল্লিময়তা এভাবে ফেলে ফেলে নষ্ট হয়ে যাবে, তা হয় না। দীপা ভাবে দু’ চারবার। সে নিজেই টাকা জমাচ্ছে ক্যামেরা কেনার জন্যে। নিজের নয়, বরং অন্যের ছবি তুলবে। কুকুর, বেড়াল, শুয়োর, গাধা এইসব আর কি। এর মধ্যে সে উটকো উপস্থিতি
চায় না। সে ‘না’ করে। ফটোশপ ফেমাস ভাটের পরকীয়া চোট খায়। কেবল দীপা এখন দূর থেকে পাস কাটিয়ে গেলে ভাট তাকে নিয়ে
এখানে ওখানে মজা ছুঁড়ে দেয়। হাসাহাসি করতে ভোলে না। দীপা এসব মন দিয়ে স্টাডি করে কারণ সে হাসতে ভালোবাসে। যদিও দীপা দেখে তার নগ্নতা ধীরে ধীরে রূপ পাচ্ছে।
দীপা ভাবতে থাকে। প্রেমের
চিন্তাও আসে মাথায়। চোখ ঠোঁট চার্মনেস সবই সময়মতো আসে, এ ভরা দেহে প্রেম আসে না। ঠিক এই সময়ই আগমন
হয় সবুজকুমারের। সে চির প্রেমিক, সিটি দেয় ‘জাদু তেরি নজর’ গেয়ে। সে চির কবি, নিয়ম
করে কবিতা লেখে পড়ে শোনে, সেসব ঝেড়েমুছে নিজের ভেবে সাজিয়ে নেয় আবার। প্রেম বলে কেঁদে বেড়ায়। হাত পা কেটে কেঁদে কেটে একাক্কার করে, সব্বার বন্ধুদের
সাথে ঘুরে ঘুরে বন্ধুত্ব করে।
বেসিকালি প্রেমিক। এপাশে ভরা কবি তার ওপাশে অনেক ট্যালেন্ট। মাকাল, বি, ভাট, সমস্ত
বন্ধুর বন্ধু ও প্রেমিকদের কথা শুনে সে শলাপরামর্শ করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে
দীপার কাছে। এত বড় বুক বা হৃদয় দেখে দীপা কেঁদে ফেলে। ভয়ে। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি করে দীপা নিজের
ঘরের মধ্যে ঢুকে বড় বড় শ্বাস নেয়। না ভাই খোলা আকাশের থেকে আমার ভাঙা বাড়িই ভালো বলতে বলতে দীপা আয়নার
সামনে আসে। এখন দীপা ২৫ এফ হাওড়া। একটা প্রেমের দরকার। এখন সে সুন্দরী চার্মিং
মায়াচোখের মেয়েমানুষ যে কেবল প্রেমিকা হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছে কারোর। তার ২৫এর টাইট টি শার্ট তাকে বলছে কিরণ হতে। ঠিক তাই করে দীপা। আয়নার কাচে যত্ন করে কাজল দিয়ে চোখ, লিপস্টিক
দিয়ে ঠোঁট এবং পাউডার লাগিয়ে টাগিয়ে একটা ছবি আঁকে। নিজের মুখের মুখোমুখি একটা হিথ
লেজারিও জোকারের মুখ। এই প্রথম দীপা প্রেমে পড়ে যায়...। দীপা তাকেই ফিসফিস করে
প্রেম নিবেদন করে - ‘এখানে চাকার দাগ ঘাসে / কে আর তেমন ভালোবাসে।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন