বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

তমাল রায়


হেমন্ত অরণ্যের সেই পোস্টম্যান

এ লাইন সে কবে থেকেই পরিত্যক্ত। হেমন্ত শস্যক্ষেতের মতো
কেউ যায় না বলেই ঝোপঝাড় আগাছা। খুব ধীরে লাইন পর্যবেক্ষণের জন্য এই রেক দৌড়চ্ছে তাকে নিয়ে। যেমন করে রোল অন করে ক্যামেরা, অনেকটা তাই। হলুদ পাতা ঝরছে। ঝরে পড়ছেই। শিশির কিছু, রোদ এসে এখনো ছোঁয়নি হয়তো, এ রোদে তেমন জোর কই! ধান কাটা কিছু হয়েছে, কিছু অসম্পূর্ণতা। দু'দিনের দাড়ি না কাটা গালের মতোই  বিস্তীর্ণ ক্ষেত, যেন অশৌচের বিষাদ ছুঁয়েছে। শূন্যতার ঝোলাটা কী ভীষণ বড় হয়ে  গিলে নিতে আসছে তাকেই! সে যখন ভালো ছিল, ছিল কি? আকাশের দিকে হাত  তুলে পৃথিবীর নিভে আসা আলোয় হাত সেঁকতে সেঁকতে বলে ফেলতো বেঁচে থাকার কথা। খেলনা নগরের কথা। কীভাবে হাতির লেজ ধরে ছুঁড়ে ফেলত সে, কীভাবে  বাঘের মুখে হাত ঢুকিয়ে দিত নির্ভয়ে, ঘোড়ার পিঠে চড়ে কী উদ্যাম দৌড় -  এ সবই সে এক খেলনা নগরের কথা, বড় হওয়া যা নাকি কেবল বয়স বাড়ায় উচ্চতা নয়, তখনও সে কি খেলনা নগরের মধ্যেই ঘাম ফেলে? শ্বাস? কিছু ওম ওথলানো দুধেল সুখের কথাও ছিল সে খেলনা নগরেই। বসন্ত আসলে ভয় লাগত তার, তেমন ভালো কেউ বাসলে ভয় কেন হয়?

এখন হেমন্ত। হাল্কা শীতের ছোঁয়া। দাদু বলতেন - শরীরের উত্তাপ নিভে আসলে হেমন্ত আসেসে ছেড়ে যেতে চাইছে চেনা পথ ঘাট চেনা আসঙ্গ-অনুষঙ্গ, যাবে কই  জানা আছে? স্মিত হাসিতে মুখ ভরিয়ে, সে এগিয়ে চলেছে, যেভাবে ক্যামেরা রোল করে, সেভাবেই। পেছনে ফেলে যাচ্ছে সব জাগতিক দৃশ্যপট, যা মনে করিয়ে দেয় এখানে প্রাণ ছিল। ছিল? ভেসে আসছে ধান কাটার গান। আকাশে নৈঋত কোণের একটি নক্ষত্র তাকে ডাক পাঠিয়েছে। সে উত্তর করতে পারেনি, সব চিঠির কি উত্তর হয়ভাবতেই বা পারে কই!  এই রেক নিয়ে আর কিছু পর সে চিঠি হয়ে মিলিয়ে যাবে দূর নক্ষত্রের পথে। পরে কিছু পর। এই পথে আবার হয়তো রেল গাড়ি যাবেকোনো এক বসন্ত সমন্বিত বসরাই গোলাপের স্টেশনে, সেখানে নিশ্চিত মানুষ থাকবে অনেক, তাই নাসে থাকল না। অথবা থাকলই। কী এসে যায় প্রকৃতপক্ষে এমন মানুষের থাকা বা না থাকায়! এ বসত ভূমি রইল। ফুলহাতা পুল ওভার, কার্ডিগান  রইল। শীত আসলে যেন ওম দেয়, দিতু কে, হ্যাঁ, তার না হয়ে ওঠা  সন্তানকে। সে ছিল হেমন্তের অরণ্যে অযাচিত পোস্টম্যান হয়ে।
- দিতু এসে পৌঁছলে উত্তর করিস বাবা। অপেক্ষা... তোর মা'কে বলিস যেন সকালে  এন্টাসিড খেতে না ভোলে, সারাদিন খুব গ্যাস অম্বলে কষ্ট পেত বেচারা।


1 টি মন্তব্য: