বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

অচিন্ত্য দাশ

খুশির বেলা


রাখাল সমাদ্দার স্ট্রীটে ছ-তলা এই ফ্ল্যাটটা সাত বছর হলো হয়েছে। পাশের জমিটা মামলা-মোকদ্দমায় আটকে থাকায় খালি পড়ে আছে, নয়তো ওখানেও এতদিনে কিছু একটা গজিয়ে উঠত।
সকালবেলা। তিন তলার বারান্দায় শ্রীমান বিট্টুর আবির্ভাব। বয়স সাড়ে তিন।  “ও মা দ্যাখো, দ্যাখো, কালো কুকুরটার সঙ্গে কতগুলো বাচ্চা কুকুর – কেমন  করছে দ্যাখো – কেমন পেটে এসে গুঁতোগুঁতি করছে – হিঃ হিঃ, কী সুন্দর! মা গোনো তো ক'টা”! মা বলল – “তুই গোন”। “এক দুই তিন সাত আঠারো ...” বিট্টু এখনো গুনতে শেখেনি। মা গুনে বলল, “ছটাতুই দ্যাখ্, আমার কাজ পড়ে আছে" বিট্টু গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে গেল, সে আজ মহাখুশি। 
দু-তলায় শিল্পী বলে মেয়েটা কলেজে পড়ে। উনিশ। দেরিতে ওঠা অভ্যেস, কিন্তু আজ সাড়ে আটটার মধ্যে উঠে পড়েছে। মনটা ফুরফুরে, খুশিখুশিআজ চূর্ণির  জন্মদিনের পার্টি। সমুদ্র, শতদ্রু সবকটা ছেলে আসবে। সমুদ্রটা ক'দিন হলো বড় ফ্লার্ট করছে – বেশ চোখাচোখা জবাব দিতে হবে, যা জমবে না...

তিনতলার পূবদিকের ফ্ল্যাটটা সম্বিত বসুর। আটত্রিশ। বড় কাজ করে। দাড়ি কামাতে গিয়ে আয়নায় নিজেই নিজের মুখে এক চিলতে হাসির ভাবটা নজর করল। আজ জি-এম আসছে। এদিকে আলোক বিশ্বাস যে রিপোর্টটা বানিয়েছে,  তাতে বেশ ক'টা ভুল আছে। কথায় কথায় জি-এমের কানে তুলতে হবে। এ বছর  তার প্রমোশন কেউ আটকাতে পারবে না।

চারতলার নিমেষ প্যাটেল বয়স পঞ্চান্ন আজ সকাল থেকে গুনগুন গান গাইছে।  তার কাছে পাকা খবর, আজ সেনসেক্স আঠাশ হাজার পেরোচ্ছে। শ' খানেক  টেকনোলজি শেয়ার বেচবে – জবরদস্ত প্রফিট – হুঁ হুঁউ... ম্যাঁয় নহি মাখন খায়ো...

ছ'তলার শ্রীপদবাবু লাঠি ঠকঠক করে বারান্দায় এসে তাঁর চেয়ারটিতে বসলেন।  এই আশ্বিনে ছিয়াশিতে পড়েছেন। আয়া এসে হরলিক্স আর দুটো ট্যাবলেট রেখে গেল। -- আরে! কালো কুকুরটা বাচ্চা দিয়েছে... একটা দুটো তিনটে, চার পাঁচ আর ওই একটা। ছ' ছটা বাচ্চা। মা-কুকুরের গায় লেপটে আছে সবক'টা। কী যে সুন্দর লাগছে, মনটা তাঁর ভারি খুশি হয়ে উঠল। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন