বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬

ভূদেব ভকত

আয়না

আমার নাম লিলি। অথচ কেউ ডাকে লিলিবিস্কুট, কেউ লিলিবার্লি, আবার কেউ  লিলিপুট। কী যে মুশকিল! আমি সাজতে খুব ভালোবাসি। আর সাজগোজের জন্য আয়না খুবই জরুরি। অথচ আজই শান্তিনিকেতনে এসে যে বাড়িতে উঠেছি, সেখানে সব কিছুই আছে, কিন্তু কোনো আয়না নেই। সোনাঝুরি অঞ্চলে সদ্য মস্ত বাগানঘেরা একটা সুন্দর বাড়ি করেছেন প্রবোধবাবু। তিনি আমার কর্তার এক পুরনো বন্ধু। বহুদিন পর বন্ধুর খোঁজ পেয়ে তাঁরই আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতনে আসা। এতদিন কর্মসূত্রে  দিল্লীতে ছিলেন। অবসর নিয়ে এখন শান্তিতে থাকার জন্য শান্তিনিকেতনে বাড়ি করেছেন। খাসা বাসা। মানে যাকে বলে ভালোবাসা। বাড়ির নাম রেখেছেন ‘ঋষি অরণ্য’। সুন্দর নাম। ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবই কেনা হয়েছে, শুধু ঐ আয়না কেনা বাকি।

কী যে করি! টিপ পরতে গিয়ে কপালের মাঝখানটা ঠিক বুঝতে পারি না। চুল  আঁচড়াতে গিয়ে সিঁথি খুঁজে পাই না। লিপস্টিক ঠিকঠাক লাগানো হলো কিনা বোধগম্য হয় না। এভাবেই আয়না ছাড়া দুটো দিন কেটে গেল। মনে সুখ নেই। আমার এত কালের চেনা মুখটা আয়নার অভাবে কেমন যেন অচেনা বলে মনে হচ্ছিলএছাড়া  বিনা আয়নায় শাড়ি পড়াও যে কী বিড়ম্বনা! বাগানের এক কোণে ঝোলানো একটা দোলনা হাতছানি দেয় আমাকে। কিন্তু আমার দুলতে ইচ্ছে করে না। সাজগোজ পরিপাটি না হলে কি দুলতে কারও ভালো লাগে!

অস্বস্তি নিয়েই ঘুরে বেড়ালাম কলাভবন, উদিচি, শ্যামলী। কাচের ঘরে রবি ঠাকুরের কালো গাড়িটা দেখতে গিয়ে নিজেরই প্রতিবিম্ব দেখে আমার শাড়ি ঠিক করে নিলাম মনে মনে ভাবি, তিনি এত গান লিখেছেন, কিন্তু এই বিষয় নিয়ে গান লিখতে তিনি বোধহয় ভুলে গেছেন!

প্রবোধবাবু শিল্পীমানুষ। আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরে বললেন, লিলি তোমাকে কেমন যেন উদাস উদাস লাগছে!

আর তার ঠিক পরের দিনই কী আশ্চর্য,  তিনি আমার মনের ব্যথা বুঝতে পেরে মস্ত একটা আয়না কিনে নিয়ে এলেন। আহা! কী সুখ! কী সুখ! যেন কত যুগ পরে নিজের মুখ দেখতে পেলাম আবার! মনের আনন্দে দোলনায় দুলতে দুলতে গান  ধরলাম – আমি চিনি গো চিনি তোমা আ আ আ রে... 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন