রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়

সাইকায়াট্রিস্টকে বলা সমস্ত কথাবার্তা

নইলে ভাঙা যায় ভুবনকেও
মানুষ কাকে দেবে রিভলভার
তুমিই মনে করো শীতের শব
মাংস বেচাকেনা থালায় আর
রক্ত নাকি জল দাঁড়িয়ে ঠায়
মাথার ঘরে স্তূপ কঠিন চাঁদ
বালিতে মৃত যার জিভ চিকণ
লাফিয়ে ওঠে শব তৎক্ষণাৎ
    
প্রথম সাক্ষাৎ

তিমির স্মৃতির স্বভাব কীভাবে যেন আমারই ভেতর দিয়ে শীত নিয়ে উড়ছে  
রাবণ দাহ্য রাম দাহ্য রেশ দাহ্য মেহ্‌ফিলে
আলোকচিহ্ন দোকানে রেকর্ড বাজছে, গভীর খদ্দের আসে
সয়াবিন শব্দে পাহাড়ের ব্রিজে ছায়া ফেটে যায়
চান ক’রে ওঠে শিশু, অব্যয় পালন হয় গ্রামে, ট্রাক্টরে রবিশস্য কারক চাষ
বেফিকর তামা গ’লে যায়, মোচাফুল হ্রস্ব ও প্লুত স্বরে ঝুলন্ত এ’ দেশে

দ্বিতীয় সাক্ষাৎ

হরিণের চোখে নদীর ভূগোল পিপাসার্তের আলজিভ দ্বারা উচ্চারণযোগ্য
ঘুঙুর খুলছে এক পাখি, ভিন্নগৃহস্থেষু,
উড়নি আড়াআড়ি ক’রে ধরো, পাতালে
ঘরের লাভা ও ম্যাগমায় পাখি পুড়ছে, পাখির আঁচড় আছে দুধে।

তৃতীয় সাক্ষাৎ

খোলশ প্রয়োগ করা হয়েছে এ’ জীবনে
মোটা দাঁতওয়ালা শাদা চিরুণির খোল।।  
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্লাস্টিকের স্বপ্ন কতটা উপকারি তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইয়ুঙ পরবর্তী বিজ্ঞানীরা। জোড়া চিঠির আঠা জড়ানো আলো; শব্দের বাকলে কখন প্লাস্টিক সরিয়ে আমি দেখছি তুমি চুল আঁচড়াতে ভুলে গেছ। ও, ভালো কথা, ‘আলো ক্রমে আসিতেছে’ লেখা ছিল বটে। আলো কিন্তু ক্রমে আসে নাই।

চতুর্থ সাক্ষাৎ

ব্লু-ফিল্ম শোনা অভ্যেস করছি ইদানিং। ধ’রে নিচ্ছি এ’ তোমারই শীৎকার। আগে জানতে পারিনি। এইভাবেও ইন্দ্রিয়গোচরে আসে শতেক কিমি.। মিছিলের মাঝখান থেকে হঠাৎ ডেকে উঠল কোকিল। ঠিক সূর্য ডোবার সময়, চাঁদও উঠতে যাচ্ছিল, পায়ে পা ঠেকে গেল দুজনের।
  

পঞ্চম সাক্ষাৎ

এই অত্যন্ত গুহা থেকে বেরোলে, যে বাইরেটা, একটি সুড়ঙ্গ। সারা শহর জুড়েই এই সুড়ঙ্গ আছে। সুড়ঙ্গের দেওয়ালে যে দোকান-বাড়ি-বাজার-দপ্তর, সাইকেল-মোটর-রিকশা আরোহী-চালক, এঁদের ছোঁয়া যায় না। শহরটাকে সত্যি ও জীবন্ত দেখবার জন্য দেওয়াল জুড়ে এই লেসার শো। আয়নার প্রচলন নেই এই গুহায়। মানব ও বস্তু সমূহের সমস্ত ভঙ্গিমার স্মৃতি আয়নাতে আর নেই। আয়নারা পৃথিবীতে মূক ও বধির ছিলই, এখানে অন্ধ আয়না পাওয়া যায়।

ষষ্ঠ সাক্ষাৎ

একটা সিঙ্গল বেড খাটের সমান ক’রে ফেলা গেছে জীবনটাকে। আচারের গন্ধে যখন জিভে লালা আসছে না, বুঝলাম, স্মৃতি থেকে বাগান উড়ে গেছে। সমস্ত পা ফেলা তিতো ও কটূ। চুল, চামড়া, চোখ খুলে এনেছি হে নিখিলপতি। কানটুকু থাক। শীৎকার শুনে যাব।

সপ্তম সাক্ষাৎ

আর কোনও কাজ বাকি আছে ব’লে বিছানা থেকে নেমে পড়ার প্রয়োজন নেই এ’ জীবনে। আর কোনও কাজও বাকি নেই এই সিঙ্গল বেড সমান মহাদেশে। এখানেই যেটুকু সমুদ্রপ্রবাহ, বায়ুস্রোত, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদক্বচিৎ কেউ এলে, আমি তার অপাঙ্গ নজর করি। যতটুকু গুপ্তরতিতাপ অন্নজলে ঠাঁই পায় এ’ ঘরে, পাক। বসেছিল, উঠে চলে যাবার পর যতটুকু তানপুরা ফেলে যায় মানুষ, মানুষের ভর ও ছায়া, তাতে তার বেঁধে নেওয়া যাবে সময় সুযোগ মতো।
 
অষ্টম সাক্ষাৎ [বিকেল]

প্রাণবন্ত লুঙ্গির সাথে সহবাস। লুঙ্গিরও যোনি আছে। স্তন ও বৃন্ত, নাভি। মিলনোদ্গ্রীব লুঙ্গি আমার ঘরজোড়া। কোন্‌ সমস্ত মানুষ আমার সাথে দেখা করবে, লুঙ্গি ছাড়া? লুঙ্গির সাথে এই যে রতিক্রিয়া, যৌনাচার, লুঙ্গি কি তার স্বভাষা প্রবাহিত করতে পারছে আমারও ভেতরে? আমিও কি পাঠাতে পারছি তার কাছে মনুষ্য-ভাষা?  আমরা কি আসলে লুঙ্গি-মানুষ? মানুষ-লুঙ্গি?

অষ্টম সাক্ষাৎ [প্রাক্‌ সন্ধ্যা]  

পুবের দুঃখ যেভাবে নাও, হাস্য জারিত দুদিন বৈকৃষ্ণকুয়াশা গলায় ভাঙছে, একটু আধটু রাধিকা হই। দরোজা কতটা করাত তীব্র, শব্দ ফিরে যায় মন্ত্রবলে। খণ্ড কুণ্ড পাখির ভোগ্য পাখিরা যেভাবে ঘর তোলে। রেশমভবানী তুলনাতপ্ত মুকুট গাছ জন্ম নেয়।  ব্রতফুল কী স্পষ্ট তোমার? পুনর্জন্ম মিথুন ন্যায়? হাসির দুঃখ যেভাবে নাও, পূর্ব জারিত দুদিন বৈ গাছের শ্রীখোল বাজলে বুঝি আমি তো গাছের বাজনা নই।

নবম সাক্ষাৎ

গুহাক্ষরণ হয়। গৃহক্ষরণ হয়। মন্ত্রমূলস্তব আছাড় খায় এই চণ্ডপ্রতিমাশব্দে। কাল আরও একবার স্মৃতির বালিশ ছিঁড়তে চেয়েছি। তুলো নয়, শিমুল বীজ ছড়িয়েছে মার্বেলের মতো। মাথার পেছন দিকে কোনোদিন আর যেতে পারব না। স্মৃতির শিরাগুলি জ্যোৎস্নায় বেহুঁশ প’ড়ে থাকবে। শকুন উড়বে আকাশে।

দশম সাক্ষাৎ

বিছানায় অনুমান হয় অসংখ্য, বিস্তৃত বাঁশি। সারাজীবনের সমস্ত বিছানাগুলি, জড়ো করি, স্বমাংসচ্যুত হয়ে বসে থাকি বিছানার বিরাট মাঝখানে।

একাদশ সাক্ষাৎ

দু’মানুষ উঁচু এই ঘরে দুটো মানুষ নেই। দুটো মানুষের জয়ধ্বনি নেই কথাটি ফুরোলেঘরের ফলাফলগুলি সরিয়ে নিন। রোদস্থান থেকে তুমি আসো, চামচে ভেসে আছে গোখরোর বুক। জটা ও কুঁজ বেঁধা ব্যাপ্তবিষ, কুয়োর এত নীচে গৃহস্রোত।

দ্বাদশ সাক্ষাৎ [সন্ধ্যা]

ঘরের বাইরে যাচ্ছি না। মাছের মুখের মতো এ’ শ্রাবণ-অসুখ।
বিছানার ওপর দিয়ে যে জাতীয় সড়ক গেছে, সুরক্ষিত রন্ধ্রচক্র হাওয়ার শিশুরা।
বাছুরের অন্ধকার দপ্‌ ক’রে পিছলে যায় বাথরুমে।
   
দ্বাদশ সাক্ষাৎ [রাত]  

স্তম্ভ উপহার পায়, কাফের যবন (তেজস্বী ঘুম ছাড়া কে যোগ্য সুতীক্ষ্ণ নোঙরে!) 
স্তনাগ্রে কান্না আসে শৌচ শ্রাবণ, আগুনই জ্বলে ওঠে নেভানোর পরে।
একটু ঘ’ষে তোলা মানচিত্রভাষণ, পাখির দেহ থাকে শাস্ত্রে নিষেধ
ঘূর্ণনাভি সে প্রতিমা কারণ, চক্র ভেঙে যাক ঊনিশে বিশে।
দুলবে ধর্মে কে বাগানচ্যুত, আয়াতে লুকোনো জল ন্যূনক্ষার—
(এই), খেলা কিন্তু বিতর্কিত, অর্ধ জয়লাভ অর্ধ হার।

ত্রয়োদশ সাক্ষাৎ

পাতাল গোল হয়ে সকালের মরণঝাঁপ তুলে দেখছে। জীবন্ত বালিশ ঘিরে এক স্বচ্ছ সিংহ, আমাকে দ্যাখে। চক্রলতাবীজ ওড়ে, খাদ্যগুচ্ছ বানায় লোকজন। আমি যুদ্ধ করি তোমাকে একটা ফোন করার জন্য। ভাবি, দাঁতগুলো মেজে এসে করি। এরপর মনে হয়, স্নান ক’রে নিলে বোধয় শক্তি পাব। স্নান সেরে ভাবি, কিছু খাওয়া দরকার, না খেলে ফোন করতে পারব না। এইসব ভেবে ভেবে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। আজকেও আবার মেঘলা। আবার টিপ টিপ বৃষ্টি। এখন, পাতাল গোল হয়ে বিকেলেরও মরণঝাঁপ তুলে দেখছে।

চতুর্দশ সাক্ষাৎ

লৌহচিকন মুহূর্তে সুসম্পন্ন পাখিটি, জগতে নম্র হবে। স্বপ্নে, আপনার মৃত্যুসংবাদ শুনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। সম্পূর্ণ শাদা আলোয় শস্য খারিজ হয়, কাঞ্চনরঙ জল যে-নিয়মে মাখামাখি করি, কুরুশ-ঘুম তারই একজনশোল মাছের চামড়ার কথা ভাবো একবার, তার প্রকীর্ণ চত্বরে একসার মৌচাক। এইসব কথা যে আপনাকে বলছি, এখন আপনি ‘লৌহ’, ‘পাখি’, ‘শস্য’, ‘ঘুম’, ‘শোল মাছ’, ‘মৌচাক’ — এসবের প্রতীক-অর্থ খুঁজে দেখুন। তারপর ‘মৃত্যুসংবাদ’, ‘শাদা আলো’, ‘খারিজ’, ‘কাঞ্চনরঙ জল’, ‘কুরুশ’, ‘চামড়া’ — এসবেরও ফ্রয়েড-ইয়ুঙীয় অর্থ দেখা দরকার আছে বৈকি। শেষে, সব কিছুকে অবশ্যই ‘স্বপ্ন’ ব’লে লিখে দেবেন চক্রান্তকারী প্রেসক্রিপশনে।

পঞ্চদশ সাক্ষাৎ

তৈজসপত্র রেখে আসি বরফবাজারে। আজ, বরফধর্ষণ রাত। বোঝো? এর মানে বোঝো? এই ওভারল্যাপিং আলোর অন্তত একটি, মগজে রক্ততামাফুল হয়ে উঠতে পারে। হিস্‌সা-সঙ্কুল স্বদেশ, এজমালি স্বদেশ, পোঙায় মধু, মন্ত্র, মালা ও দর্পণ। আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তার যোগফলপ্রান্তে নির্মীয়মান আরেকটি মানুষ। আমি মনে হয় বোঝাতে পারিনি।    

ষোড়শ সাক্ষাৎ

খসখসে ও ক্ষীণ হ’ল এ’ মিথুনব্যঞ্জন। সম্প্রদায়ের দিকে তাকালাম। দেখি দাঁড় ও নৌকা। পুং ও স্ত্রী লিঙ্গ। এই শ্লোকটিকে গ্রেফতার ক’রে নিয়ে যাচ্ছে স্বদেশের তুচ্ছতাচ্ছিল্য

সপ্তদশ সাক্ষাৎ

কল্পনায়, তোমার সঙ্গমকাল, ভাবি। কীভাবে বলছো, ‘দাঁড় বাও মাঝিইইইইই...  আরো জোরে লগি টানোওওওওওও...’নৌকা টলমল ক’রে ওঠে। জল ছল্‌কে ঢোকে উক্ত নৌকায়। সেভাবেই, আমিও উচ্চারণ করি সেই একই শব্দ। বাক্যধ্বনি। পতনশীল শাদা ও ঘর্ষণকাল, সারাদিন অশ্বারোহী থাকে সূর্যাস্ত বাজিয়ে।

অষ্টাদশ সাক্ষাৎ

পরিস্থিতি সাপেক্ষে ঘটা চিন্তাগুলো লিখে রাখতে বলেছেন আপনি। এ’ নিরাকার মৈথুন কী ক’রে লিখব বলুন! আমার ধড়দ্ধাত্রী, স্পষ্ট হও। ক্রীড়াকারণ থেকেই  এত বড় রাত গম্ভীর করেছেন তিনি। আয়ুমণ্ডপে নিয়মসম্মত ভোগ রাঁধো হে ঠাকুর।

ঊনবিংশ সাক্ষাৎ

চিহ্নশিক্ষা শেষে নূপুরশক্তি কি হৃত হয় না মানুষের? অট্টহাস্য কি ৮ মাত্রার? মানে কাহারবা তাল? ১টি তালি ১টি খালি? ধা গে তে টে/না গে ধি না। চমৎকার ঘুম কোথায় পাব। তোমার নৌকায় যেখানে দাঁড় বাইছে মাঝির অভিষেক।

বিংশ সাক্ষাৎ

নড়ছে, ভয় পাওয়া কাপড়চোপড়। শব্দসমাজ। আজ, অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে, সারাদিন স্পষ্ট শুনেছি পাঁঠার পবিত্র চিৎকার। এ’ লেখা প’ড়ে আপনি বলছেন, ‘মন ভ’রে গেল’। বলছেন, ‘দারুণ লেগেছে’। মাথায় কী আছে? বাল না বোকাচোদা? খ্রীষ্টহত্যা হয়ে গেছে। তার দায় নিয়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়াইপতঙ্গবর্ণেরা আসেন, স্বোপার্জিত কাগজকুণ্ড দেখে চকচক করে এ’ গুহায় বাঁশের বল্লম।

একবিংশ সাক্ষাৎ

লোকদেবী, কাল তাঁর আলোশ্রুতি ভেঙে স্তূপস্তন রেখেছেন ব্রাহ্মণরসে। সূক্ষ্ম শ্লোকে বলেন আলো নিভিয়ে দিতে। যুদ্ধস্থানে সে কী জাফরান! ক্রূরচন্দন সম্ভবত আসেনি তখনও, তিনি দেবী থেকে লোক হয়ে গেলেন।

দ্বাবিংশ সাক্ষাৎ

স্বীকার করছি, রাক্ষস মারফৎ এ’ জ্যোতির্কৌটো পেয়েছি। কৌটোর মধ্যেই ছন্ন আহার ও ঘুম। সাকার চাদর আজ সারাদিন ভেদ করতে পারিনি। অন্ধকারপটু এই বর্শাকাল, সামন্তসাপ, একে ভয় পেতে নেই? অজগর-কষ্টের দেশ, চলাচল করে কাঁকরনগরী পদ। এই জবাখড়্গে আমার শব্দশ্ছেদ হোক।

ত্রয়োবিংশ সাক্ষাৎ

প্রতিটি বাক্যজন্ম থেকে ভয়ভুক্ত হই। বালিশসন্ধি ছুঁয়ে সেলাইয়ের নাছোড় দৃশ্য ঘষি। সেলাই কিন্তু মন্ত্রধন ও জীবন্ত। আমি যেহেতু ভাষ্যবিধি মেনে চলতে পারছি না, তাই তোমার অসামান্য অন্তরীক্ষ এ’ কৌটোর শান্তিপুকুর নয়।

চতুর্বিংশ সাক্ষাৎ

বিছানায় সুপুষ্ট গর্জন ক’রে জীবনটি ফুরিয়ে গেল। যোগিনীবান্ধব লাগা আমার ফলন্ত দেহটি তার আগে বুকমার্ক ক’রে রাখা যায় ডাক্তার? আবার বর্ণমালা, ভার্ব, টেন্স, প্রিপোজিশন কতদূর আয়ত্ত্ব করা যায় পঠনসন্ধ্যায়? সুকঠিন  ডেরিভিটি, লগ ও ক্যালকুলাস? নানাগুঞ্জ নদীকোণ ভালোজল পাথরে দিব্য। আছে? তাহলে আলাদা কোনো মাধ্যাকর্ষণ এ’ কৌটো সমুদ্রে ফেলে দিক।

পঞ্চবিংশ সাক্ষাৎ

মাছি হিঁচড়ে নিয়ে গেছে মেঝের ও-প্রান্তে কোনো লবণবঞ্চনা। রমণে ফর্সা নদী জল খুলে কুণ্ডমণ্ডপ। তিনিই আত্মখানকী, রাতের আয়ু যাকে স্বনামে দিচ্ছি।

ষট্‌বিংশ সাক্ষাৎ

ভাত আসে পাশের ঘর থেকে। যৌথ খাদ্যাভ্যাসকে শস্যালংকার বলে। খাওয়ার শেষে, শকড়ি হাত নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ব’সে তোমরা কী বলছ, ভাবি। কীভাবে বলছ।  এই অনুভূতি স্বপ্নে দেখব ব’লে স্মিতহাস্যে নিজেকে প্রস্তুত রাখি, ঠিক।

সপ্তবিংশ সাক্ষাৎ [বিকেল] 

শ্লেটের সুবিধা হ’ল, পরোক্ষে সে ছড়িয়ে যেতে পারে
তোর্সা বাহিত দূর্গঘুন, মাথার খুলিতে, অন্ধকারে।।
রাশি রাশি গড় চক্র কেল্লা, দোষ চলাচল বেরিয়ে আসে
আলোটি মণ্ডিত একতারা জল, সরোদ বাজছে ভারতবর্ষে।।

সপ্তবিংশ সাক্ষাৎ [উত্তর সন্ধ্যা]

ছায়াসুদ্দু মানুষ দেখতে ভালো লাগে। ‘আমি বেঁচে আছি’ — এই তিনটি শব্দবন্ধকে সত্য ও যথার্থ প্রমাণ করতে কয়টি ও কী কী ছায়ার প্রয়োজন হয় মানুষের? আমি অনেকদিন কোনো মানুষের ছায়ার পুরো নকশাটা দেখি নি। নিজেরও, না। এ’ গুহার আলমারি, টেবিল, জলের বোতল, টেবিল ক্লথ, র‍্যাক, টুল ইত্যাদির সাথেও সম্পর্কের সরলতা, বোঝা হ’ল না আমাকে গ্রেফতার করার আগের দিন, তোমার স্তন অঞ্চলে একটি জ্বলন্ত রিকশা ঢোকে।

অষ্টাবিংশ সাক্ষাৎ

দ্রিমিকি দ্রিমিকি দ্রাম্মা দ্রাম
দ্রাদামা দ্রাদামা দ্রামি দ্রাম।।
দ্রাদাম দ্রাদাম দ্রামি দ্রিদা
দ্রামে দ্রামো দ্রামু দ্রিতা।।

নববিংশ সাক্ষাৎ

মাথার পাপড়ি ও পরাগ ঠাসা কলাপমণ্ডলে যত্নে বালতি ফেলি। খঞ্জজল পড়ে দেবতাবালিশে। আদিমার্জিত দেবী অকুস্থলে সৃষ্টি করেন কর্ষণ। অস্ত্রচিন্তা গুনগুন করে জিওল গোলাপে।

ত্রিংশ সাক্ষাৎ

উন্মাদের ভেতরে সুবর্ণমেঘ ধামাচাপা দিয়ে আছে ভালোবাসার বাদাম দুঃখ, একবার তুমি রাস্তায় মশারির আপাদমস্তক রেখে যাও বেড়ালের হৃদয়ে জন্মানো হাসি, উড়ন্ত রোদের স্বস্ত্যয়ন কারো ভেতরে উল্লেখ বসে থাকতেই পারে যেরকম অন্ধ গড়ায় উন্মাদ, শুধু উন্মাদই একমাত্র বসে দেখছে

একত্রিংশ সাক্ষাৎ

পুকুরে, পাখিরা ব্যস্ত, পাখির আলোয় যেখানে নীচু এবং ঝুঁকে বুড়ো মেহগনি আজ ঘরে ঘরে চেয়ারের হাতল একে অপরকে সারাদিন ক্লু পাঠাচ্ছে টের পায় উন্মাদ রাতে ওরা খুলে আসবে চেয়ার থেকে খুঁজে নেবে কেটে নেওয়া গাছের গুঁড়িটা পুকুর পারে তখন রাত জেগে সে আছে উন্মাদ এ’ দৃশ্য এ’ প্রেম দেখবে লে ক্ষমাপন্ন এই আবৃষ্টি চালান হচ্ছে গৃহভঙ্গের টুঁ-শব্দে দহর নীলাচল, হাসছো মেধাতিথি হাসছো? দ্যাখো, তোমারও পায়ের অতীত

