দেহ মনের
সুদূর পাড়ে
সম্প্রতি
গুজরাট হাইকোর্টের এক রায় মেনেই মহামান্য আদালত বহাল রাখলো আবেদনকারীর পক্ষের সেই রায়। জানিয়ে
দেওয়া হলো, ‘এক রাতের বিবাহ বহির্ভূত যৌনমিলন পরকীয়া নয়’। নিম্ন
আদালতের এমন এক ঐতিহাসিক মন্তব্যকে বহাল করায় বেশ অবাক হবার কথা। অবাক
হবার কারণ এই যে, বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ হিসেবে পরকীয়ার সামনে আসা এই সময়ের এক ধারাবাহিক
ট্রেন্ড। ভুলবশত বা দুর্ঘটনা ক্রমে হলে মাফ এবং
দুই বা একের বেশিবার হলে তা অপরাধ, এইটি চিন্তার দেউলিয়াপনা আর অবাস্তব আবেগের বোঝাকেই
বাড়ায়। আসলে পুরাকাল থেকেই শাস্তির দায় মেয়েদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। পুরুষের বেপরোয়া মনোভাবকে নিন্দিত করা হয়নি, যতটা লজ্জিত করা হয়েছে নারীকে। বিবাহ নামক এক গন্ডীপ্রদেশে দুই প্রাণী। এর বাইরে যদি আরেকজন সঙ্গী মানে মহিলার ক্ষেত্রে পুরুষ আর পুরুষের ক্ষেত্রে মহিলা, তবে সে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভেঙেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। নারী সেই অপরাধ করলে তা আদলত পর্যন্ত যেতে পারে, আর পুরুষ করলে বিচারের বাণী নীরবে নারীর চোখের জলের রূপ নিয়ে গতিপথ হারানো নদীতে গিয়ে বইতে থাকে। লক্ষণ রেখার বাইরে পা রাখাকে বিভিন্ন ধর্মে প্রায় সমান ভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্বস্ততার অভাবকে কোনো জায়গা দেওয়া হয়নি বিবাহ প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে। কিন্তু কী সেই অমোঘ আকর্ষণ, যা শরীর ও মনের ঘেরাটোপ ভেঙে এগিয়ে যায় অনির্দিষ্টের সন্ধানে! পেরিয়ে যায় সব সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় বাধা! চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে দেহের শুচিতা রক্ষার কথা, যা রেহাই দেবে ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে। ধর্ম বলে পরকালের শাস্তি বা পুরস্কারের কথা। সমাজ বলে মুখ পোড়ানোর কথা। মনস্তত্ত্ব বলে অন্য মনের কথা।
চিটিং বা বিশ্বাসঘাতকতার মানসিকতা, দুর্বল চিত্তের মানুষের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তাছাড়া যে অপরাধমূলক কাজ নৈতিকতার মানের প্রেক্ষিতকেই বিবেচনা করে, এর জন্য আলাদা আইনগত শাস্তি নেই, সেখানে মানুষ নমনীয়তা দেখিয়ে থাকে। শাস্তির আইনগত ব্যবস্থা মানুষের সাহসকে বেড়াজালে বাঁধে। প্রতিকূলতার পথ বেশ নির্জন হয়। সহসা মানুষ ‘কোরাপ্ট’ করতে চায় না নিজের বাসভূমিকে। সম্প্রতি দুই আফগান নারী পুরুষ এই আডাল্টারির জন্য খেলো ১০০ চাবুক। ২০১৩ সালে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এই দেশগুলিতে আডাল্ট্রি - সৌদি আরব, কোরিয়া, ফিলিপাইন্স, তাইওয়ান, পাকিস্তান। আমেরিকাতে এক সময় আডাল্টারির শাস্তি ছিল জেল থেকে শুরু করে ১০ ডলার পর্যন্ত ফাইন।আজ তা রূপকথা।
ধর্মে নারী পুরুষের আডাল্টারির শাস্তির মান আবার বৈষম্যমূলকঃ
Laws of Manu are
striking on this point. In ancient India,
"though destitute of virtue or seeking pleasure elsewhere, or
devoid of good qualities, yet a
husband must be constantly worshipped
as a god by a faithful
wife"; on the other, hand, "if a wife, proud of the greatness of her
relatives or [her own] excellence, violates the duty which
she owes to her lord, the king shall cause her to be devoured by dogs in a
place frequented by many" (Laws of Manu, V, 154; VIII, 371).
আবার রোমান ল’ সুযোগ এনে দেয় পুরুষদের। In the early Roman Law the jus tori belonged to the husband. There was,
therefore, no such thing as the crime of adultery
on the part of a husband towards his wife. Moreover, this crime was not
committed unless one of the parties was a marriedwoman (Dig., XLVIII, ad leg. Jul.)
খ্রিষ্টীয় আইন দ্বিপাক্ষিক বিশ্বস্ততার উপর জোর দেয়। In theIn the
Christian law this discrimination against the wife
is emphatically repudiated. In the law of Jesus
Christ regarding marriage the unfaithful husband loses his
ancient immunity (Matthew 19:3-13). The obligation of mutual fidelity, incumbent upon
husband as well as wife, is moreover implied in the notion of the Christian sacrament, in which is symbolized the ineffable and lasting union of the Heavenly Bridegroom and His unspotted Bride, the Church’s. Paul insists with emphasis upon the duty of
equal mutual fidelity in both the marital partners (1 Corinthians 7:4)
যে পরিবারে নারী পুরুষ এই বিশেষ অবস্থার শিকার, তাদের কেমন কাটে দিনরাত? অপর্ণা সেনের ‘পরমা’ বা মহেশ ভাট-এর ‘অর্থ’, দর্শকদের যে গভীর পর্যবেক্ষণের মুখোমুখি এনে দেয়, তার উত্তর আধুনিকতা বা সুশিক্ষিত সমাজ দিতে ব্যর্থ। পরিবার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে; কিন্তু একজন নারীর ক্ষেত্রে তা প্রায় অসম্ভব হলেও পুরুষটির ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ ভাবে ঘরোয়া ব্যাপার। সেখানে অপছন্দের তুলে রাখা শাড়ির মতোই আলমারিতে স্থান পায় বাড়ির লজ্জা। সম্পর্কের ‘মিলাবট’। অবশেষে দাগী আসামী চিহ্নিত হয় অপর নারী। আসল ‘হোমব্রেকার’ ঠাঁই পায় অন্দরমহলে, ‘ছাপ্পা’ বহন করে অন্যজন। সামাজিকবোধ বা কিছু প্রথার নিরিখ এমনিই আপত্তিজনক। এর শেষ হওয়া জরুরি।
‘এক রাতের’ তত্বটি সভ্যতা বা শালীনতা বর্জিত। এবং তা জন্ম দেয় বেশ কিছু অবাঞ্ছিত বিষয়েরঃ
·
হতাশা বা পাপবোধ
·
দাম্পত্যকলহ
·
কর্মক্ষেত্রে মনোনিবেশের সমস্যা
·
গর্ভধারণ ও তার পরিচিতি সংক্রান্ত সমস্যা
পণপ্রথার মতো আদিম প্রথা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টিকে থাকে যেখানে, সেখানে আইনের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির যথেচ্ছাচার বাড়তেই সাহায্য করবে এই রায়। ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত সম্পর্কের মুখে মানুষের নিরাপত্তাহীনতাই অতলস্পর্শী হয়ে উঠবে। এক সম্পর্ক থেকে আরেক সম্পর্কের চাবিকাঠিতে পিষ্ট হবে বিবেকবুদ্ধি। স্থায়িত্বের ভিত্তিরেখাও স্থবির। চির বা ক্ষণ কোনোটিতেই মার্কা নেই। ভালো থাকার বাঁধা ধরা শর্ত নেই। উপভোগ্যতার একটি নিরিখ আছে মাত্র। আদালতকক্ষ বার ডান্সারদের ক্ষেত্রে রায় দেন তাদের অধিকারজাত বিষয় ও সামাজিক অবক্ষয়ের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে, কিন্তু এক্ষেত্রে দায়সারা ভাবটি বেশ লক্ষ্যনীয়ভাবে অসন্তোষজনক। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদের শর্ত হিসেবে গণ্য করা হবে না, তা ইউরোপীয় কিছু দেশের মতো এমন স্পষ্টতর করে তুলতে না পারলে, একবার দু’বারের মাত্রা বেঁধে সম্পর্ককে লজ্জাকর করে তোলা কাম্য নয়। ঘোষণা করা হোক
- আডাল্ট্রির শাস্তি নয়, বরং বাতিল করা হোক মুখ রক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকতা। পরম্পরাগত ঐতিহ্যের বিবর্তিত রূপ উজ্জ্বলতম রূপ পরিগ্রহ করুক। সম্পর্কবদ্ধ
জীবের জীবনে থাকুক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। কৃত্রিমতা
বা গোপনীয়তার বদলে সততার মুক্তিস্নান ধুয়ে দিক শরীর-মনের
গহন। তুমি
আছ কি নেই, তা ঘোষিত হোক দীপ্তকন্ঠে। বিচ্ছেদ
হোক গৌরবের। সম্পর্কের
উত্তরণ ঘটুক পিছুটানের সব দুর্বোধ্যতার সরলীকরণের মধ্যে দিয়ে। ইতিহাসের
ভাষাতেই বলি, “It seems most unfair for a man to require from a wife the chastity he does not himself practice.”
'দেহ মনের সুদূর পাড়ে'
উত্তরমুছুনজিনাত ইসলাম
http://kalimationline.blogspot.in/.../blog-post_32.html...
থেকে
আমি (গোলাম সারোয়ার) 'সামাজিক জীব হিসাবে' smile emoticon মূলবার্তা যে ভাবে বুঝেছি..........
(লেখিকার মূল লেখা থেকে বাক্য গুলো সরলীকৃত উদ্ধৃতি হিসাবে তুলে)
ঘটনাঃ
"সম্প্রতি গুজরাট হাইকোর্টের এক রায় মেনেই মহামান্য আদালত বহাল রাখলো আবেদনকারীর পক্ষের সেই রায়। জানিয়ে দেওয়া হলো, ‘এক রাতের বিবাহ বহির্ভূত যৌনমিলন পরকীয়া নয়’।"
এ রায়ের রূপ ও সম্ভাব্য ফলের বিশ্লেষণঃ
প্রথমত, "ভুলবশত বা দুর্ঘটনা ক্রমে হলে মাফ এবং দুই বা একের বেশিবার হলে তা অপরাধ, এইটি চিন্তার দেউলিয়াপনা আর অবাস্তব আবেগের বোঝাকেই বাড়ায়। আসলে পুরাকাল থেকেই শাস্তির দায় মেয়েদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। পুরুষের বেপরোয়া মনোভাবকে নিন্দিত করা হয়নি, যতটা লজ্জিত করা হয়েছে নারীকে।"
দ্বিতীয়ত," ‘এক রাতের’ তত্বটি সভ্যতা বা শালীনতা বর্জিত। এবং তা জন্ম দেয় বেশ কিছু অবাঞ্ছিত বিষয়েরঃ
· genitor-urinary রোগজনিত সমস্যা
· হতাশা বা পাপবোধ
· দাম্পত্যকলহ
· কর্মক্ষেত্রে মনোনিবেশের সমস্যা
· গর্ভধারণ ও তার পরিচিতি সংক্রান্ত সমস্যা।"
তৃতীয়ত,"বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদের শর্ত হিসেবে গণ্য করা হবে না, তা ইউরোপীয় কিছু দেশের মতো এমন স্পষ্টতর করে তুলতে না পেরে, একবার দু’বারের মাত্রা বেঁধে সম্পর্ককে লজ্জাকর করে তোলাও কাম্য নয়।"তবে ইউরোপীয় ঐ দেশ গুলোর মত করলে "ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত সম্পর্কের মুখে মানুষের নিরাপত্তাহীনতাই অতলস্পর্শী হয়ে উঠবে। এক সম্পর্ক থেকে আরেক সম্পর্কের চাবিকাঠিতে পিষ্ট হবে বিবেকবুদ্ধি।" তার ভুক্তভোগী হবে নারীই। কারন সে ক্ষেত্রে " পরিবার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে; কিন্তু একজন নারীর ক্ষেত্রে তা প্রায় অসম্ভব হলেও পুরুষটির ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ ভাবে ঘরোয়া ব্যাপার।"... "অবশেষে দাগী আসামী চিহ্নিত হয় অপর নারী।"
চতুর্থত,"পণপ্রথার মতো আদিম প্রথা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টিকে থাকে যেখানে, সেখানে আইনের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির যথেচ্ছাচার বাড়তেই সাহায্য করবে এই রায়। ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত সম্পর্কের মুখে মানুষের নিরাপত্তাহীনতাই অতলস্পর্শী হয়ে উঠবে।"এই ক্ষেত্রটিতে নারী ও পুরুষ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সব দিক দিয়ে এ রায়ের মূল শিকার হবে নারী।
নিরীক্ষণঃ
"চিটিং বা বিশ্বাসঘাতকতার মানসিকতা, দুর্বল চিত্তের মানুষের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তাছাড়া যে অপরাধমূলক কাজ নৈতিকতার মানের প্রেক্ষিতকেই বিবেচনা করে, এর জন্য আলাদা আইনগত শাস্তি নেই, সেখানে মানুষ নমনীয়তা দেখিয়ে থাকে। শাস্তির আইনগত ব্যবস্থা মানুষের সাহসকে বেড়াজালে বাঁধে।"
প্রস্তাবিত ও কাম্য সম্ভাব্য সমাধানঃ
"ঘোষণা করা হোক - আডাল্ট্রির শাস্তি বাতিল নয়, বরং বাতিল মুখ রক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকতা।পরম্পরাগত ঐতিহ্যের বিবর্তিত রূপ উজ্জ্বলতম রূপ পরিগ্রহ করুক। সম্পর্কবদ্ধ জীবের জীবনে থাকুক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। কৃত্রিমতা বা গোপনীয়তার বদলে সততার মুক্তিস্নান ধুয়ে দিক শরীর-মনের গহন। তুমি আছ কি নেই, তা ঘোষিত হোক দীপ্তকন্ঠে। বিচ্ছেদ হোক গৌরবের। সম্পর্কের উত্তরণ ঘটুক পিছুটানের সব দুর্বোধ্যতার সরলীকরণের মধ্যে দিয়ে।" ----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------যতটা ভূল বুঝলাম কেউ ততটা ঠিক বুঝিয়ে দেবে বা বুঝতে সাহায্য করবে বলে আশায় থাকলাম।
কনটেম্পোরারি
উত্তরমুছুনদারুন। ভালোলাগলো।
উত্তরমুছুন