দ্বাত্রিংশ সাক্ষাৎ

এত যন্ত্র এত হারমোনিয়াম এত বাঁশি এত বই লেখা খাতা কবিতা গল্প প্রশ্নপত্র বিল বাজেট অঙ্ক সব তো গাছের বাজনা গাছের কবিতা গাছের প্রশ্ন গাছের গায়ে গাছের অঙ্ক গাছের চেকবই গাছেরই পাশবুক ভোরের নদীতে যত্নে দাঁড়িয়ে শানাঞি তাকে ঙ্গাত করছে বিসমিল্লাহ্‌ অন্যরকম একটা ফুলবাগান কষ্ট পায় নিজস্ব জন্মে তার রাখাল লুকিয়ে আছে কমন রুমে রাখাল কি উন্মাদ? যেন তার রিপু ফুলে আছে প্যান্টের ভেতর বৃষ্টির প্রাগৈতিহাসিক হাড় হয়তো রাখাল রাখালির গম্বুজ ধুয়ে দিচ্ছে শুনশান দিয়ে ওর জননীদ্বারে জিভের কুর্নিশ জানাচ্ছে রাখাল একটু পরে ভোর হবে যখন রাখালি উম্‌ম্‌ম্‌ম্‌ বলে উঠবে মাটি বোঝাই লরি এসে দাঁড়াবে, পুকুর পারে
    
ত্রয়োস্ত্রিংশ সাক্ষাৎ

আজ আমিও বেধড়ক পেটালাম, তাঁর আয়ু। দূর দূরান্তের সান্ধ্যবিজ্ঞান জড়ো ক’রে। শিকারমন্ত্র এসে, গোগ্রাসে প্রসারিত করে বাল্যভোগ। বোবারা প্রশ্ন করে : হে পুন্নাম নৌকার মাঝি, তাহলে কে পাগল!

চতুস্ত্রিংশ সাক্ষাৎ

শূন্যমঙ্গল পেতে বসে আছে লিঙ্গ, অণ্ড, গুহ্য, ঢেউ। তোমার মূর্তিপুষ্ট কাপড় যে খুলছি, স্মৃতি ও শ্রুতিবর্ণ সহায়। শাদা ব্রেসিয়ার অব্দি চলে যাবে এ’ কৃষিসভ্যতা। ধ্যানে লাফ দিয়ে প্রসন্ন মধ্যরেখা দিয়ে যাচ্ছ। বনমধ্যে মোটা ও দীর্ঘ হয় শস্যধাম।

পঞ্চত্রিংশ সাক্ষাৎ

কেন যে নিকটতম রাবণ এই অবসাদের গ্রামাঞ্চলে ভেসে ওঠে। তোমাকে নিঙড়েও তো মাধব নিজঘাট কাউকে জানাতে পারি না। নদীতীরে তলোয়ার উলটো করে রাখি। ঘর চকচক করে ডুবজলে। ক্রীড়াক্রোশে দিব্যচেলি ঝুলছে সিলিং ফ্যানে। শব্দ করতে পারে না। রক্ষে করো অস্ত্রকারখানা। লোকধ্বনি দাও লালচণ্ড অনুষ্ঠানে। 

ষট্‌ত্রিংশ সাক্ষাৎ

আমি কি প্রকৃতই আপনাকে বোঝাতে পারছি কী হয় ভেতরে? কী হয়ে চলেছে? কোন্‌ পৃথিবী নেভানো যায় না কারুর চিকণ একটা কথার অপেক্ষায়? ও ঘরে, সিলিং ফ্যানে, যে সিল্কের শাড়ির ফাঁস ঝুলিয়ে রেখেছি; আর এ ঘরে, এখন যেখানে বসে আছি, দুয়ের মাঝে দূরত্ব অনতিক্রম্য তো নয়। কয়েক মুহূর্তই বা প্রয়োজন হবে। কিন্তু, তার আগে, স্বপ্নে, কেউ বেছে দেবে দুরন্ত ফলি মাছের কাঁটা।    

সপ্তত্রিংশ সাক্ষাৎ

ঘুম হুকুম করো ডাক্তার। ঘুম হুকুম করো। শিস্‌ দিয়ে খোলশ এনে দাও। বাঁশঝাড়ে শব্দ হোক শনন্‌ শনন্‌। ফুট খানেক ফ্রেমের ভেতর এই নুলো ক্রুশ ভ’রে রাখা গেল। এবারে কলসি ফাটিয়ে ঘুম দাও ডাক্তার। ন্যাংটো ঘুম।

অষ্টাত্রিংশ সাক্ষাৎ

মোটা ও মিশ্র মশারির ভেতর, এমন ঘুমগুচ্ছ ইচ্ছা করি। শ্লোকশ্রমে সাজানো গুম্ফা। সুকুমার হ্রদে সঙ্গীত দোলাতে দোলাতে, ঘুমের পায়েস ভাগ ক’রে দেন নবী। শ্বেতপাথরে গমগম করে ঘুমের আয়াৎ। তুলোর দেবতা সৌম্য সবেদা ফুল থেকে খুঁটে নেন অঘুম-শব্দগণ।

নবত্রিংশ সাক্ষাৎ

ঘুমের অনুষ্ঠান চলে দিনভর। সাধুভাষায়। আয়ত্ত্ব গুহা লুঠপাট হয় বাসস্থানে। ছাদে  একটা ম্যাজিশিয়ান বসে আছে। ছেঁড়া গদ্যের দ্রোহ সিলিং ফ্যানের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে যায়। ওঁ চিরপ্রণম্য পাখা। টেবিলটা এখন সিঁড়ি হতে পারে।
 
চত্বারিংশ সাক্ষাৎ

ইত্যাদি বলে কিছু নেই আর, এখনপতঙ্গপার্বণ আছে খাদ্যমুখে।
হাতের কীর্তনফুল তুলতে যাই, হে আমার আঁচিল চিহ্নিত রঙ,
পাখির স্মৃতি নিয়ে বসে থাকি খাটের ওপর।

একচত্বারিংশ সাক্ষাৎ

১২টা নেক্সিটো-টেন আর ৮টা স্টিলনক্ট - সিক্স পয়েন্ট টু ফাইভ একসাথে খেয়ে ফেলেছি ডাক্তার। আর কিছু মনে নেই নখের ভিতর, এই বন্ধের দিনে। নিজগুণে প্রজন্ম হাওয়া দেয়, ছড়িয়ে। নিজগুণে ধর্মযুদ্ধ। আজ অসংখ্য ঘুড়িকে তুলে দেখি গম্ভীর তারকাচিহ্ন। গুহ্যোপভোগ। নূপুর ভাঙে যে পূর্ণ শ্বপক। মনু বলছেন, ‘ক্ষত্তা হইতে উগ্রার গর্ভে ইহাদের উৎপত্তি। ইহারা অবান্ধব শব গ্রাম হইতে বহির্গত করে, রাজাজ্ঞায় বধ্যকে বধ করে ও বধ্যের বস্ত্র শয্যা ভূষণ গ্রহণ করে।সব হাড় ভেঁপু বাজিয়ে রাত্রিগুণে এই রেফারেন্স কবুল করেছে।
কবুল কবুল কবুল।
   
শেষ সাক্ষাৎ
  
শাদায় শুধু প্রায় প্রথম প্রাণ
দৌড়ে ঝকমক পাথুরে প্রেত
হলুদ টানটান টুকরো ভাত
পেরেক হেলে আছে তাতেই স্থির
ভয়ের ভাঁজ করা ভাষার পাপ
সবাই ডোরাকাটা কোটরে চোখ
বাড়ায় কমে বাড়ে আলোর বুক
বিষয়ে দাঁড় টানে বিধেয়বাস
বয়েস একহাতে লোহিতপক্ষে
দুয়েরই মুখ কেটে একটি পথ
আবার তার চেয়ে সতেজ টান
আমাকে দেখে নেয় ডাকিনীপদ



৩টি মন্তব্য:

  1. নিজের ভেতর একটা পৃথিবী দেখিতে পাইলাম । আমার ইন্দ্রিয়ফুল ফুটিল ।শব্দপ্রাণ মুকুলিত হইল । সত্তাখণ্ড বাজনা বাজাইল । কবিতার মর্মরিত উল্লাসে স্তব্ধ হইলাম ।

    উত্তরমুছুন